রোহিঙ্গারা এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া •

উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেছেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরুপ। বিষয়টি অনুধাবন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।তাদের কথায় উঠে আসে তাদেরকে মিয়ানমার সেনারা নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ।সেখানে রোহিঙ্গাদের ছিলনা স্বাধীনতা। তারা যেটা ওখানে পারেনি সেটা এখানে এসে করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে এসে তারা তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত পাচ্ছে। এখানে এসে ব্যবসা বাণিজ্য করছে। স্বর্ণ ও ইয়াবা ব্যবসা করে রাতারাতি হয়েছেন কোটিপতি। অবশ্য সে ক্ষেত্রে স্থানীয়রাও জড়িত রয়েছেন। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নতুন-পুরনো রোহিঙ্গারা বার বার সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। গত কয়েকদিনের সংঘাতে প্রাণ গেছে ৮ জন রোহিঙ্গার। এই সংঘাতে আতংকে রয়েছেন ক্যাম্পে কর্তব্যরত চাকরিজীবী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থমথমে অবস্থা। প্রতিদিনই ক্যাম্পের কোথাও না কোথাও মারামারি, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। ঘটছে নানা অপরাধের ঘটনা।

রোহিঙ্গারা বলছে, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি নতুন-পুরনো অনেক রোহিঙ্গা দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। যে কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প।

প্রতিদিনই রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষে আহত হচ্ছে অনেকে। আর আহতদের চিকিৎসা সেবা কিংবা উন্নত চিকিৎসার জন্য ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছে সরকারি-বেসরকারি অনেক চাকরিজীবী এনজিও সংস্থা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন তারাও।

তবে চাকরিরত ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তাহীনতার কোন কারণ নেই বলে জানালেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ও জেলা প্রশাসক।
চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের আমরা আশ্বস্ত করতে চাই। পুলিশ প্রশাসন আছে, তারা সর্বক্ষণ খোঁজ খবর রাখছে।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, আমার মনে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের ভয়ের কিছু নেই।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির মহাসচিব এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের বেপরোয়া আচরণের পেছনে কাদের ইন্ধন রয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এখন রোহিঙ্গারা রোহিঙ্গাদেরকে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও খুন করছে। তাদের হামলার শিকার হয়ে স্থানীয় দুই জন যুবক নিহত হয়েছেন। যা অত্যন্ত দুঃখ জনক। আমরা প্রথম থেকেই রোহিঙ্গাদের পাশে ছিলাম। তার প্রতিদান কি তারা স্থানীয়দের হত্যা করছেন। স্থানীয়রা ক্ষেপে গেলে পরিনাম হবে ভয়াবহ। আরেক প্রভাবশালী সদস্য সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, নিরহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের অপহরণ করে চাঁদা দাবি করছেন চাঁদাবাজ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে আমরাই দাঁড়িয়েছিলাম। অন্ন,বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল স্থানীয়রা। রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে ভাতৃত্ববোধ অক্ষুন্ন থাকুক তা আমরা চাই। তারাও আমাদের মুসলিম ভাই।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে সক্রিয় আছে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রুপ। গেল ৩ বছরে এসব ক্যাম্পে সহিংসতায় প্রাণ ঝরেছে অন্তত ৮০ জন রোহিঙ্গার। আমরা এই অবস্থার পরিত্রাণ চাই।

আরও খবর