উখিয়ায় বহিরাগতদের অপকর্মে ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা

হুমায়ুন কবির জুশান উখিয়া •
উখিয়ায় আবাসিক এলাকার অধিকাংশ ভাড়া বাসায় অনৈতিক কার্যকলাপ ও মাদকের আড্ডার মতো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে।

আবাসিক এলাকায় নেই তেমন নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা বা সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেখানকার এক শ্রেণির বাসিন্দা ও বহিরাগত লোকজন নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মানবতার শহর উখিয়ায় বাংলাদেশের ৬৪ জেলার লোকজন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত আছেন।

তারা সোনারপাড়া, ইনানী, মরিচ্যা, কোটবাজার উখিয়া হয়ে থাইংখালি পর্যন্ত বিভিন্ন ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন। প্রথম পর্যায়ে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে অনেকেই বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হলে উখিয়া থানার চৌকস পুলিশ এমনই দুজনকে থানায় নিয়ে সত্যতা খুঁজে পান। যদিও এ ঘটনা অনেক আগের। সেই থেকে বাড়িওয়ালাও সতর্ক হয়ে যান।

দীর্ঘদিন নজরদারি না থাকায় বিভিন্ন এনজিওর লোকজন তাদের ভাড়া বাসা-বাড়িতে নারি পুরুষের অবাধ মেলামেশা থেকে শুরু করে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের আড্ডা জমান বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় জাহাঙ্গির আলম বলেন, তার বাড়ির পাশের ভাড়াটে বাসায় প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় রিজার্ভ সিএনজি করে একটি মেয়ে ঐ বাসায় আসতো এবং খুব ভোরে সিএনজি করে আবার চলে যেতো। কয়েকবার দেখার পর এনজিওর ঐ ছেলেটাকে শাসিয়ে দিলে সে বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। এনজিওতে কর্মরতরা বারবার বাসা বদল করলেও তারা তাদের স্বভাব বদলাতে পারেনি। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা একটু সতর্ক হলেই তারা সিএনজি রিজার্ভ করে চলে যান কক্সবাজারে আবাসিক হোটেল্। স্থানীয় রাজাপালং এলাকার মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, আমাদের উখিয়ার সেই আগের পরিবেশ আর নেই।

রোহিঙ্গা আসার ফলে বিভিন্ন এনজিও লোকজনের বেপরোয়া চলাচলে এখন গ্রামীণ পরিবেশও নষ্ট হয়ে গেছে। একে অপরের সাথে গড়ে তুলছে শারীরিক সম্পর্ক। কে কাকে নিয়ে কোথায় যায় কেউ খবর রাখে না। তাই অভিভাবকদের খুবই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। গ্রামে অপরিচিত লোকের আনা-গোনা ও মোটর সাইকেলে করে উঠতি বয়সের ছেলেদের সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্যাম্পে চাকরি করতে আসা লোকজন মাদকের আড্ডায় বসে। উখিয়া সদর হাজিরপাড়া,মালভিটাপাড়া জালিয়া পালং লম্বরিপাড়াসহ উখিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ইয়াবার বেচা-বিক্রি ও সেবন করেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, উখিয়া ট্যাকনিকেল কলেজের পর থেকে থাইংখালী পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানগুলোতে খুচরা ইয়াবা বেচা-কেনা হয়।

ইয়াবার সহজ লভ্যতায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বনাঞ্চল। শক্ত নজরদারির অভাবে বনের জায়গায় যে যার মতন করে দোকানঘর নির্মাণ এমনকি সরকারি বনভূমিতে পাকা দালান বাড়ি করে ইতিমধ্যে অনেকেই বাসা-বাড়ি তৈরি করে বিভিন্ন এনজিও লোকদের ভাড়া দিয়েছেন। অধিকাংশ এনজিও লোকজন সেখানে তাদের মনের মতো করে ইয়াবা সেবন থেকে শুরু করে বেশ কিছু অনৈতিক কাজ করছে বলে আমাদের কাছে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, কয়েক এনজিও কর্তাবাবুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিরত সুন্দরি মেয়েদের সাথে প্রথমে আলাপ,এর পর বন্ধুত্ব। তারপর প্রেমের প্রস্তাব। রাজি না হলে চাকুরিচ্যুতির হুমকিধমকি। অকথ্যা গালিগালাজও শুনতে হয় মেয়েদের। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিতে আসা মেয়েদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক। অবশেষে সেই মেয়েকে বশে এনে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।

মিটিংয়ের কথা বলে নিয়ে যান কক্সবাজারে। সেখানে আবাসিক হোটেলে রেখে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারী-পুরুষ ক্যাম্পে চাকরি করতে এসে একে অপরের সাথে স্বাধীনভাবে অবাধ মেলামেশা করে ইয়াবা সেবনের আড্ডায় মেতে উঠে। তাদের দেখাদেখি উখিয়ার মেয়েরাও জড়িয়ে পড়েছে অনৈতিকতায়।

ভুক্তভোগীরা আত্নসম্মানের ভয়ে চেপে রাখেন এমন মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের কথা। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সাথে সমাজপতিদের এই ব্যাপারে সু-দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

আরও খবর