আটকের ৮ মাস পর দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় ‘ক্রসফায়ারের’ শিকার হন জলিল

শাহেদ মিজান ◑

১০ লাখ টাকা দাবি করে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আরো পাঁচ লাখ টাকা না দেয়ায় টেকনাফের আবদুল জলিল নামের এক সিএনজি অটোরিক্সা চালকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যার অভিযোগ করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আরো একটি হত্যা মামলার এজাহার দায়ের করা হয়েছে। দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা না পেয়ে আটকের আট মাস জলিলকে ক্রসফারে হত্যা করা হয় বলে বাদি দাবি করেছেন।

নিহত আবদুল জলিল উপজেলার হ্নীলা পশ্চিম মহেশখালীয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট টেকনাফ আদালতে এজাহারটি দায়ের করা হয়। বেলা ৩টার দিকে শুনানী শেষে এজাহারটি রুজু না করে ওই ঘটনায় অন্য কোনো হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে কিনা তা জানাতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নিহত আবদুল জলিলের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম বাদি হয়ে এই এজাহার দায়ের করেন। বাদি পক্ষের আইনজীবি মনিরুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

এজাহারে বাদি জানান, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর পারিবারিক কাজে কক্সবাজারে অবস্থানকালে জেলা ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা মানস বড়ুয়ার নেতৃত্বে একদল সাদা পোশাকধারী আল ফুয়াদ হাসপাতালের সামনে থেকে আবদুল জলিল ও তার সাথে থাকা রফিক উল্লাহ একজন আটক করে। এরপর পর তাকে টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

আটকের ১২ দিন পর একটি জিআর মামলা করে রফিক উল্লাহকে আদালতে প্রেরণ করা হলেও আবদুল জলিলকে ছাড়া হয়নি। কিন্তু আটকের তিন মাস পর্যন্ত আবদুল জলিলের কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার। এর মধ্যে গত ৩ মার্চ হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান জলিলের বাড়িতে গিয়ে তাকে ক্রসফায়ারে না দেয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।

১৬ মার্চ ৫ লাখ টাকা আদায় করেন আসামীরা। আটকের স্বীকার করলেও ৫ লাখ টাকা নেয়ার দুই তিন মাসও জলিলকে আদালতে পাঠায়নি পুলিশ। এর মধ্যে গত ১০ জুলাই জলিলকে টেকনাফ থানা হেফাজতে রয়েছে জানতে পারে পরিবার।

তারপরও বহুবার তদবির করেও আবদুল জলিলকে আদালতে তোলা হয়নি। এর মধ্যে গত ৭ জুলাই রাতে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কম্বনিয়া বড় ছড়া এলাকায় এনে সিএনজি চালক আবদুল জলিলকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয় বলে বাদি এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

মামলায় টেকনাফ হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানকে প্রধান আসামী এবং বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ করা হয়। ১২ আসামীদের মধ্যে ১১ জন পুলিশ সদস্য এবং অন্যজন স্থানীয় দফাদার নূরুল আমিন।

অন্যান্য আসামীরা হলেন- এএসআই আরিফুর রহমান, এসআই সুজিত চন্দ্র দে, জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক মানস বড়ুয়া, এসআই অরুণ কুমার চাকমা, এসআই নাজিম উদ্দিন, এসআই মোঃ নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া, এএসআই রাম চন্দ্র দাশ, কনস্টেবল সাগর দেব, কনস্টেবল রুবেলে শর্মা, হোয়াক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার, কাঞ্জর পাড়ার মৌলভী সিরাজুল ইসলাম এর পুত্র মোঃ আমিনুল হক।

আরও খবর