করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছেই। বাড়ছে মৃত্যুও। ক্রমবর্ধমান এ হার জনমনে শঙ্কা বাড়াচ্ছে। শীতের পোশাক পরে বাইরে থেকে মানুষ ঘরে ফিরছে, আবার ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকছে। এতে একই পরিবারের অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন এখন। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে বাড়বে না। তবে আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে। মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এড়ানোসহ সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩৩তম অবস্থানে। গত এক দিনে করোনায় আরো ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, সংক্রমিত হয়েছে ২ হাজার ১৫৬ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৬ হাজার ৪৮৭ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৫৪ হাজার ১৪৬ জন হল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আরো ২ হাজার ৩০২ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ১৭৯ জন হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮১ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে মৃত্যুর সঠিক তথ্য উঠে আসছে না। কারণ গ্রামের অনেক মানুষ জ্বর ও শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তাদের তথ্য উঠে আসছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ করোনার কথা শুনে কেউ আসবে না—এমন ভয়ে তথ্য গোপন রাখে। জ্বর ও শ্বাসকষ্টে বাড়িতেই মারা যায়। এদিকে শহরের মানুষ মাস্ক পরলেও গ্রামের মানুষরা মাস্ক পরছেন না।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা রোগীদের চিকিত্সার জন্য আইসিইউসহ সব ধরনের বেড প্রস্তুত রাখা উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আইসিইউ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ অধিকাংশ জেলায় আইসিইউ নেই। করোনা যখন বেড়ে যাবে তখন সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকায় আসবে। তখন আইসিইউয়ের অভাবে অনেক রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তিনি বলেন, করোনা কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে। তবে হঠাত্ করে বেড়ে যেতে পারে। তাই সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজে ও পরিবারকে সুরক্ষা রাখা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ভ্যাকসিন কবে আসবে-সেটার জন্য বসে না থেকে সবারই মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে কঠোর মনিটরিং করতে হবে। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস শীতে বাড়তে পারে। এখন একদিন বাড়ছে তো আরেক দিন কমছে। হঠাত্ করে বেড়ে যেতে পারে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, শীত চলে আসায় এখন করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, আরো বাড়বে। তিনি বলেন, শীতের পোশাক পরে মানুষ বাইরে থেকে ঘরে যাচ্ছে, আবার শীতের কারণে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখা হচ্ছে। এ কারণে পরিবারকেন্দ্রিক আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন পেতে দেরি হবে। ভ্যাকসিন আসলেও সবাইকে দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, শহরের মানুষ মাস্ক পরলেও গ্রামের মানুষ পরছে না। এছাড়া গ্রামে মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে আড্ডা চলছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এই বাড়ে তো এই কমে। তবে যতটা আশংকা করা হয়েছিল, শীতে ততটা বাড়বে না। তবে ৫০-এর বেশি বয়সি মানুষের পাশাপাশি যাদের কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের করোনার পজিটিভ রিপোর্ট আসলে হাসপাতাল থেকে চিকিত্সা নিতে হবে।
এতে তারা নিরাপদ থাকবেন। ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ৩ কোটি ভ্যাকসিন অক্সফোর্ডের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। আর গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনসের (গ্যাভি) মাধ্যমে দেশের ২০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে। এটার দাম কম হবে। গ্রামের চায়ের দোকানে আড্ডা বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। ঘরের বাইরে বের হলেই মাস্ক পরতে হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-