হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া ◑

২০১৭ সালে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনারা আগুন লাগিয়ে দেয় এবং নির্বিচারে হত্যাযঞ্জ চালায়।
ঐ সময় রাখাইন থেকে সাত লাখ ৩০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন।
মিয়ানমার সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে ওই অভিযান চালালেও জাতিসংঘ একে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। তিন বছর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রায় চারশ গ্রাম আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ রফিক বলেন, মিয়ানমার চায় আমরা যেন আর ফিরে না যাই।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্ব হওয়ায় কক্সবাজার ও চট্রগ্রাম শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। গত তিন বছরে শুধুমাত্র কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে বসতি গড়েছে অন্তত অর্ধলাখ রোহিঙ্গা। এর আগেও মিয়ানমার থেকে প্রবেশের পর স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
এসব রোহিঙ্গা প্রথমে ভাড়া বাসায় উঠে রিকসা, ইজিবাইক ও বিভিন্ন চাষাবাদে শ্রমিক হিসেবে অবস্থান নেয়। পরে ধীরে ধীরে বসতি শুরু করে।
কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া,কুতুবদিয়াপাড়া, নাজিরারটেক,বৈদ্যঘোনা, খাজামঞ্জিল, লাইট হাউসপাড়া, পাহাড়তলী,ইসলামপুর,হালিমাপাড়া, জিয়ানগর, ও লিংকরোড সহ শহরের আশপাশের এলাকায় অধিকাংশ রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করছে।
এসব রোহিঙ্গার একাংশ দিনমজুর, জেলে শ্রমিক, রিকসা, ইজিবাইক শ্রমিক স্থানীয় বাংলাদেশিদের বাড়ি চাষাবাদের কাজ করলেও অনেকেই জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অপরাধ জগতে।
আবার অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে কৌশলে বাগিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশি ভোটার আইডি। ভোটার তালিকায় নাম লিখিয়ে নানাভাবে এখন প্রভাব বিস্তার করছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির প্রভাবশালী সদস্য নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, উখিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এবং কক্সবাজার শহরে যেভাবে রোহিঙ্গারা অবস্থান নিয়েছে, হয়তো কয়েক বছর পরে এটি রোহিঙ্গা শহরে পরিণত হবে।
রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য স্থানীয়রা প্রথমে নানা সুযোগ সুবিধা দেয়। ঘর ভাড়া থেকে শুরু করে দোকানের কর্মচারী, মজুর, রিকশা, ইজিবাইক চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছি। আমরা অনেকেই রোহিঙ্গাদের জমি বিক্রি এবং বিয়ে-শাদি করে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছি। এ কারণে পুরো কক্সবাজারে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে।
স্থানীয় যুবক সালামত উল্লাহ বলেন, শ্রম বাজার রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। মজুরি কম নেওয়ায় স্থানীয়রা রোহিঙ্গা শ্রমিকদের কাজ করাচ্ছে বেশি। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনী নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
তারা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের প্রায় ১০ হাজার একর বনভূমির ওপর অস্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে। দীর্ঘ তিন বছর পার হয়ে গেলেও প্রত্যাবাসন না হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার এসব রোহিঙ্গাদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে। আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থার পাশাপাশি কাজ করছে দেশীয় বিভিন্ন এনজিও।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-