নাজিম মুহাম্মদ ◑
চেকপোস্ট শিথিলতায় ইয়াবার জোয়ার
শিথিল হয়ে পড়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। নগরীর চার প্রবেশমুখের চেকপোস্ট বক্সের দরজা বন্ধ। অতীতের অন্য সময়ের তুলনায় গত আগস্ট মাসে ইয়াবা পাচারের ঘটনা বেশি ঘটেছে। গত ১ আগস্ট রাত নয়টায় কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহার ছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খান নিহত হয়। ওই ঘটনার পর পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশি অনেকটা বন্ধ রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে এ সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ ইয়াবা পাচারকারী গ্রুপ। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর প্রবেশমুখ বায়েজিদ থানার অক্সিজেন, আকবরশাহ থানার সিটিগেট ও কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকার পুলিশের চেকপোস্ট বক্সের দরজা বন্ধ রয়েছে। কর্ণফুলী থানা পুলিশের চেকপোস্টে বক্সের পাশেই থাকা নগর ট্রাফিক পুলিশ বক্সের দরজা তালা লাগানো দেখা যায়।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, টেকনাফের বাহার ছাড়া তদন্ত কেন্দ্রের তল্লাশিতে সাবেক মেজর নিহতের ঘটনার পর থেকে পুলিশের চেকপোস্ট অনেকটা শিথিল অবস্থায় রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কমকর্তার অনুমতি ছাড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের কোন ধরনের অভিযানে না যেতে বলা হয়েছে।
তবে চেকপোস্টে তল্লাশির ক্ষেত্রে পুলিশের শিথিলতার বিষয়টি সঠিক নয় জানিয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এস এম মোস্তাক আহমদ জানান, করোনায় নগর পুলিশের অনেক সদস্য আক্রান্ত হয়েছে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ক্ষেত্র বিশেষে চেকপোস্টের কার্যক্রম কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রাদুর্ভাব চলছে। তবে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের পুলিশী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত অন্য সময়ের তুলনায় গত আগস্ট মাসে র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্টো অঞ্চলে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা বেশি ঘটেছে। অন্য সময়েল তুলনায় নগর পুলিশের মাদক উদ্ধার তুলনামূলক কম। সর্বশেষ গত সোমবার বার নগরীর বাকলিয়া ও আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকায় র্যাবের অভিযানে ২ লাখ ৬৫ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ইয়াবা পাচারের অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
জানা যায়, গত আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব-৭। বিগত সময়ের তুলনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মেট্টো অঞ্চলে তুলনামূলক বেশি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাহমুদুল হাসান জানান, গত জুলাই মাসে র্যাব ১ লাখ ৩২ হাজার ৭শ ২৮টি ইয়াবা উদ্ধার করেছে। আগস্ট মাসে উদ্ধার করেছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩শ ১৪টি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান জানান, গত আগস্ট মাসে ৩০ দিনের মধ্যে ২২ দিন ইয়াবা উদ্ধার করেছি। জুলাই মাসে ৫৩ হাজার ২১০ ও আগস্ট মাসে ৭৫ হাজার ৮শ ৪৫টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। দুই মাসে নগরীর বিভিন্ন থানায় ১শ ৪৮টি মামলা দায়ের করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
রাশেদ্জ্জুামান বলেন, হঠাৎ করে ইয়াবা পাচারকারীরা বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে এমনটি মনে হচ্ছে। অন্য সময়ের তুলনায় পাচার বেড়েছে। আমার ধারণা কক্সবাজার-টেকনাফ-চট্টগ্রাম রুটে পুলিশের চেকপোস্ট শিথিল রয়েছে। এ সুযোগে ইয়াবা পাচারকারীরা সক্রিয় হয়েছে।
নিজের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েতিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের ছয়টি সার্কেলে দুটি গাড়ি, ছয়জন পরিদর্শক ও ১৮ জন সিপাহী রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের কোন অস্ত্রও নেই। অনেকটা ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতো। তারপরও যতটুকু পারছি চেষ্টা করছি।
নগর পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, জুলাই মাসে সিএমপির বিভিন্ন থানায় ১ লাখ ১ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বিভিন্ন থানায় মামলা হয় ২৪০টি। আগস্ট মাসে ৪৪ হাজার ৩শ ৩৬টি ইয়াবা উদ্ধার করে নগর পুলিশ। নগরীর ষোল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের হয় ৭১টি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-