মানসম্পন্ন শুঁটকি তৈরিতে কক্সবাজারে কারখানা হচ্ছে

ডেস্ক রিপোর্ট •

শুঁটকির স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে কক্সবাজার শহর সংলগ্ন খুরুশকুলে একটি কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য ‘কক্সবাজার জেলায় শুটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে। ১৯৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন।

প্রকল্পটির চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ।

তিনি বলেন, “শুঁটকি দেশের একটি জনপ্রিয় খাবার হলেও এখনো মানসম্পন্ন উপায়ে মাছ শুকানোর আধুনিক কোনো ব্যবস্থা দেশে নেই। প্রথাগতভাবে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। অথচ বৃষ্টির দিনে অনেক মাছ শুকাতে না পেরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।” মানসম্পন্ন উপায়ে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে বিদেশেও রপ্তানি বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি।

জাকির বলেন, দেশে মাছ আহরণ করার পর অপচয় হ্রাস, আধুনিক পদ্ধতিতে মানসম্পন্ন শুঁটকি মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং কক্সবাজারের খুরুশকুল এলাকায় সাড়ে চার হাজার জেলে পরিবারের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য তৈরি প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আধুনিক পদ্ধতিতে বছরে প্রায় ১৪ হাজার টন মানসম্পন্ন শুঁটকিমাছ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার জন্য কক্সবাজারের খুরুশকুলে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শুঁটকি প্রক্রিয়া কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে খুরুশকুলে ২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার আয়তনের অবতরণ শেড নির্মাণ করা হবে। এক হাজার ৮৬০ বর্গমিটার আয়তনের ৪ তলা বিশিষ্ট ল্যাব, অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ডরমেটরি নির্মাণ করা হবে। দুটি ওয়ে ব্রিজ এবং তিনটি পন্টুন গ্যাংওয়ে তৈরি করা হবে।

এছাড়াও ৩৫০টি গ্রিন হাউজ মেকানিক্যাল ড্রায়ার এবং ৩০টি মেকানিক্যাল ড্রায়ারের পাশাপাশি প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি ও ৩৬টি শুঁটকি বিক্রয় কেন্দ্রও স্থাপন করা হবে। মঙ্গলবার একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কাজ শুরু করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, মুক্ত জলাশয়ে মাছ শিকারে বাংলাদেশে বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে। মুক্ত জলাশয়ে উৎপাদিত মাছের মধ্যে ৭০ ভাগ তাজা মাছ হিসাবে, ২৫ ভাগ শুঁটকি হিসাবে এবং ৫ ভাগ মাছ স্থানীয় প্রক্রিয়াজাত মাছ হিসাবে বিপণন করা হয়। এতে আরও বলা হয়, উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় ৮-১০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ বাণিজ্যিকভাবে শুঁটকি হিসাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ হাজার ২২৯ টন শুঁটকি রপ্তানি করা হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেই রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৮১ টনে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা।

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে এর সম্প্রসারণের ফলে ওই এলাকার প্রায় চার হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হতে পারে। এসব পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের আওতায় খুরুশকুলে নির্মাণাধীন ১৩৯টি বহুতল ভবনে পুনর্বাসন করা হবে।

আরও খবর