কক্সবাজার সীমান্তে ইয়াবা পাচারে চোরাকারবারিদের সহযোগিতা করছে মিয়ানমার বিজিপি

ডেস্ক রিপোর্ট • মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ইয়াবাপাচারে চোরাকারবারিদের সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে। যখনই সীমান্তে একের পর এক ইয়াবার চালান ধরা পড়ে, তখন খেপে যায় মিয়ানমার সীমান্ত বাহিনী।

তারা ফন্দি আঁটে কী করে বাংলাদেশকে বিব্রত করা যায়। কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনী (বিজিবি) বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান জব্দ করেছে।

সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করেছে বিজিবি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা ইয়াবা পাচার রোধে রাখছে বিশেষ ভূমিকা। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের ৯ জন জেলেকে সমুদ্র থেকে তুলে নিয়ে গেছে বিজিপি।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ইয়াবার চালান জব্দ করায় জেলেদের তুলে নিয়ে যায় বিজিপি। আর রেহিঙ্গা নিয়ে সমস্যায় দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েনের কারণেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তাঁরা। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো থাকায় যেকোনো সমস্যা সমধান করা যায়।

দুই দিন আগে সীমান্ত এলাকায় টহল দিতে গিয়ে ভুলে ভারতীয় সীমানায় চলে গেলে দুই বিজিবি সদস্যকে নিয়ে যায় বিএসএফ। সঙ্গে সঙ্গে বিজিবি ও বিএসএফ কর্মকর্তারা পতাকা বৈঠক করে বিষয়টি সুরাহা করে দুই বিজিবি সদস্যকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনেন।

অথচ এ ধরনের ঘটনা মিয়ানমারের সঙ্গে ঘটলে তা সমাধান করা অনেক কঠিন হয়ে ওঠে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯ জেলেকে নিয়ে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত তাঁদের ফিরিয়ে আনতে বেশি দূর এগোতে পারেনি বিজিবি।

এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলেন, ‘৯ জেলেকে ফিরিয়ে আনতে আমরা বিজিপির সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তবে এখন পর্যন্ত (বুধবার সন্ধ্যা) ওই পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনীর সহযোগিতায় বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হয়। যখনই সীমান্তে ইয়াবার চালান জব্দ শুরু হয়, তখনই মিয়ানমার বাহিনী বাংলাদেশের লোকজনকে সীমান্ত থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে যে টানাপড়েন চলছে, তার কারণেও এটি হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমার বাহিনী বাংলাদেশকে চাপে ফেলার কৌশল হিসেবে এটা করে বলে আমি মনে করি। এর থেকে উত্তরণে কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে। না হলে এ ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে চোরাকারবারিরা বিজিপির সহায়তায় সহজে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার করছে। ইয়াবাপাচারের টাকার একটা অংশ পায় বিজিপি। কয়েক দিন ধরে ইয়াবা রোধে কক্সবাজার এলাকায় বিজিবি ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করছে। সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোসহ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে। বড় বড় ইয়াবার চালান ধরা পড়ায় মিয়ানমার সীমান্ত বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। এ কারণে তারা সীমান্তে সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

মানবাধিকারকর্মীরা জানান, জলসীমায় ভুল করে সীমান্ত পার হওয়াটা বড় কোনো অন্যায় নয়। সদিচ্ছা থাকলে বিজিপিই বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই জেলেদের ফেরত দিতে পারত। কিন্তু তারা উদারতা দেখায়নি, দুই দিন চলে গেলেও জেলেদের ফেরত দেয়নি।

গত মঙ্গলবার সকালে সেন্ট মার্টিন থেকে দুই কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ভুল করে বাংলাদেশের জেলেদের একটি মাছ ধরার ট্রলার মিয়ানমার সীমান্তে চলে যায়। সেখানে ট্রলারটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ফিরে আসতে পারছিলেন না।

এই অবস্থায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী টেকনাফের সাবরাং এলাকার জেলে নুরুল আলম, ইসমাইল হোসেন, ইলিয়াছ, ইউনুছ আলী, মোহাম্মদ কালা, সাইফুল ইসলাম, সলিমুল্লা, কামাল মিয়া ও লালু মিয়াকে ধরে নিয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজিবির আহ্বানে সাড়া দেয়নি বিজিপি।

আরও খবর