মাহাবুবুর রহমান ◑
কক্সবাজারের ঘরে ঘরে জ্বর সর্দির প্রকোপ বেড়েছে। কেবল শহরাঞ্চল নয় গ্রামে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে জ্বর সর্দি সহ মাথা ব্যাথার প্রকোপ। এতে হাসপাতাল গুলোতে রোগিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
এছাড়া বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল, ডাক্তারের চেম্বারেও রোগিদের ভিড় লেগে আছে। এতে অনেকে করোনা উপসর্গ হিসাবে আতংকিত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্ক মানুষরা বেশি আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। এদিকে এই সুযোগে ফার্মেসী গুলোতে জ্বর সর্দি সংশ্লিষ্ট ঔষধ গুলোর বাড়তি দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আর বাড়তি দাম না দিলে ঔষধ নাই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছে অনেক ফার্মেসী। এদিকে বর্তমান সময়ের জ্বর সর্দি সহ অসুখকে মৌসুমি বা ঋতু পরিবর্তন জনিত কারণে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সাধারণ মানুষকে আরো বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার আহবান জানান তারা।
ঝিলংজা হাজীপাড়া এলাকার ব্যবসায়ি আবদুল হামিদ জানান, ৩ দিন আগে বিকালে হঠাৎ করে শরীরে প্রচন্ড শীত অনুভব করে পুরু শরীর ব্যাথা হয়ে গেছে পরে গায়ে প্রচন্ড জ্বর আসায় আমি খুবই আতংকিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষনিক ডাক্তারের পরামর্শ মতে ঔষধ খাওয়া শুরু করলেও ৭২ ঘন্টা পরেও গায়ের জ্বর না কমাতে করোনা পরীক্ষা দিয়েছিলাম তবে করোনা পরীক্ষা নেগেটিভ এসেছে। এখন পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও গায়ে প্রচন্ড জ্বর আমি খুবই চিন্তায় এবং আতংকের মধ্যে আছি। তবে ডাক্তারের পরামর্শ মতে ঔষধ চালিয়ে যাচ্ছি।
পৌর এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের নুর হোসেন বলেন, আমার পরিবারের ৫ সদস্য সবার গায়ে গত সপ্তাহ থেকে জ্বর এখন জ্বর কিছুটা কমলেও ঠান্ডা সর্দি যাচ্ছেনা। তবে করোনা টেস্ট করাইনি তবুও সবাই ঘরে ছিলাম কোথাও বের হয়নি। তিনি জানান আমি খবর নিয়ে জেনেছি এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে জ্বর সর্দির প্রকোপ চলছে। কোন বাড়ি বাদ নেই জ্বরের রোগি ছাড়া। বয়স্ক থেকে শুরু করে শিশু পর্যন্ত কেউ বাদ নেই জ্বর ছাড়া, হঠাৎ করে কেন এমন হচ্ছে এতে মানুষ খুবই আতংকিত হয়ে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন বর্তমানে ফার্মেসীতে গেলে আগে জ্বর সর্দির ঔষধ যে দামে পাওয়া যেত সেই দামে পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়তি দাম রাখছে যেমন আগে যে এন্টিবায়টিক ১২০ টাকা নিত সেটা এখন ২৫০ টাকা রাখছে। নাপা, এইচ সহ সব ঔষধ দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।
ঈদগাও এলাকার সমাজ সেবক ছৈয়দ করিম বলেন, এলাকার প্রতিটি ফার্মেসীতে এখন রোগিদের ভীড় লেগে আছে, বেশির ভাগ রোগি জ্বর সর্দির। এমবিবিএস ডাক্তারতো আছেই এলাকার পল্লী চিকিৎসকদের চেম্বারেও মহিলাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বেশির ভাগই একই সমস্যা। কক্সবাজার গ্রাম ডাক্তার সমিতির সভাপতি ডাঃ চন্দন কান্তি দাশ বলেন, আমাদের চেম্বারে এখন যে রোগি আসছে তার মধ্যে ৯৫% জ্বর সর্দির রোগি। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। আমরা নিয়মত কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি মানুষকে সেবা দেওয়ার চেস্টা করছি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যারাই আসছেন অনেকে করোনা হয়েছে বলে আতংকিত হতে দেখা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আলী আহসান বলেন, আমাদের বেশির ভাগ কমিউনিটি ক্লিনিক সুত্রে জানা যাচ্ছে গ্রামে গঞ্জে জ্বর সর্দির ব্যাপক প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এতে কমিউনিটি ক্লিনিকে ঔষধ সংকট দেখা দিচ্ছে। তবে আমার মতে এটা সিজনাল সমস্যা, সময়মতো ঔষধ খেলে ভাল হয়ে যাচ্ছে। তাই আতংকিত না হয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শমত চিকিৎসা নিতে হবে।
সদর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে মানুষের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে করোনা দেশ থেকে চলে গেছে। মানুষের এই অবহেলা হয়তো এক সময় বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে তাই তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানান।
জেলা বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে যে জ্বরের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে সেটা মৌসুমী সমস্যা তবে শহরাঞ্চলে কিছুটা করোনার বিষয়ে সচেতনতা দেখা গেলেও গ্রামের মানুষের মধ্যে করোনা বিষয়ে একেবারে উদাসিন ভাব চলে এসেছে এটা ঠিক না। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোর ভাবে মেনে চলার এবং আতংকিত না হয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেন। আর অযথা এন্টিবায়টিক না খাওয়ারও পরামর্শ দেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-