ডেস্ক রিপোর্ট ◑ দেশের প্রবীণ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর বর্তমানে ‘অরাজনৈতিক সংগঠন’ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির কে হবেন, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর কে হচ্ছেন হেফাজতের আমির? বর্তমানে এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে হাজারো কৌতূহল ভিড় করছে কওমি মহলে। চট্টগ্রাম নাকি রাজধানী ঢাকা থেকে হেফাজতের আমির নির্বাচিত হবেন, তা নিয়েও সংগঠনের ভেতরে চলছে নানা জল্পনা। আল্লামা শফীর মৃত্যুর কারণে একই সঙ্গে কওমি মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং উচ্চতর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’এর চেয়ারম্যান পদেও পরিবর্তন আসছে।
গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠান ও কমিটির দিকে এখন সবার চোখ। কেউ কেউ বলছেন, বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আবার কেউ কেউ বলছেন হেফাজতের সবচেয়ে বেশি সরব কার্যক্রম ছিলো চট্টগ্রাম ও ঢাকা কেন্দ্রিক ছিলো তাই ঢাকা মহানগর হেফাজতের সভাপতি বারিধারা মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমির নামও হেফাজতের আমির নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনার তালিকায় রয়েছে। এছাড়াও আলোচনায় আছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম, জমিয়ত নেতা মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। তবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, সংগঠনটি কাউন্সিলে সংগঠনের বর্তমান মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী হেফাজতের নতুন আমির নির্বাচিত হয়েও যেতে পারেন।
জানা যায়, আল্লামা শাহ আহমদ শফী ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়। তাঁর মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি এবং বড় ধরনের শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামী শিক্ষা, প্রচার ও প্রসারে প্রবীণ এ আলেমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।গত শুক্রবার আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর শনিবার ১৯ সেপ্টেম্বর দাফন শেষে আছর নামাজের পর মাদ্রাসার মজলিসে সুরার বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ আহমদ সাহেব ও মাওলানা ইয়াহইয়া সহ তিন সদস্য বিশিষ্ট মজলিসে আমেলা গঠন করা হয় একই বৈঠকে হেফাজাতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে শাইখুল হাদীস ও নাযেমে তালিমাত বা শিক্ষা সচিব মনোনীত করা হয়। এছাড়াও মাওলানা হাফেজ শোয়াইবকে সহকারী শিক্ষা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। আন্দোলনের সময় মাদ্রাসায় ভাংচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। হেফাজত ইসলামের পরবর্তী আমির কে হবেন এ প্রসঙ্গে হেফাজাতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, “হেফাজত ইসলামের পরবর্তী আমির কে হবেন এটা আল্লাহ তায়ালা জানেন। তবে আমরা চেষ্টা করব উনার (আল্লামা শফী) আদর্শ বাস্তবায়ন করার। সেটা হাটহাজারী মাদরাসা ও হেফাজতে ইসলামের ব্যাপারেও। আল্লামা শাহ আহমদ শফির মতো মানুষ আর পাওয়া যাবে না। এখন আমার দায়িত্ব হলো কাউন্সিল ডাকা। কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চুড়ান্ত হবে।”
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে কওমি ঘরানার বৃহত্তম অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম গড়ে তোলেন হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। কওমি ঘরানার সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলকে এক ব্যানারে নিয়ে আসতে সক্ষম হন তিনি। ১৩ দফা দাবি দিয়ে ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা অবরোধ ও রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে আলোচনায় আসেন আল্লামা শফী। এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলে খবরের শিরোনাম হন। ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আহমদ শফীর পদত্যাগ এবং তার ছেলে আনাস মাদানীকে বিভিন্ন অভিযোগে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের সময় মাদরাসায় অবস্থান করা আহমদ শফী অসুস্থ হয়ে পড়লে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।পরে অবস্থার অবনতি হলে ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে থাকাবস্থায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে পুরান ঢাকার গে-ারিয়ার ধূপখোলা মাঠের পাশে অবস্থিত আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হলে সন্ধ্যার দিকে ১০৫ বছর বয়সে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-