বিশেষ প্রতিবেদক •
পর্যটকের অসাধারণ চাপে এখন বিলুপ্তপ্রায় লাল কাঁকড়া। পর্যটন স্পট সাগর কন্যা ইনানী সৈকতে সৌন্দযর্যরে অন্যতম আধার লাল কাঁকড়া। এসব লাল কাঁকড়ার ঝাঁক দেখলে মনে হতো সৈকতে আনন্দ ভ্রমণে আসা অতিথিদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশি বিদেশী পর্যটকের অসাধারণ চাপের মুখে, অযত্নে অবহেলায় ও সংরক্ষনের অভাবে এসব লাল কাঁকড়া প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু প্রকৃতির অপার করুনা লাল কাঁকড়াদের আবার মানুষের সান্নিধ্যে নিয়ে এসেছে। হঠাৎ করে লাল কাকঁড়ার বিচরণ দেখে অনেকেই বলছে প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়ম পাল্টানোর সুযোগে লাল কাঁকড়া বালু চরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছে লোকালয়ে। অপার সৌন্দযের্যর এ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করা না হলে আবারো হারিয়ে যেতে পারে লাল কঁাকড়া এমনটি মনে করছেন পরিবেশবাদী সচেতন মহল।
উখিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি রফিক উদ্দিন বাবুল তার ব্যক্তিগত মতামত ব্যাখা করতে গিয়ে বলেন, সাগর পাড়ে বসবাসরত ও সাগরের আধিপাত্য বিস্তারকারী এক শ্রেণির বুজোর্য়া ও কিছু অর্থলোভী ব্যবসায়ী ভুল তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সৈকতে বাণিজ্যিকি করণের মাধ্যমে বিচ বাইকের বেপরোয়া চলাচল করার জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়েছে।
তারা উক্ত অনুমতির ভিত্তিতে বিপুল সংখ্যক বিচ বাইক এনে সাগর পাড়ে বেপরোয়া চলাচল করছে। পাশাপাশি এসব বিচ বাইকের শব্দ দূষণ ও পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য লাল কাঁকড়া। একই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন প্রজাতির কাছিম ও জীববৈচিত্র্য। সাগর পাড়ে সৃজিত ঝাউগাছের অসংখ্য পাখির কোলাহল থেমে গেছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত ইনানীর কানা রাজার গুহা, পাটুয়ার টেক পাথুরে বীচ, মোহাম্মদ শফির বিলে নব নির্মিত ওয়াটার পার্কসহ পাহাড়, জলরাশি পর্যটকদের আকর্ষিত করছে। যেকারণে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও পর্যটকদের অবকাশ যাপন, খাওয়া দাওয়া, চেঞ্জিংরুম প্রভৃতি উপকরণের ব্যাপক অভাব রয়েছে।
পর্যটকদের অভিযোগ ইনানী বীচে নিরাপত্তা জনিত কারণে সন্ধ্যার আগে ভাগে পর্যটকদের কক্সবাজার ফিরতে হয়। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইনানী সৈকতকে পর্যটকমুখী করে তোলার লক্ষ্যে সরকার জীববৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দিয়ে সৈকতের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করলে পর্যটক খাতে সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিলেট থেকে বেড়াতে আসা আইরিন নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্রী জানান, তিনি লকডাউনের পূর্বে এসেছিলেন। তখন কিন্তু সৈকতে জীববৈচিত্র্যের কোন অস্থিত্ব খুঁেজ পাওয়া যায়নি। লকডাউন শেষ হওয়ার পরে ইনানী ঘুরতে এসে দেখা গেছে, লাল কঁকড়ার ছড়াছড়ি। মনে হচ্ছিল যেন ইনানী সৈকতে ফুটেছে প্রকৃতির লাল ফুল। এসব লাল কাঁকড়া পর্যটকদের আর্কষণ করে পর্যটক সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। যদি সৈকতে দায়িত্বরত ম্যানেজম্যান্ট কমিটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উৎসাহিত হয়। ওই পর্যটক বলেন, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২২ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ি, সেনাবাহিনী ক্যাম্প, ইনানী পয়েন্ট, মোঃ শফিরবিল, মাদারবনিয়া, মনখালী, শাপলাপুর, জাহাজপুরাসহ বেশ কিছু এলাকায় এখনও পর্যন্ত কিছু লাল কাঁকড়ার বিচরণ রয়েছে। তবে তা সংখ্যায় অতি নগণ্য।
স্থানীয়রা জানান, সমুদ্র সৈকতে লাল কাঁকড়া রক্ষা করতে বিচ বাইক ও ঘোড়াসহ সব ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ যান চলাচল বন্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি এসব প্রাণী যেমন লাল কাঁকড়া, কাছিমদের বিচরণের জন্য চারণভূমি চিহ্নিত করে তাদেরকে চলাচলের সুযোগ দিতে হবে। যেখানে তারা নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরার পাশাপাশি বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পাবে।
এ ব্যাপারে দ্রুত সরকার ও পরিবেশবাদীদের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানান তারা। তা না হলে অব্যবস্থাপনার কারণে খুব শীঘ্রই হারিয়ে যাবে সমুদ্র সৈকতের এক সময়ের নজরকাড়া লাল কাঁকড়া ও অন্যান্য সৌন্দযর্যবর্ধক পরিবেশের উপকারী প্রাণীসমূহ।
তাদের রক্ষা ও অতীতের ন্যায় সর্বত্র বিচরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ পরিবেশ প্রেমীদের পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে জনসাধারণ ও যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল বন্ধ ও প্রাণীদের চারণভূমি সংরক্ষণের নিমিত্তে সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালুর দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তাহলেই হয়তো বা রক্ষা পেতে পারে লাল কাঁকড়াসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রজাতির প্রাণী। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ইনানী সৈকতের উন্নয়নে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-