সাইফুল ইসলাম,কক্সবাজার জার্নাল •
কক্সবাজার শহরের প্রায় ৪ গজের মধ্যেই অবস্থিত ফার্মেসীগুলোতে একই ওষুধ একেক ফার্মেসীতে একেক দামে ওষুধ বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে চরমভাবে বিপাকে পড়েছে ভোক্তভুগীরা। অনেক সময় ওষুধের দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ঝগড়াও লেগে থাকে।
ফার্মেসীগুলোতে এভাবেই ওষুধ বিক্রির কারণে নানা ধরণের হয়রানির শিকার হচ্ছে গ্রামে-গঞ্জে থেকে আসা অনেকেই।
সচেতন মহলের দাবি, প্রশাসনের দায়ীত্বহীনতা ও তদারকির অভাবে ফার্মেসীগুলোতে ওষুধের দাম ইচ্ছামতো হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব ফার্মেসীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা দরকার। না হয় প্রতিনিয়তেই মানুষ হয়রানির শিকার হবে।
অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার শহরের হাসপাতাল সড়কে যেসব ফার্মেসী রয়েছে ওই ফার্মেসীগুলোতে ১০ পিসওয়ালা এক পাতা ওষুধ মূল্য আনুমানিক ১০০ টাকা বিক্রি করলেও একই একপাতা ওষুধ পানবাজার রোডের ফার্মেসীতে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। একইভাবে কেউ হাসপাতাল সড়কের ফার্মেসী থেকে ৫০০ টাকার ওষুধ কিনলে সেই ওষুধ পানবাজার সড়কে ৪০০ টাকা দিয়ে পাওয়া যায়। এছাড়াও মেয়াদোর্ত্তীন এবং নিম্নমানের ওষুধ সহ নিষিদ্ধ যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। বলতে গেলে নিয়ন্ত্রিনহীন ভাবে অক্ষত কোম্পানির মানহীন ঔষুধ বিক্রির ফলে রোগীদের স্বাস্থ্যহানী-সহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফার্মেসীতে রাখা যেমন অপরাধ তেমনি বিক্রি করা তার চেয়ে বেশী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জেলার সেইসাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেয়াদোত্তাীর্ণ ও নিম্নমানের কোম্পানীর ওষধ বিক্রির হিড়িক পড়েছে। প্রতারিত হচ্ছে জনগণ। দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় বেশীর ভাগ ফার্মেসী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সড়ক দূর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ছেলে মো. সালাম। হাসপাতালের নার্স আমাকে একটি ওষধের লিষ্ট হাতে দেয়। ছেলে আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাড়াহুড়া করে হাসপাতালে সামনে ওষধ মার্কেট থেকে ওষধ কিনে এনে নাসের্র হাতে দিই। ওষুধের দাম নিয়েছিল ৬০০ টাকা। কিছুক্ষণ পরে সেই একই ওষুধের লিষ্ট নিয়ে পানবাজার সড়কের ফার্মেসীতে যাই ঠিক একই ওষুধ পানবাজারে সড়কের ফার্মেসীতে ৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এভাবেই অনেকেই প্রতিনিয়তে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
অন্যদিকে কক্সবাজার জেলা সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে অধিকাংশ সেবামূলক ফার্মিসীগুলোতে চলছে ওষুধ নিয়ে প্রতারণা। ক্রেতাভেদে একশ্রেণী ফার্মাসিষ্ট দোকানদার ইচ্ছাকৃত ভাবে ক্রেতাদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে বেশী লাভের লোভে নিম্নমান ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে বাড়ছে জনস্বাস্থ্যের মৃত্যুর ঝুঁকি। মূলত অসুস্থ ব্যক্তিরা এসব ওষুধ রোগ নিরাময়ের জন্য সেবন করে উল্টো মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ছে। একশ্রেণী লোভী ফার্মেসীর মালিক অতি মূনাফার জন্য অনেক দামী ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবার পরও রেখে দেয় বিক্রির জন্য।
অভিজ্ঞমহল জানান, যেখানে ফার্মেসীগুলো মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসার কথা সেখানে ব্যবসায়ীক স্বার্থের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ বিষজাত ওষুধ দিয়ে মৃত্যুর পথে দিকে ঠেলে দিচ্ছে ভোক্তাদের। মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ বলতে আর কিছুই রইল না।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু কিছু কোম্পানীর প্রতিনিধির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ফার্মেসীগুলো থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ বিষক্রীয়া ঔষধ তুলে না নেওয়ায় লোকসানে গুণতে হচ্ছে ফার্মেসী মালিকদের। ফলে ফার্মাসীষ্ট নামধারী কতিপয় কর্মচারীর যোগসাজসে নিরীহ ব্যক্তির কাছে সময় সুযোগ বুঝে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই ওষুধ একেক দামে বিক্রি হচ্ছে, পানবাজার রোড, হাসপাতাল সড়ক, সমিতিপাড়া, পৌরসভার উত্তর পাশে, নতুন বাহারছড়া,পাহাড়তলী টেকপাড়া,মাঝিরঘাট, কলাতলী, রুমালিয়ারছড়া, খুরুশকুল ও শহরের আশপাশে এলাকায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ফার্মেসীর মালিক জানান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া জেলায় ফার্মেসী ব্যবসা বেড়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের কোন তদারকি নেই। শহরে বিভিন্ন এলাকায় ওষুষধ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কোন লাইসেন্স ছাড়াই ফার্মেসী খুলে বসেছে। তারা নিম্নমানের ওষুধের পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও বিক্রির কথা শুনেছে।
জনগনের সেবার কথা চিন্তা করে অচিরেই এসব প্রতারক ফার্মেসীগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। গুটিকয়েক এসব ফার্মেসী জন্যই পুরো ফার্মেসীর বদনাম।
হাসপাতালে নার্সরা জানান, বিভিন্ন সময় ফার্মেসী থেকে রোগীর জন্য আনা ওষুধগুলোর মধ্যে কয়েকটির মেয়াদোত্তীর্ণ পাওয়া যায়। বিশেষ করে রাত্রে বেলায় ফার্মেসী লোকজন ক্রেতাদেরকে ঠকিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমাদের চোখে পড়লে রোগীর আত্মীয় স্বজনকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত দিয়ে নতুন ওষুধ আনার জন্য বলি। কতিপয় ফার্মেসী লোকজন ইচ্ছে করে অসহায় রোগীদের ঠকিয়ে এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ও ওষুধ দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে থাকে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী সহকারী পরিচালক মোঃ ইমরান হোসাইন জানান, ফার্মেসীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে ওষুধ বিক্রির অভিযোগ পেলেই ওই ফার্মেসীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এখনো কেউ এ ধরণের অভিযোগ দেয়নি। জনস্বার্থে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কক্সবাজার কাযার্লয়ের এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-