সমুদ্রে সন্ত্রাস: রোহিঙ্গাদের ২০০ দিনের কঠোর পরীক্ষা

ডেস্ক রিপোর্ট ◑

বাংলাদেশে গাদাগাদি করে অবস্থান করা আশ্রয় শিবির থেকে শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থী পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়েছেন অর্থ। এসব শরণার্থীকে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এক সপ্তাহের মধ্যে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেবে। সেখানে তারা পাবেন এক নতুন জীবন। কিন্তু এর পরিবর্তে সমুদ্রপথে ২ শতাধিক দিনের মতো সময় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন শরণার্থীরা। উত্তাল সমুদ্রের মধ্যে তারা সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। অবশেষে এ সপ্তাহে তারা ইন্দোনেশিয়ার উত্তর উপকূলে অবতরণ করেছেন।

এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সেখানেও তাদের আশ্রয় হয়েছে শরণার্থী শিবিরে।

এসব শরণার্থী বলেছেন, তাদেরকে প্রহার করেছে পাচারকারীরা। কাঠের নৌকায় তাদেরকে খাবারের জন্য, পানীয়ের জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে। লড়াই করেছে ঝড়ো সমুদ্রের ভিতর। আর দেখেছে সন্ত্রাস। দেখেছে, কিভাবে মৃত মানুষকে বোট থেকে পানিতে ছুড়ে ফেলা হয়েছে। এসব শরণার্থীর এখন ঠাঁই হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে। বেঁচে যাওয়া এক পুরুষ শরণার্থী বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, আমাদেরকে বলা হয়েছিল, সাত থেকে আট দিনের মধ্যে মালয়েশিয়া পৌঁছে যাব। কিন্তু বাস্তবে আমাদেরকে বহনকারী বোট সমুদ্রে ভেসেছিল মাসের পর মাস। অবর্ণনীয় এক দুর্ভোগের শিকারে পরিণত হয়েছি আমরা। বোটের ক্রুরা সব সময় আমাদেরকে নির্যাতন করেছে, প্রহার করেছে।
কামরুন নাহার নামে আরেকজন বলেছেন, কত শিশুর মৃতদেহ সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়েছে তার হিসাব রাখতে পারেননি তিনি। নারী ও শিশুরা অসুস্থতায় একের পর এক মারা গেছেন।

জুনে ইন্দোনেশিয়া পৌঁছেছেন প্রায় ১০০ রোহিঙ্গা। মার্চে একটি বিশাল বোটে করে বাংলাদেশ ছাড়ে প্রায় ৮০০ রোহিঙ্গা। এ জন্য প্রতিজন পাচারকারীর হাতে তুলে দিয়েছে ২৪০০ ডলার পর্যন্ত। কিন্তু বিনিময়ে পাচারকারীরা তাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে আরো অর্থ আদায়ের জন্য জিম্মি করে। জাকার্তা ভিত্তিক ইন্সটিটিউট ফর পলিসি এনালাইসিস অব কনফ্লিক্ট (আইপিএসি) এক রিপোর্টে বলেছে, পাচারকারীরা ১২০০ ডলার পর্যন্ত দাবি করেছে শরর্থীদের কাছে। তাদের এই দুর্দশা সত্ত্বেও তাদের কাউকে কাউকে তুলনামুলক সুস্থ মনে হয়েছে। এর অর্থ পাচারকারীরা তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের স্বার্থে।

সর্বশেষ যারা ইন্দোনেশিয়া পৌঁছেছেন তারা বলেছেন,তাদেরকে সামান্য ভাত ও এক গ্লাস করে পানি দেয়া হয়েছে প্রতিদিন। এক্ষেত্রে একটি কৌশল নেয় পাচারকারীরা। মাছ ধরার ছোট ছোট বোট আসা-যাওয়া করতো। তারা খাদ্য ও পানি দিয়ে যেতো।

আইপিএসি বলেছে, এসব বোটে যে নারীরা থাকেন তাদের অনেকেই স্বপ্ন দেখেন মালশিয়ায় পৌঁছে তার রোমান্টিক পার্টনারকে খুঁজে পাবেন। এর মধ্যে অনেকেই ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন অথবা অন্য কোনভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্কে আবদ্ধ। তারাই এসব নারীর সফরের অর্থ সরবরাহ করেছে।

বড় যান থেকে ছোট ছোট নৌযানে করে অল্প অল্প করে শরণার্থীদের নামিয়ে উপকূলে নিয়ে যাওয়া পাচারকারীদের একটি সাধারণ কৌশল। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি ইউএনএইচসিআরের ইন্দোনেশিয়া প্রতিনিধি অ্যান মায়মান বলেছেন, এ বছরই সমুদ্রে মারা গেছেন প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা। তিনি এএফপিকে বলেন, এটা এক ভয়াবহ সফর। এটা অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। যারা গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন সম্ভবত তাদের পরিবার এ জন্য মূল্য দিয়েছেন।

যারা বেঁচে আছেন, তাদের দাবি কমপক্ষে ১০০ মানুষ মারা গেছেন। তবে তাদের দাবির যথার্থতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায় নি। তবে তাদের এই তথ্য ইউএনএইচসিআরের মতো আন্তর্জাজিত সংগঠনের রিপোর্টের সঙ্গে মিলে যায়। ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানোর পর এ সপ্তাহে একজন যুবতী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন অজ্ঞাত রোগে। তবে তাদের সবাইকে স্থানীয় পর্যায়ে পরীক্ষার পর করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, প্রায় ১০ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা মিয়ানমারে নৃশংসতার শিকার হয়ে বসবাস করছেন বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে গাদাগাদি করে। সেখানে মানব পাচারকারীরা তাদেরকে লোভনীয় কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফাঁদে ফেলছে।

আরও খবর