কোটবাজার-ভালুকিয়া সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দেয়া হচ্ছে মাটি মিশ্রিত বালু! 

ফারুক আহমদ, উখিয়া ◑
কোটবাজার ভালুকিয়া সড়ক নির্মাণে পাহাড়ি মাটি মিশ্রিত বালু ব্যবহার করার দৃশ্য

উখিয়ার জনগুরুত্বপূর্ণ কোটবাজার ভালুকিয়া সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। উন্নয়নের নামে সরকারি পাহাড় কর্তন করে মাটি মিশ্রিত বালু  ব্যবহারে করছে এমন অভিযোগ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

সংবদ্ধ মাটিখেকো সিন্ডিকেট রাতের আধারে অবৈধভাবে পাহাড় কর্তন করে ডাম্পার যোগে মাটি সরবরাহ করছে। বিষয়টি  তদন্তের দাবী করেছেন সুশীল সমাজ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে উখিয়া  উপজেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে জরুরি সহায়তা কর্মসূচীর আওতায়  এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ব্যাংকের (এডিবি)অর্থায়নে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে কোটবাজার-ভালুকিয়া, ভালুকিয়া ও রত্নাপালং কামারিয়ার বিল সড়কে কার্পেটিংসহ সংস্কার ও প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে।

স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। তৎমধ্যে ভালুকিয়া সড়কের চৌমুহনী হতে ৬শ মিটার আরসিসি ঢালাই হবে।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার কলাবাগান  ঠিকানার নবারুণ ট্রেডার্স নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্টান প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করার জন্য দায়িত্ব পান।

ভালুকিয়া রোডের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিক আহমদ সওদাগর জানান, সড়কের নির্মাণ কাজের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির দৃশ্য চোখে পড়ার মত।  সরকারি সিডিউল বহির্ভূতভাবে যেনতেন ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

চৌধুরী মার্কেটের পালং লাইব্রেরীর মালিক বিজন বড়ুয়া অভিযোগ করে বলেছেন, বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের লাল মাটি যুক্ত বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। যার প্রমাণ বৃষ্টি  হলেই কাদায় মাটিতে সয়লাব  হয়ে যায়।

খোন্দকার পাড়া গ্রামের ফিরোজ আহমদ সওদাগর জানান, ৬০০ মিটার দৈর্ঘ্য সড়কের নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে বিগত দুই মাস যাবত গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

অনেক ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্দ কন্ঠে বলেছেন, ঠিকাদারের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে উন্নয়ন কাজ ধীরগতি হওয়ায় ব্যবসার  মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিন রাতের আধারে অসংখ্য ডাম্পার যোগে পাহাড়ি মাটি মিশ্রিত বালু রাস্তায় দেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগে প্রকাশ, ভালুকিয়া গ্রামের ভূট্টু এনাম ও শফি সিন্ডিকেট পাহাড়ি মাটি যুক্ত বালু ঠিকাদারকে সরবরাহ করছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ভুট্টো ও এনাম বালু সরবরাহ করছে বলে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারের সাথে চুক্তি করে কম দামে তারা মাটি মিশ্রিত বালু দিচ্ছে।

খোঁজখবর নিয়ে নিয়ে জানা গেছে, ইনানী রেঞ্জের জালিয়াপালং বনবিটের আওতায় জুম্মাপাড়া এলাকার সরকারি পাহাড় ও সামাজিক বনায়নের বনকর্তন করে পাহাড়ি মাটি মিশ্রিত বালু সরবরাহ করা হচ্ছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, জালিয়াপালং জুম্মাপাড়া ও সোনাই ছড়ি বনাঞ্চলের অন্তত ২০ টি  পাহাড় কর্তন করে সাবাড় করা হয়েছে।

সচেতন মহলের অভিমত, সরকারি উন্নয়নকাজে সংরক্ষিত সরকারি পাহাড় কর্তন করে মাটি মিশ্রিত বালু ব্যবহার কতটুকু যৌক্তিক।

সুধীজনের মতে, একদিকে উন্নয়ন করা হলেও অপরদিকে উন্নয়নের নামে পাহাড় কর্তন করে পরিবেশ ধ্বংস করা খুবই দুঃখজনক। এটি মেনে নেয়া যায় না। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সর্বমহলে দাবি উঠেছে।

এদিকে রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী নিজ ফেসবুক ওয়ালে অভিমত প্রকাশ করে বলেন, কোন অবস্থাতে কোট বাজার  ভালুকিয়া সড়কের নির্মাণ কাজে অনিয়ম সহ্য করা হবে না। তিনি সরকারি সিডিউল মোতাবেক গুণগত মান বজায় রেখে কাজ সম্পন্ন করার জন্য দাবি জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম জানান, বালুর গুণগত মান পয়েন্ট ফাইভ পার্সেন্টেজ হলেই সড়কের উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের উপযোগী।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবহৃত বালু পাহাড়ের না খালের তা আমাদের দেখার বিষয় নই। কেবল কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটি  থাকলেই হয়। তবে তিনি আগামীকাল সোমবার টেকনিক্যাল পার্সনদের একটি  টিম কাজের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য সরেজমিন পরিদর্শন করবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

সচেতন নাগরিক সমাজের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের সংশ্লিষ্ট অফিসার কিংবা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তার অনুপুস্থিতিতে ঠিকাদার শ্রমিক দিয়ে ইচ্ছামত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসীর দাবি, সহকারী প্রকৌশলী উপস্থিত থেকে সিডিউল মোতাবেক কাজ সম্পন্ন  করতে হবে।

আরও খবর