সমকাল •
মাদক উদ্ধার সন্তোষজনক পর্যায়ে না থাকলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) শোকজ করবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মাদকের বিরুদ্ধে ঘরে-বাইরে নতুনভাবে যুদ্ধ করতে চায় পুলিশ। পুলিশের ভেতরে যারা মাদক সেবন ও বিক্রিতে জড়িত তাদের শনাক্ত করার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় নতুন কৌশলে ড্রাগবিরোধী অভিযান শুরু করতে চায় পুলিশ। তার আগে পুলিশ নিজেরাও শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ডিএমপির ৪০ জন পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে; যারা প্রায় নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। সন্দেহভাজন ১৩০ জনের ডোপ টেস্ট করে মাদকাসক্ত ওই ৪০ জনকে শনাক্ত করা হয়। এখন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশে ডোপ টেস্টের এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে বলে জানা গেছে।
শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে পুলিশে মাদকাসক্ত সদস্যদের শনাক্ত করার এমন ঘটনা নজিরবিহীন। নিজেরা শুধরানোর পাশাপাশি ৫০টি থানা এলাকায় মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অপারেশনও জোরদার করতে মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সংশ্নিষ্ট অনেকের মত শুধু পুলিশ বাহিনী নয়, অন্যান্য ক্যাডারের সদস্যদের ডোপ টেস্ট করানো দরকার। কারণ সরকারি পদে থেকে মাদক সেবনে কেউ জড়িত হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে। সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারা মাদকাসক্ত হলে মাদক কারবারিদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হবে না। মাদকাসক্ত সরকারি কর্মচারীদের বাণিজ্যের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে এসব মাদক কারবারি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্য শনাক্ত করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এটি চলমান থাকবে। এখন পর্যন্ত যে ৪০ জনকে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। কারও কারও ব্যক্তিগত শুনানি চলছে। তথ্য-প্রমাণের মধ্য দিয়ে অভিযোগ প্রমাণ করে মাদকাসক্ত এসব পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, মাদকের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে যেসব পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে অন্যরা সতর্ক হবে। মাদকের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য সংশ্নিষ্ট থাকলে তাকে সংশোধন হতেই হবে। কোনো থানা এলাকায় মাদকের উদ্ধার সন্তোষজনক না হলে ওসিকে জবাবদিহি করতে হবে। কেন মাদকের উদ্ধার সন্তোষজনক নয়- এটির ব্যাখ্যা চেয়ে তাকে শোকজ করা হবে।
ডিএমপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মাদকাসক্ত সদস্যদের শনাক্ত করতে ডিএমপি বিশেষ টিম গঠন করেছে। প্রতিটি থানা, বিভিন্ন
ইউনিট ও পুলিশ লাইন্সে এ ইউনিটের সদস্যরা কাজ করছেন। কাউকে মাদকাসক্ত সন্দেহ হলে তার ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়। এর পর তাকে ডোপ টেস্টের জন্য তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।
পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ সদস্যদের মাদকের পথ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ওই বার্তা আমলে নেননি মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যরা। এর পরই হার্ডলাইনে যায় ডিএমপি। বিশেষ কমিটি করে সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পুলিশের মধ্যে যাদের মাদকাসক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তারা কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার। তাদের অধিকাংশের চাকরির বয়স কম। মাদকাসক্তদের অধিকাংশ ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করে।
পুলিশের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, মাদক নির্মূল করা হলে সমাজ থেকে অনেক অপরাধ কমবে। মাদকের সঙ্গে চুরি, ছিনতাই, নারী নিপীড়নের মতো ঘটনার যোগসূত্র বেশি। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, শুধু চাকরিতে যোগদানের আগে নয়, চাকরি পাওয়ার পরও নির্দিষ্ট সময় পরপর ডোপ টেস্ট করে মাদকাসক্ত সদস্যদের শনাক্ত করার বিধান থাকা জরুরি। এতে যে কোনো সরকারি চাকরিতে মাদকাসক্ত সদস্যদের সংখ্যা কমে আসবে।
করোনাকালে মাদক কারবারিরা নানাভাবে সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন কৌশলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাদক কেনাবেচা চলছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে এক হাজার ৪৩৮টি। আগস্টে মামলা হয়েছে ৯৭৮টি ও জুলাইয়ে মামলা হয়েছে এক হাজার ৪৩৮টি। গত তিন মাসে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় ঢাকায় মোট মামলার সংখ্যা তিন হাজার ৮৩৪টি।
বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর পাঁচটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হলো মাদক নির্মূল করা। পুলিশ নিজেরা মাদক থেকে দূরে থাকবে, আবার মাদক কারবারিদেরও রুখে দেবে। মাদকের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করার বিষয়টি পুলিশ তাদের কাজে অগ্রাধিকার দিতে চায়। তবে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা সময়ে পুলিশের অসাধু সদস্যদের নাম উঠে আসে- যারা মাদক সিন্ডিকেটে নানাভাবে যুক্ত।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-