অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-পশ্রয় দিচ্ছে ক্যাম্পের মাঝিরা!

টেকনাফে গোপন বৈঠক থেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নুরুন্নবীসহ আটক ৩

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল •


টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মাদক পাচার নিয়ন্ত্রন এবং নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যে নানামুখি অপতৎপরতা এবং চালিয়ে যাচ্ছে গোপন বৈঠক।

তারই ধারাবাহিকতায় টেকনাফের আলোচিত শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিতরে সন্ত্রাসীদের গোপন বৈঠক থেকে দেশীয় তৈরী অস্ত্র,ইয়াবাসহ শীর্ষ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সালমান শাহ গ্রুপের অন্যতম সক্রিয় সদস্য সন্ত্রাসী নুরুন্নবীসহ তিন অপরাধীকে আটক করেছে।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ড এলাকা সংলগ্ন সেই আলোচিত শালবাগান ২৬ নং রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি এবং সন্ত্রাসীদের সহযোগী কবিরের বসত ঘরে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত ৫/৬ জন অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মাদক পাচার নিয়ন্ত্রন এবং নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য গোপন বৈঠকে বসেছে।

সেই গোপন সংবাদের তথ্য অনুযায়ী ক্যাম্পে কর্মরত (এপিবিএন) আর্মড পুলিশের একটি দল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গোপন বৈঠকের আস্তানায় অভিযান গেলে সন্ত্রাসীরা আইন-শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন অপরাধী কৌশলে পালিয়ে গেলেও তিন জন তিন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করতে সক্ষম হয় আর্মড পুলিশের সদস্যরা।

আটক অপরাধীরা হচ্ছে, শালবাগান ২৬ নং রোহিঙ্গা শিবির এফ-ব্লক’র বাসিন্দা আব্দুস সালামের পুত্র মো: কবির মাঝি (৫২), উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ডি- ব্লক’র বাসিন্দা হামিদ হোসেন পুত্র মোঃ সৈয়দুল আমিন (২৬), হ্নীলা নয়াপাড়া রেজিষ্ট্রাট রোহিঙ্গা ক্যাম্প ই-ব্লক- ৯৭৪ নং শেডের বাসিন্দা শামসুল আলমের পুত্র এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী সালমান শাহ গ্রুপের অন্যতম সদস্য মোঃ নুরুন্নবী (২৯)।

এ সময় গোপন বৈঠকের আস্তানা তল্লাশী করে তাদের চার শত পিচ ইয়াবা,দেশীয় তৈরী ৪টি রামদা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

এদিকে অনুসন্ধানে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে বসবাস করছে প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা। এই রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি অংশ অনেক আগে থেকেই অত্র এলাকায় মাদক পাচার নিয়ন্ত্রন, অপহরন,ডাকাতি,মানুষ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত। আবার এই সমস্ত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দমন করার জন্য দায়িত্বরত আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তারেই ধারাবাহিকতায় ক্যাম্পে কর্মরত আর্মড পুলিশ(এপিবিএন’র) সদস্যরা সন্ত্রাসীদের আইনের আওয়তাই নিয়ে আসতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে পুরোনো অপরাধীদের পাশাপাশি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এইসব সন্ত্রাসী বাহিনী গুলোর কাছে রয়েছে দেশীয় তৈরী অস্ত্রের পাশাপাশি অত্যাধুনিক বিদেশী অস্ত্র। তাদেরকে আশ্রয়-পশ্রয় এবং সার্বিক সহযোগীতায় লিপ্ত রয়েছে ক্যাম্পে দায়িত্বরত রোহিঙ্গা মাঝিরা।

এই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড় গুলোতে গড়ে তুলেছে বেশ কয়েকটি গোপন আস্তানা। তারা দিনের বেলায় আস্তানায় থাকলেও সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথেই গহীন পাহাড়ের আস্তানা থেকে বের হয়ে ক্যাম্প ভিতরে এসে কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব। মাঝে মাঝে এই সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে ফাঁকা গুলি বর্ষন করে সাধারন মানুষের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করে।

এদিকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের অন্তর্গত নয়াপাড়া,শালবাগান,লেদা ও জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি উঠতি বয়সের সন্ত্রাসী বাহিনী। এই সন্ত্রাসীরা মাদক পাচার নিয়ন্ত্রনসহ নিজেদের আধিপত্য বিস্তার অব্যাহত রাখার জন্য বিগত কয়েক বছর ধরে মানুষ হত্যাসহ বেশ কয়েকটি আলোচিত অপরাধ কর্মকান্ড সৃষ্টি করেছে।

তারা কথায় কথায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। কোন কারন ছাড়াই সাধারন রোহিঙ্গাদের উপরও চড়াও হয়ে নানামুখি ক্ষতি সাধন করে।

উল্লেখ্য, বিগত কয়েকদিন আগে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উখিয়া-কুতুপালং ও টেকনাফের রঙ্গীখালীতে দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক নারীসহ ১০ জনের প্রানহানি হয়েছে।

উক্ত ঘটনায় আহত হয়েছে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ অর্ধ-শতাধিক রোহিঙ্গা। আবার প্রতিপক্ষের দেওয়া আগুনে পুড়ে গেছে রোহিঙ্গাদের শতাধিক ঝুঁপড়ি ঘর ও দোকান।

টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরের গোপন বৈঠক থেকে এপিবিএন’র সদস্যদের হাতে দেশীয় তৈরী অস্ত্রসহ আটক তিন অপরাধীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা রুজু করে আদালতে প্রেরন করার সত্যতা নিশ্চিত থানায় দায়িত্বরত (ওসি) মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, মাদক পাচার নিয়ন্ত্রন করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির গুলোতে লুকিয়ে থাকা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আইনের আওয়তাই নিয়ে আসতে পুলিশের কঠোর অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে।

আরও খবর