মাহাবুবুর রহমান ◑
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা স্থানীয়দের সাথে মিশে গেছে বলে ধারণা করছেন খোদ রোহিঙ্গা নেতারা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে আসা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন অনুযায়ী বর্তমানে ২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার কোন হসিদ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সংশ্লিষ্টদের দাবী এসব রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের সাথে মিশে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে আবার অনেকে ইতোমধ্যে জমি কিনে অথবা বিয়ে করে আত্বীয়তার বন্ধনে স্থানীয়দের সাথে মিশে গেছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নিবন্ধন হয়েছিল ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন রোহিঙ্গার। তবে বর্তমানে আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলোর সমন্নিত ইন্টারসেক্টর গ্রæপ (আইএসসিজি) এর তথ্য মতে বর্তমানে ক্যাম্পে রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ৫ হাজার ৮২২ জন। সে হিসাবে বর্তমানে প্রায় ২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার হদিস নেই। এ প্রসঙ্গে খোদ রোহিঙ্গা নেতাদের দাবী বেশির ভাগ রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে স্থানীয়দের সাথে মিশে গেছে।
আলাপকালে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি নুরুল আমিন জানান,লেদা ক্যাম্প হচ্ছে পুরাতন রেজিস্ট্রাট ক্যাম্প এখানে ২০১৭ সালের পরে আরো অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গা এসেছিল তবে এখন অনেকেই নেই। আমরা খবর পেয়েছি তারা কক্সবাজার শহর, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, সাতকানিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি এমনকি অনেকেই ঢাকা পর্যন্ত চলে গেছে। বিশেষ করে মায়ানমারে কিছুটা টাকা পয়সা ওয়ালা লোক ক্যাম্পে নাই তারা পূর্বের আত্বীয় স্বজনের মাধ্যমে জমিজমা কিনে আবার অনেকে বিয়েশাদী করে স্থানীয়দের সাথে থাকে।
কুতুপালং ১৫ নং ক্যাম্পের বশির আলম বলেন, প্রথম দিকে আসা অনেকে এখন নাই তারা কোথায় কেউ জানেনা। তবে মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসে সে হিসাবে জেনেছি তারা বেশির ভাগ স্থানীয় মানুষ জনের সাথে বসবাস করে মাঝে মধ্যে এখানে বেড়াতে আসে। আবার অনেকে এখানে তালিকাভুক্ত তারাও ক্যাম্পের বাইরে থাকে।
এদিকে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী, বর্মাপাড়া, হালিমাপাড়া, ইসলামপুর, বাদশাঘোনা, খাজামঞ্জিল, বৈদ্যঘোনা সহ বহু এলাকায় স¤প্রতি বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা এসে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে অনেক স্থানীয় ছেলে ক্যাম্প থেকে মেয়ে এনে বিয়ে করে তাদের আত্বীয় স্বজন করে এলাকায় বসবাস করছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
আলাপ কালে কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলার হেলাল উদ্দিন কবির বলেন, এলাকাতে অসংখ্য রোহিঙ্গা আগে থেকে ছিল এখন আরো নতুন করে এসেছে। তারা প্রথমে কিছুদিন ঘর থেকে বের হয়না পরে আস্তে আস্তে বের হয়ে স্থানীয় লোকজনের পরিচয় দিয়ে তাদের মেহমান হিসাবে। মূলত শক্ত কোন আইন না থাকায় আমরাও ইচ্ছা থাকলেও কিছু করতে পারিনা। কোন রোহিঙ্গাকে ধরে থানায় দিলে থানা নিতে চায় না। কারণ তারাও কোন আইনে তাকে গ্রেফতার দেখাবে ? আবার তাদের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোও অনেক ঝামেলা মনে করে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের পক্ষে অনেক তদবিরকারী বের হয়ে যায় বিশেষ করে উচ্চ পর্যায় থেকে এনজিওর কর্মকর্তরা যোগাযোগ করে ছাড়িয়ে নেয় তখন আমরা হেয়প্রতিপন্ন হয়ে পড়ি। ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম জানান, গত বছর আমি নিজে কয়েক দফায় ২০/৩০ জন রোহিঙ্গা ধরে দিয়েছিলাম। আমি বাড়িতে যাওয়ার আগে তারা থানা থেকে চলে এসেছে এতে উল্টো আমি লজ্জা পেয়েছি। তাই এখন আর রোহিঙ্গা ধরিনা। পাহাড়তলী সমাজ কমিটির মোহাম্মদ রফিক বলেন, কোন রোহিঙ্গাকে ধরলে সে বলে আমাকে থানায় দেন। কারণ সে জানে থানায় দিলে তার কিছুই হবে না। তাই কোন স্থানীয় মানুষ এগুলো নিয়ে মাথা ঘামায় না। তবে একটা কথা ঠিক স্থানীয়রা আশ্রয় পশ্রয় না দিলে রোহিঙ্গারা এত বেপরোয়া হতে সাহস পেতনা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন কক্সবাজার জেলা কমিটির সহ সম্পাদক মোহাম্মদ জাবের জানান, শুধু কক্সবাজার শহরে নয় জেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে এবং পার্শবর্তি জেলাতেও রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়েছে তাই আমাদের দাবী সরকারি ভাবে জরিপ করে ক্যাম্পের বাইরে থাকা এবং আগে আসা রোহিঙ্গাদের তালিকা করে তাদের জন্য বিশেষ রোহিঙ্গা লেখা আইডি কার্ড করার দাবী জানাচ্ছি। এতে কারা রোহিঙ্গা সেটা মানুষ বুঝতে পারবে। একই মত দিয়ে আইনজীবি এড. তাপস রক্ষিত বলেন, এভাবে গা ছাড়া দিয়ে একটি দেশ চলতে পারেনা। রোহিঙ্গারা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি তাই ক্যাম্পের বাইরে থাকা এবং ২০/৩০ বছর আগে আসা রোহিঙ্গাদের জরিপ করে তালিকাভুক্ত করে চিহ্নিত করা দরকার। তিনি বলেন,স¤প্রতি অনেক আইনজীবির মধ্যে আগে আসা রোহিঙ্গার ছেলেমেয়ে দেখা যাচ্ছে এতে আমরা খুবই হতাশ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-