ডেস্ক রিপোর্ট ◑ মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পর টেকনাফ থানা থেকে সাময়িক বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে একের পর এক হত্যার অভিযোগ। পুলিশ প্রশাসনের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আজ বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) হত্যার অভিযোগে অষ্টম মামলা দায়ের হয়েছে চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
দুই ভাইকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি ও গুলি করে হত্যার অভিযোগ এনে সাময়িক বরখাস্ত টেকনাফ থানার বিতর্কিত ওসি প্রদীপসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) তাদের ছোট বোন রিনাত সুলতানা শাহীন বাদী হয়ে চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমীর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া আহসান হাবীব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘রিনাত সুলতানা শাহীন এ হত্যাকাণ্ডে ওসি প্রদীপসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এএসপিকে (আনোয়ারা সার্কেল) তদন্ত করে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’
মামলার অপর আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার উপ-পরিদর্শক ইফতেখারুল ইসলাম, কনস্টেবল মাজহারুল, দ্বীন ইসলাম ও আমজাদ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাদীর ছোট ভাই আজাদুল ইসলাম আজাদ (২৩) দীর্ঘদিন যাবত বাহরাইনে কর্মরত ছিলেন। ৫ বছর পর ২০১৮ সালের জুন বা জুলাই মাসে (ওই সময়ের হিজরি সনের ৬ই রমজান) তিনি বিদেশ থেকে ফেরেন। বড় ভাই আমানুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক (৩৭) দেশে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে পেয়ারা চাষ করতেন। আজাদ দেশে আসার সময় বেশ কিছু টাকা পয়সা নিয়ে এসেছেন এমন সংবাদ কিছু পুলিশের সোর্সের মাধ্যমে তৎকালীন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কাছে যায়। এরপর প্রদীপ তাকে অপহরণপূর্বক মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ের পাঁয়তারা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চন্দনাইশের কাঞ্চননগর রৌশন হাট ফকির পাড়ার সামনে রাস্তা থেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে আসামিরা তাকে চন্দনাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত)-এর সহযোগিতায় গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর গত ১৫ জুলাই ২০১৮ সালে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা একটি মামলায় তার বড় ভাই আমানুল ইসলাম ফারুককে বিজিসি ট্রাস্ট সংলগ্ন সালাম সাহেবের বিল্ডিংয়ের ৫ম তলার বাসা থেকে চন্দনাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত)সহ আরও ৫ জন তাকে গ্রেফতার করে টেকনাফ থানায় নিয়ে যায়। পরে ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে আজাদের মোবাইল ফোন থেকে তার মায়ের মোবাইলে একটি মেসেজ আসে ‘মা আমি শেষ’। পরে রাত ১টার দিকে একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে কল করে তাদের কাছে ৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অন্যথায় ফারুক ও আজাদকে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর ১৬ জুলাই সকাল ৭টায় প্রদীপ কুমার দাশ বাদীর মায়ের মোবাইলে কল করে ফারুক ও আজাদের মরদেহ চিহ্নিত করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। পরে আমার মাসহ পরিবারের লোকজন গিয়ে আমরা তাদের মরদেহ নিয়ে আসি। তারা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে বলে আমাদের জানানো হয়।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের টেকনাফ থানা থেকে বরখাস্ত হয়ে গ্রেফতার হওয়া ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে আজ আরও দুটিসহ মোট সাতটি হত্যা মামলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের আদালত এবং টেকনাফ থানায় দায়ের হয়েছে। গত ৬ আগস্ট মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার আগে প্রবল প্রতাপধারী এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিপীড়িত হয়েও মামলা করার সাহস কেউ করতে পারেনি বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। তিনি মারিশবুনিয়ার একটি পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ফেরার সময় এ ঘটনা ঘটে। এরপর গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আসামি ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে, সিনহা হত্যার পর পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব। এছাড়া হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও তিন এপিবিএন সদস্যকে গ্রেফতার করে এলিট ফোর্সটি। অপরদিকে একই ঘটনায় টেকনাফ থানায় দুইটি ও রামু থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। সাক্ষী অপহরণের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় পরে আরেকটি মামলা হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-