খুনের হোলিখেলায় মত্ত রোহিঙ্গারা, আতংকিত স্থানীয় লোকজন ও সেবাকর্মীরা

রফিকুল ইসলাম •

মানুষ হত্যার হোলিখেলায় মেতে উঠেছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। গত পাঁচদিনে এক নারীসহ ৮ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ধরে মৌলভী হামিদ, আনাস ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা চলে আসছে। এতে আহত হয়েছে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ অন্তত শতাধিক।

এ অবস্থায় ক্যাম্পের আশপাশের কয়েক হাজার স্হানীয় লোকজন ও রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন দেশী-বিদেশী এনজিওতে কর্মরত সেবাকর্মীরাও রয়েছে আতংকে। এ নিয়ে ক্যাম্পে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

গত (০১ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত গুলাগুলি চলে। সকালে সমিরা আক্তার (৪১) নামের একজনকে মৃত্যু উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি হলেন কুতুপালং ৩ নম্বর ক্যাম্পের এফ ব্লকের মৃত ছৈয়দ আলমের মেয়ে।

রবিবার (৪ অক্টোবর) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপে দফায় দফায় সংঘর্ষে দুই জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।ভোর ৪টার দিকে কুতুপালং ক্যাম্পের ২ ওয়েষ্ট এর ডি ৫ ব্লকের মৃত সৈয়দ আলমের ছেলে ইমাম শরীফ (৩২) ও ডি ২ ব্লকের মৃত ইউনুসের ছেলে শামসুল আলম (৪৫)।

গত (৫ অক্টোবর) রাত ১১ টা থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত আনাস ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এতে মোহাম্মদ নাসিম (২৪) নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত যুবক কুতুপালং ডি-৪, ২ ওয়েস্ট ক্যাম্পের মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। কুতুপালং ক্যাম্পের আইন শৃংখলার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আতিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) কুতুপালং ক্যাম্পে দু’গ্রুপ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়ে ৪ জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ সংঘর্ষ হয় বলে জানা গেছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিন সূত্রে ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়াও মঙ্গলবার সকালে টেকনাফের চাকমারকুল এলাকায় র‌্যাব-১৫ অভিযান চালিয়ে ধাওয়া করে ৯ জন রোহিঙ্গা ডাকাতসহ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। কক্সবাজারস্থ র‌্যাব-১৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দিন দিন রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি তারা চুরি, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। শিবির থেকে বেরিয়ে স্থানীয়দের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটছে।

কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদ জানান, আনাস গ্রুপ ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে সংঘটিত ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে কয়েক’শ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু কুতুপালং ক্যাম্প ছেড়ে অন্য ক্যাম্পে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দোকানপাট বন্ধ আছে। রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।

কুতুপালং ২ নম্বর ক্যাম্পের হেড মাঝি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ছুরি ও লাঠির আঘাতে কমপক্ষে ১০০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও কুতুপালং এনজিওদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোহিঙ্গা জানান, ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা নেতা মৌলভী আবু আনাস ও মো. রফিকের নেত্বত্বে মুন্না গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় সন্ত্রাসীরা কুতুপালং ই-ব্লকের ১০-১৫টি ঝুপড়ি ঘর ভাঙচুর করে। এর আগে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা একটি সিএনজি অটোরিকশাসহ ড্রাইভারকে দিনে-দুপুরে অপহরণ করে ৪ লাখ টাকা দাবি করে।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এদিকে দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর কারসাজিতে পরপর দুই বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যেখানে রোহিঙ্গাদের এমন অপরাধ কর্মকাণ্ড ও সহিংস আচরণে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা জানান কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে রেজিস্ট্রার্ড এবং আনরেজিস্ট্রার্ড কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা। সকালেই ঘটনাস্থলে পুলিশ টহল দিচ্ছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও খবর