শফিউল্লাহ শফি •
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় চলছে ইয়াবা ব্যবসা, মানব পাচার ও অস্ত্র মজুদের প্রতিযোগিতা।
অস্ত্রসহ একাধিক ব্যক্তি আটক হলেও কমছে না এসব কর্মকাণ্ড। অভিযোগ উঠেছে-ক্যাম্পের ‘মাস্টার’ ও ‘মাঝিরা’ বঙ্গোপসাগর দিয়ে চোরাই পথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার ও ইয়াবার ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। সেই সঙ্গে ক্যাম্পে আধিপত্য বজায় রাখতে গড়ে তুলছে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ।
সূত্রমতে, অস্ত্র-ইয়াবা ও টাকাসহ গ্রেফতার বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা রয়েছে পুলিশ হেফাজতে। ইয়াবার বিনিময়ে ক্যাম্পে অস্ত্র নিতে গিয়ে যেমন তারা গ্রেফতার হয়েছে, তেমনই ইয়াবা বিক্রির কোটি টাকাসহ গ্রেফতার হয়েছে রোহিঙ্গা দম্পতি। আর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসছে ক্যাম্পভিত্তিক রোহিঙ্গা নেতাদের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সূত্র জানায়, অস্ত্র এবং ইয়াবা পরিবহনে রাজি না হলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। এ অবস্থায় ৬ শতাধিক হেড মাঝি এবং ১২ শতাধিক সহকারী মাঝিকে নজরদারির মধ্যে আনার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ লক্ষ্যে তাদের তালিকা সংগ্রহ করেছে পুলিশ প্রশাসন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে রোহিঙ্গা নেতারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই অস্ত্রের সন্ধানে তারা এখন বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকামুখী হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবার বিনিময়ে চলছে অস্ত্র লেনদেন। মাস্টার ও মাঝিরা ইয়াবা বিক্রি করে বিত্তবান হচ্ছে। নিজেদের প্রভাব আরও বাড়ানোর জন্য তারা অস্ত্র সংগ্রহ করছে। রিমান্ডে থাকা সাধারণ রোহিঙ্গারা দাবি করেছে, ক্যাম্পগুলোয় এখন চলছে মাস্টার, মাঝি এবং সহকারী মাঝিদের ত্রাসের রাজত্ব। অস্ত্র ও ইয়াবা পরিবহনে রাজি না হলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের অপহরণ করা হচ্ছে। হত্যার পর লাশও গুম করছে প্রভাবশালী রোহিঙ্গা নেতারা। শুধু টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের ৭ জন মাস্টার ও মাঝির নাম পেয়েছে পুলিশ। এরা সরাসরি অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মূলত ক্যাম্পগুলোয় প্রশাসনিক দায়িত্বের সুবিধার্থে রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকেই এসব মাঝি, সহকারী মাঝিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছে মাস্টার। অপেক্ষাকৃত লেখাপড়া জানা রোহিঙ্গারাই এ পদে নিয়োগ পান। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে পুলিশ ও র্যাবের পৃথক অভিযানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্তত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা কী পরিমাণ অপরাধ করছে, তা ভাষায় বলা যাবে না। কারণ তারা বহুমাত্রিক অপরাধী। তারা যেমন ইয়াবা ব্যবসা করছে, তেমনই মানব পাচারও করছে। পাশাপাশি বর্তমানে অস্ত্র মজুদের মহোৎসব চালাচ্ছে।
এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ইয়াবা ব্যবসা ও অপরাধ দমনে গডফাদারদের নজরধারিতে আনা হচ্ছে। বলা যায়, অপরাধ করে কোনো অপরাধী রেহাই পাবে না।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-