হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া ◑
উখিয়ায় রাজনীতির মাঠ সরগরম হতে শুরু করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাঠের রাজনীতি আর দলকে আরও সুসংহত করতে ইতিমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নেতাদের নিজ নিজ অবস্থান জানান দিতে দফায় দফায় বৈঠকে বসেছেন। দীঘদিন ধরে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি/সম্পাদক দু গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এতে দলীয় কোনো কর্মসূচি না থাকায় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও নেই তৃণমূলের কর্মীদের। তিন বছর মেয়াদি সে কমিটি ইতিমধ্যে পার করে দিচ্ছেন পাঁচ বছর। এহেন পরিস্থিতিতে গঠিত হয় সাত সদস্যের আহবায়ক কমিটি।
এতে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতি উখিয়া উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী কমিটি গঠন সংক্রান্ত বিষয়ে বিভ্রান্তি নিরসন করার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। ঝঞ্চাবিক্ষুব্ধ ওই সময়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে উখিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগকে সুদৃঢ মজবুত ভিতের উপর দাড় করাতে সক্ষম হই। ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় ২০১৫ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে আমাকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতায় সভাপতি পদে নির্বাচিত করে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রদান করেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির স্থলে একটি আহবায়ক কমিটি বা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রের আলোকে দলের প্রত্যেক স্তরে কার্যকরী ও নির্বাচিত কমিটি তৎপরবর্তী মেয়াদের কমিটি গঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমান সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের উপরই পরবর্তী সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের দায়িত্ব এবং এখতিয়ার। এমতাবস্থায় উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি মারাত্নকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। আবার তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেছেন, এরই মধ্যে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। একটি অংশ সরব থাকলেও অন্য একটি অংশ রাজনীতির মাঠে রয়েছে অনেকটাই নীরব-নিস্তব্ধ। নানাবিধ কারণেই রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও নিজেদের আওতাধীন উপজেলা সম্মেলন করে কমিটি দিতে পারেননি। তাই জেলা নেতৃবৃন্দ দু গ্রুপের বিবাদমান সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
অবশেষে কক্সবাজার জেলা শাখার পক্ষ থেকে শাহ আলম চৌধুরী প্রকাশ রাজা শাহ আলমকে আহবায়ক করে ৭ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির আহবায়ক রাজা শাহ আলম চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার জেলা শাখার পক্ষ থেকে দায়িত্ব পেয়ে আমরা দল ও নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে যাবো না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত কমিটি গঠনের নিয়ম অনুস্বরণ করে কক্সবাজার জেলা কমিটির দেয়া দায়িত্ব পালনে আমরা হাটছি। আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কক্সবাজার জেলায় পাঠিয়েছি। জেলা নেতৃবৃন্দ কমিটির অনুমোদনের ব্যাপারে কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে স্বচ্চ-পরিচ্ছন্ন একটি কমিটি উপহার দেবেন।
যোগ্য, ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন ক্লিন ইমেজের নেতা যদি আপনাদের দেয়া কমিটি থেকে বাদ পড়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে রাজপথ উত্তপ্ত হতে পারে সে ব্যাপারে আপনাদের করনীয় কী হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের হুমকি দিয়ে কোন লাভ হবে না। অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া দলকে ঢেলে সাজাতে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসবে। সেই লক্ষ্যেই ইতিমধ্যে আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছি।
একটি গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন সংগ্রাম করার সবার অধিকার রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে বিষয়টি জেলা কমিটি দেখবেন। ইতিমধেই নড়েচড়ে বসেছে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা।
সম্মেলন বা কমিটি গঠন নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক তোড়জোড়। দলের নেতাকর্মীদের মাঝে সমন্বয় না থাকায় উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক জৌলুস হারাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক ত্যাগী নেতা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন,
১ লা ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে গত ২৭ জুলাই জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী প্রকাশ রাজাকে আহবায়ক, আদিল উদ্দিন চৌধুরী, মাহমুদুল হক চৌধুরী, আবুল মনসুর চৌধুরী, কামাল উদ্দিন মিন্টু, নুরুল হুদা ও আলী হোসেন খানকে যুগ্ন-আহবায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি অফিসিয়াল চিঠি ইস্যু করা হয়।
আমার সাক্ষরে প্রেরিত এ কমিটি নিয়ে অনেকেই নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আমি সকলের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই, জেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে এই কমিটি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই।
ইতিমধ্যে ঘোষিত ৭ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ৩৩ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা জেলা আওয়ামীলীগ বরাবর প্রেরণ করেছে। যাচাই বাছাই শেষে আজ কালের মধ্যে এ কমিটির চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-