উখিয়ায় অর্ধশতাধিক পাহাড় গিলে খাচ্ছে মাটিখেকো সিন্ডিকেট, থামাবে কে?

ফারুক আহমদ, উখিয়া •

উখিয়ার সর্বত্র অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে চলছে সরকারি পাহাড় কর্তনের মহোৎসব। দুই শতাধিক রুট পারমিট বিহীন ডাম্পার ভর্তি করে মাটি ব্যবসা করছে ৩০ টি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। পরিবেশবাদী সংগঠনের অভিমত পাহাড় সংরক্ষণ ও মাটি কর্তন থামাবে কে?
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির জানান পাহাড় কর্তন বন্ধে সকল রেঞ্জ কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও স্পেশাল টহল দল অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে পাহাড় কর্তন বন্ধে বনবিভাগের পাশাপাশি স্থানীয় নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসা উচিত।

স্থানীয় সুশীল সমাজের দাবি, রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিট কর্মকর্তাদের ওপেন মাটি বাণিজ্যের কারণে আজ একের পর এক পাহাড় কর্তন করে মাটি গিলে খাচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা। বন বিভাগ সম্পূর্ণ রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে। এমনকি রাতের বেলায় শতশত ডাম্পার ভর্তি করে মাটি পাচার দেখলে মনে হয় সরকারি পাহাড় গুলো পাচারকারীদের নিকট লিজ দেওয়া হয়েছে।

সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ইনানী রেঞ্জের জালিয়াপালং বনবিটের আওতায় ইতিমধ্য ৩০ টির অধিক পাহাড় কর্তন করে বিরান ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে ।

অভিযোগে প্রকাশ বিট অফিসার আরজু মিয়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে মাটি খেকো সিন্ডিকেট জুম্মা পাড়া, সোনাই ছড়ি ও সোনার পাড়ার পাহাড় গুলো অঘোষিত ভাবে লীজ নিয়ে গেছেন। বিনিময়ে পাচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুম্মাপাড়া গ্রামের কালাচান্দর গুনা এলাকায় ২০১২ সালের সামাজিক বনায়ন সাবাড় করে একের পর এক পাহাড় কর্তন করে চলছে। সন্ধ্যা শুরু হলেই পাহাড় গুলোতে চলে ধ্বংসস্তূপের খেলা। অসংখ্য ডাম্পার যোগে কোট বাজার ও তার আশে পাশের বিশাল বিশাল জায়গা ভরাট করছে। ফরেষ্টার ও পুলিশ পাহারা দেয়।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, পাহাড় কর্তন করতে গিয়ে ওই এলাকার জাফর আলমের পুত্র বদিউল আলম নিহত হন। শুধু তাই নয় ইনানীর পাটুয়ারটেক এলাকায় গত ১১ নভেম্বর মাটিবর্তী ডাম্পার জব্দ করলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালায় সন্ত্রাসী বাহিনী।

সচেতন নাগরিক সমাজের অভিমত ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তার অদক্ষতা ও জালিয়া পালং বিট কর্মকর্তা আরজু মিয়ার ব্যাপক মাটি বাণিজ্যের কারণে পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না।

অপরদিকে সম্প্রতি উখিয়া রেঞ্জের মাছ কারিয়া, মধুর ছড়া ও হরিণমারা এলাকায় পাহাড় কর্তন রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ পুলিশ বাহিনী পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগের স্পেশাল টহল দল থাকতে প্রকাশ্যে পাহাড় কর্তন করে ডাম্পার যোগে মাটি পাচার করছে তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না নাগরিক সমাজ।

কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় কিভাবে দুইশত ডাম্পার চলাচল করে। যার একটির বৈধ রোড পারমিট নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসাইন আবু ও জাহাঙ্গীর আলম খোন্দকার বলেন, উখিয়া রেঞ্জ এবং ইনানী রেঞ্জের ৯টি বন বিটে ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক পাহাড় মাটি কর্তন করে মরুভূমিতে পরিণত করছে। এতে করে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সহকারী কমিশনার ভূমি আমিমুল এহসান খানের নেতৃত্বে মাঝেমধ্যে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে মাটি ভর্তি ডাম্পার আটকসহ জেল জরিমানা আদায় করেন।

ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন রাতের বেলা পাহাড় কর্তনের ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযান পরিচালনায় করতে গেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেতৃত্বে পুলিশ ও বন বিভাগের সমন্বয় করতে হয়। এরপরও বন বিভাগ সাধ্যমত অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম বলেন, উখিয়ায় ব্যাপক হারে পাহাড় কর্তন বিষয়টি আমরা সরজমিনে সত্যতা পেয়েছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে ৬টি মামলার সুপারিশ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় প্রেরন করা হয়েছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার ও নাগরিক সমাজের একটাই দাবি পাহাড় কর্তন ও মাটি পাচার থামাবে কে?

আরও খবর