সংবাদদাতা •
কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার তিন দিনেও মামলা রেকর্ড করে নি পুলিশ। বরং স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে হামলাকারিরা। ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানামুখি তদবির করছে একটি চক্র। প্রকাশ্যে একটি হামলার ঘটনা এখনো ‘তদন্তে’ সীমাবদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) সেলিম উদ্দিন বলেন, ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। একজন অফিসার তদন্ত করছেন। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আহত সাংবাদিক আমান উল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে তিনজন সংবাদকর্মীকে মেরে রক্তাক্ত করলো; আর পুলিশ তিনদিনেও মামলা রেকর্ড করলো না, তা খুবই দুঃখজনক বিষয়। এতে অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশের আঁতাতের ইঙ্গিত বহন করে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভিকটিম সাংবাদিকেরা।
সুত্র জানায়, গত শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলীস্থ উদ্বাস্তু বসতিতে স্ভশস্ত্র হামলা চালায় স্থানীয় একটি দখলবাজচক্র। খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহে ছুটে যান টেলিভিশন ও পত্রিকার ৫/৬ জন সাংবাদিক।
এ সময় স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন দৈনিক গণসংযোগ পত্রিকার সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আমান উল্লাহ, বিজয় টিভির কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি এম শাহ আলম, দৈনিক গণসংযোগ পত্রিকার সাংবাদিক মো: আয়াজ। ঘটনার পর থেকে আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এঘটনায় পরের দিন (৩১ অক্টোবর) কক্সবাজার সদর মডেল থানায় পৃথক দুটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার তিন দিন পার হলেও মামলা রেকর্ড হয় নি থানায়। অভিযুক্ত কাউকে আটক না করায় সাংবাদিক ও সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত প্রায় তিন মাস ধরে কক্সবাজারের কলাতলী বাইপাস রোডস্থ উদ্বাস্তু পল্লীর বসত-ভিটা দখলে নিতে চিহ্নিত ভুমিদস্যু ও মাদক কারবারী মনির উদ্দিন আরিফের নেতৃত্বে একদল স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়াসহ একাধিকবার হামলার চেষ্টা চালায়। এই ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একাধিক ডায়রী, এজাহার ও অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগী উদ্বাস্তু পরিবার। শুধু তাই নয় কক্সবাজারের চিহ্নিত কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপকে ভাড়া করে উদ্বাস্তু পল্লির বসত-ভিটাগুলো কেড়ে নেয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ অক্টোবর রাত আনুমানিক রাত পৌনে ১২টার দিকে কলাতলীস্থ উদ্বাস্তু বসতি দখলে নিতে চিহ্নিত ভুমিদস্যুরা স্বশস্ত্র হামলা ও গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহে ছুটে যায় টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এসময় ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে অতর্কিত হামলা চালায় স্বশস্ত্র হামলাকারীরা।
কলাতলীর বাইপাস রোডস্থ উদ্বাস্তু পল্লীতে যাওয়ার প্রবেশ মুখে পৌঁছতেই চিহ্নিত সন্ত্রাসী পেকুয়ার মনির উদ্দিন আরিফ, আব্দুল কাদের, কলাতলীর ঝরঝরি কুয়া’র সাইফুল, বাংলাবাজার এলাকার জাহেদ এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা জাফর আলম, হোছন আহম্মদ ও চট্টগ্রামের ভুমিদস্যু হারুনুর রশীদসহ ১৫/২০ জনের একদল স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। স্থানীয়রা এগিয়ে গেেল সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। এই খবর পেয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার দায়িত্বরত অফিসার দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত সাংবাদিকদের মুমুর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মগনামা এলাকার বাসিন্দা ও কলাতলী সী-সাইন হোটেলের ভাড়াটিয়া মালিক আরিফ, কাদের, জাহেদ, সাইফুল ও চট্টগ্রামের ভুমিদস্যু হারুনের নেতৃত্ব এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বসবাসরত স্থানীয়রা জানিয়েছে, বিগত প্রায় দুই যুগ ধরে উক্ত জমিতে বসবাস করে আসছেন জেলার বিভিন্ন স্থানের জলবায়ু উদ্বাস্তু অর্ধশতাধিক পরিবার। বিগত কয়েক বছর আগে উক্ত জমির লিজ চেয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেন এসব পরিবার। আবেদনটি দীঘদিন ফাইল বন্দী থাকায় উচ্চ আদালতে রীট করেন তারা । যার রীট পিটিশন নং-১০৩৫৪/১৮। রীট মামলাটির শুনানীকালে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) আবেদনকৃত ২০ পরিবারকে ৫শতক করে মোট এক একর জমি লীজ বন্দোবস্তি দিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে দেয়ার নির্দেশ দেয়। আদেশটি বাস্তবায়ন করতে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি)কে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু ততকালীন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) নানা অজুহাতে সময় ক্ষেপন করতে থাকলে এবং একই সময় কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থাানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হওয়ায় বসত ভিটা রক্ষায় পুনরায় মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে কনটেম্পট পিটিশন দায়ের করেন ভুক্তভোগী পরিবার। কনটেম্পট পিটিশন নং-৬৫/২০। এই পিটিশনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ২০ পরিবারকে কোন প্রকার উচ্ছেদ না করার জন্য এবং বন্দোবস্তি প্রদান পূর্বক উচ্চ আদালতে ফিরতি রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি), তহশীলদার (সদর)সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে। যার কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে।
জানা যায়, একাধিকবার এসব পরিবারকে উচ্ছেদের চেষ্টা করায় কক্সবাজার মডেল থানা ও কক্সবাজার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতেও মামলা বিচারাধীন আছে। গত ৬ অক্টোবর একটি অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কারন দর্শানোর আদেশও জারি করে আদালত। কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহল বসতবাড়িগুলো দখলে নিতে টাকার জোরে একেরপর এক সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা, প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়া ও হুমকী-ধমকী প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। যার ধারাবাহিকতায় এই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-