কক্সবাজারে জন্ম নিবন্ধনের অনুমতি পেল ৪ পৌরসভা

এম. বেদারুল আলম •

এবার জন্ম নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারের ৪ পৌরসভাকে। সাথে অনুমতি পেয়েছে রামু ও চকরিয়ার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ। গত ৩১ আগষ্ট সদরের এবং উখিয়ার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদকে অনুমতির প্রায় ১ মাস পর অনুমতি পেল উক্ত ৪টি পৌরসভা এবং ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ। পর্যায়ক্রমে সবকটি ইউনিয়ন পরিষদকে জন্ম নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক শ্রাবস্তি রায়।

তিনি জানান- কক্সবাজার পৌরসভা, চকরিয়া পৌরসভা, টেকনাফ পৌরসভা এবং মহেশখালীর পৌরসভার নাগরিকরা স্ব স্ব পৌরসভায় জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন পাশাপাশি রামুর ৫টি ইউনিয়ন এবং চকরিয়ার ৪টি ইউনিয়নকে ও জন্ম নিবন্ধনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা এখন থেকে আবেদন গ্রহণ করতে পারবেন। এর আগে সদর এবং উখিয়ার ১২টি ইউনিয়নকে জন্ম নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়া হয়। ডিডিএলজি জানান- গত ৩১ আগষ্ট অনুমতি দেওয়া ১২টি ইউনিয়ন পরিষদে সর্বমোট কয়টি আবেদন জমা পড়েছে তার হিসাব চলতি সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যাবে। আজ বিকালে (গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর) সদর উপজেলায় বাছাই কমিটির সভা রয়েছে। সভা শেষ হলে সদরে কয়টি জন্ম নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়েছে এবং কয়টি অনুমতি দেওয়া হয়েছে তা জানা যাবে বলে ও জানান।

জেলার ৭১ ইউনিয়ন পরিষদ এবং ৪টি পৌরসভার মধ্যে গত ৩১ আগষ্ট ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব কক্সবাজারের কৃতি সন্তান হেলালুদ্দিন আহমদ জেলাবাসির কাংখিত জন্ম নিবন্ধন খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দেয়ার পর জেলাবাসির দীর্ঘদিনের আকাংখিত সরকারের এ পরিসেবা চালু করা হয় এবং পর্যায়ক্রমে তা খুলে দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে জেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদে এ কার্যক্রম শুরু হলেও গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর আরো ৪টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন পরিষদকে জন্ম নিবন্ধন করার অনুমতি দেওয়া হলো। রোহিঙ্গাদের কারনে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পুরো কক্সবাজার জন্মনিবন্ধন কার্যত্রম বন্ধ করে দেয় সরকার। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা স্রোতের কারনে এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয় যেন কৌশলে রোহিঙ্গারা জন্মনিবন্ধন করতে না পারে।

স্থানীয় সরকার শাখার উপ পরিচালক শ্রাবস্তি রায় জানান, জন্ম নিবন্ধন পেতে হলে ৪টি শর্ত অবশ্যই মানতে হবে আবেদনকারিকে। আবেদনপত্রের সাথে বিদ্যুৎ বিলের কপি, হোল্ডিং টেক্স আদায়ের কপি, আবেদনকারির পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি। যাদের পিতা-মাতা মৃত তাদের মৃত্যু সনদ। ২০০০ সালের আগে যারা জন্মগ্রহন করেছে তাদের পিতা-মাতার জন্ম সনদের প্রয়োজন নেই যদি আইডি কার্ডের ফটোকপি আবেদনপত্রে সংযুক্ত করা হয়। আবেদনকারি যদি ২০০০ সালের পরে জন্মগ্রহন করে তাহলে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। যে সকল আবেদনকারির শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নেই, টিকার কার্ড নেই, বয়স প্রমাণের জন্য সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অথবা সিভিল সার্জন অফিস কর্তৃক প্রদেয় বয়স প্রমানের প্রত্যয়নপত্র অবশ্যই আবেদনে প্রমাণ করতে হবে।

উপরোক্ত কাগজপত্রসহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করতে হবে। আবেদন পরিষদ থেকে উপজেলা জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন যাছাই বাচাই কমিটির বরাবরে উপস্থাপন করার পর কমিটি গুরুত্বসহকারে যাছাই করে সঠিক হলে পুণরায় অনুমোদন দিয়ে পরিষদে পাঠাবে। পরিষদ তা আবেদনকারিকে চেয়ারম্যান এবং পরিষদের স্বাক্ষরে সনদ প্রদান করবে। প্রতিটি উপজেলায় শক্তিশালী বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা সবদিক বাছাই করে চূড়ান্ত করে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করবেন। মিসেস শ্রাবস্তি রায় আরো জানান, রোহিঙ্গাদের যদি কোন চেয়ারম্যান বা পরিষদের পক্ষ থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হয় বা ইস্যুর পর যদি প্রমাণিত হয় তা ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে। উক্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে জেল জরিমানা এমনকি কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।

এদিকে কক্সবাজার সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদ উল্লাহ মারুফ জানান, সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে আমরা জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করেছি। উক্ত ইউনিয়ন সমুহে মোট কয়টি আবেদন জমা পড়েছে তা জানা যাবে বাছাই কমিটির বৈঠকের পর। আজকালের মধ্যে মোট কয়টি আবেদন জমা পড়েছে এবং কয়জনকে জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে শীগ্রই জানা যাবে বলে তিনি জানান।

ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান জানান, অনুমতির পর থেকে প্রতিদিনই পরিষদে আবেদন নিয়ে ভিড় করে লোকজন। কিন্তু নিয়ম কঠিন হওয়ার কারণে অনেকের সব কাগজপত্র ঠিক থাকেনা। আমরা ৭০টির মত আবেদন গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সদর উপজেলা বাছাই কমিটির বরাবরে প্রেরণ করেছি। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে তা আবেদনকারিদের জন্মনিবন্ধন সরবরাহ করব।

অপরদিকে জেলা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সমিতির সভাপতি মোঃ শিহাব উদ্দিন জানান, আমি যেহেতু পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে আছি সেহেতু আমার পরিষদে এ পর্যন্ত ১৫৩টি আবেদন জমা পড়েছে। অনেকের কাগজপত্র সঠিক না থাকায় আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। নিয়ম কঠিন হওয়ায় অনেকে বার বার এসেও চাহিতক কাগজপত্র না পাওয়ায় অনেক আবেদন আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। বাছাই কমিটির কাছে পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১৫৩টি আবেদন সদর উপজেলায় প্রেরণ করেছেন বলে জানান শিহাব উদ্দিন।

উল্লেখ্য ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট মায়ানমারে ইনফ্লাক্সের পর রোহিঙ্গারা টেকনাফ – উখিয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এর পরের মাসে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার কক্সবাজার জেলার জন্ম নিবন্ধন সার্ভার বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে বন্ধ রাখা হয় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ।

আরও খবর