কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক •
একদিকে তালিকায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা ভোটার, অন্যদিকে ১৩ জনের তালিকা জমা দিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের। অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জন্ম ও নাগরিক সনদ দেয়ার অভিযোগ, খোদ জনপ্রতিনিধি আর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
সবুজে ঘেরা পাহাড়ের একপাশে বাংলাদেশ, অন্যদিকে মিয়ানমার। এ অংশের সীমান্ত লাগোয়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের একটি চিঠির সুত্র ধরে আমাদের অনুসন্ধান শুরু।
যেই চিঠিতে, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ইউনিয়নের ১৩ জন রোহিঙ্গাকে ভোটারকে তালিকা বাদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিলের আবেদন করেন।
এত ধাপ পেরিয়ে কিভাবে ভোটার হলেন রোহিঙ্গারা? তথ্য জানতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যায় অনুসন্ধান দল। অনুসন্ধানে পাওয়া যায় অবাক করা তথ্য। সার্ভার খুজে ওই ১৩ ভোটারের শুধুমাত্র বিশেষ ফরম ও নিবন্ধন ফরম ছাড়া আর কোন তথ্যই সংরক্ষিত নাই।
এই অঞ্চলের ভোটার হতে উপজেলা নির্বাহী ও নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনের সুপারিশ প্রয়োজন। ১৩ ভোটারের সবার আবেদনেই পাওয়া গেলো ১৪ জনের সুপারিশ।
ঘুমধুমের রেজু আমতলী এলাকায় ছোট্ট একটি দোকান চালায় ইউসুফ নবী। এসেছিলেন শরনার্থী হিসেবে, নতুন পরিচয়ে রোহিঙ্গা থেকে এখন হয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিক, পেয়েছেন জাতীয় পরিচয়পত্রও। তালিকাভুক্ত ওই ১৩ রোহিঙ্গা ভোটারের একজন তিনি।
ইউসুফের দাবি, তার বাবা আশরাফ আলী, কিন্তু বাবাই চিনেন না সন্তানকে।
একটু সামনে যেতেই দেখা হয় রোহিঙ্গা ভোটার জিয়াবুল ও আজিজুল হকের সাজানো মা ফাতেমা বেগমের সাথে। অথচ তার তিন সন্তানের মধ্যে এই নামে কেউ ই নেই। হাজির হয় তার এক ছেলে ও মেয়েও। জানান এই নামে যাদের চিনেন তারা আছেন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
তাহলে এই ফাতেমা বেগম কিভাবে হয়ে উঠলেন দুই রোহিঙ্গা নাগরিকের মা? কথায় কথায় বেরিয়ে এলো থলের বিড়াল।
২০১৫ সালে হালনাগাদের সময় তার মেয়েকে ভোটার করতে যে তথ্য জমা দেন সেটি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল, ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার বাবুল কান্তি ফাতেমাকে মা, আর আলী মদনকে বাবা সাজিয়ে দুইজন রোহিঙ্গাকে ভোটার করেন।
সামনের একটি চায়ের দোকানে পাওয়া গেলো এই চক্রের সদস্য মেম্বার বাবুল কান্তিকে। এই এলাকায় অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জন্ম সনদ ও শনাক্তের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। যদিও তিনি দায় চাপাচ্ছেন সিরাজুল ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ওপর। আমরা এবার সিরাজুলের বাড়িতে। ক্যামেরার উপস্থিতি টের পেয়ে লাপাত্তা তিনি। কথা হয় মোবাইল ফোনে।
অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েই তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা আইয়ুবুল, জিয়াবুল, আজিজুলসহ অনেকেই এখন আছেন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এবার তাদের খুজতে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে অনুসন্ধান দল। ক্যাম্প ইনচার্জের দপ্তর, ইউএনএইচসিআর কোথাও মেলেনি তাদের তথ্য। যদিও ক্যাম্পের কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশি এনআইডি নিয়ে অনেকেই আছেন এখানে।
তবে কি মাত্র ১৩ রোহিঙ্গাই ছিলেন ঘুমধুমের ভোটার তালিকায়? ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দপ্তরে আমরা। কথায় কথায় হঠাৎই একটি ফাইলে নজর আটকায় আমাদের। এ যেন কেঁচো খুড়তে সাপ। একে একে বের হতে থাকে রোহিঙ্গা ভোটারের বিশাল তালিকা।
ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মেম্বার, মহিলা মেম্বার, গ্রাম পুলিশ প্রতিটি ওয়ার্ডের রোহিঙ্গা ভোটারদের আলাদা আলাদা তালিকা তৈরি করে এক বছর আগে জমা দেন চেয়ারম্যানের কাছে। সব মিলিয়ে ৫শ’র বেশি রোহিঙ্গা ভোটারের তালিকা ফাইলবন্দি করে তিনি নাকি রোহিঙ্গা ভোটারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন।
ঐ তালিকাভুক্তরা কি এখনো আছেন ভোটার তালিকায়? তাদের হাতে কী আছে জাতীয় পরিচয়পত্র? তথ্যের সতত্যা জানতে এবার আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে আমরা। সার্ভারে ঢুকতেই মেলে সত্যতা। ঐ সব রোহিঙ্গা ভোটাররা এখনো আছেন তালিকায়, যাদের হাতে আছে জাতীয় পরিচয়পত্রও।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-