রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইয়াবা লেনদেনের নিরাপদ ঘাঁটি!

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল ◑
কিছুতেই বন্ধ হচ্ছেনা মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ইয়াবার আগ্রাসন! কারণ পাচার কাজে জড়িত অপরাধীরা প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে তাদের অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। এদিকে মাদক পাচারে অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসাবে খ্যাত পর্যটন নগরী টেকনাফ থেকে মাদক পাচার প্রতিরোধ করার জন্য বিগত কয়েক বছর ধরে,
সংশ্লিষ্ট আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক যতই কঠোর হচ্ছে, ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে ইয়াবা পাচার!

তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই মরননেশা ইয়াবা পাচার বন্ধ করার জন্য অত্র উপজেলার দায়িত্বরত আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে কোটি, কোটি ইয়াবা উদ্ধার এবং পাচার কাজে জড়িত শত শত অপরাধীকে আটক করেছে।

আবার অভিযান চলাকালিন সময়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুই শতাধিক অপরাধী মারা যায়। পরিসংখানে দেখা যায়,
চল যাই যুদ্ধে,মাদকের বিরুদ্ধে এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মাদক বিরোধী অভিযান চলাকালীন সময়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রানে মারা যায় ২০৪ জন অপরাধী।

এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ১২৩ জন,
তাদের মধ্যে ৩৭জন রোহিঙ্গা নাগরিক। বিজিবির গুলিতে মারা যায় ৫০জন,এদের মধ্যেও বেশীর ভাগ রোহিঙ্গা।

আবার র‍্যাবের সাথে গোলাগুলিতে মারা যায় ২৫ জন অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী।

আইন-শৃংখলা বাহিনীর কঠোর অভিযান থেকে নিজেকে বাঁচাতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৈরী করা তালিকাভুক্ত প্রায় দেড় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী অন্ধকার জগৎ ছেড়ে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করে।

দীর্ঘ দেড় বছর ধরে কারাগারে মানবেতর জীবন পার করছে তারা। এদিকে চলমান মাদক বিরোধী কঠোর অভিযান উপেক্ষা করে মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লুকিয়ে থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলে নাফনদী ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে পাচার করে নিয়ে আসছে বস্তা বস্তা ইয়াবা।

মাদক বিরোধী চলমান অভিযানের কঠোরতা বুঝতে পেরে স্থানীয় মাদক কারবারীরা ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করে দিলেও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা টেকনাফ উপজেলায় বসবাসরত শত শত রোহিঙ্গা নর-নারী বিভিন্ন কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা পাচার।

পাচার অব্যাহত থাকার পিছনে এক মাত্র কারণ হচ্ছে, মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ইয়াবা গুলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার কাজে সহযোগীতা করে যাচ্ছে, ক্যাম্প গুলোতে বসতি স্থাপন করা রোহিঙ্গা এবং বর্তমান বাংলাদেশের নাগরিক সাবেক মিয়ানমার নাগরিক।
এদের মধ্যে অনেকেই এখন বাংলাদেশের নাগরিক।
এদিকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কঠোর অভিযানের মধ্যেও ইয়াবা পাচার বৃদ্ধি হওয়ার কারন অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ইদানিং ইয়াবা পাচার নিয়ন্ত্রনে সক্রিয় ভাবে ভুমিকা পালনকারী অপরাধী হচ্ছে, রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে আশ্রয় নেওয়া অর্থলোভী রোহিঙ্গা চক্র।

এদিকে ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে বিগত কয়েক বছর ধরে টেকনাফ সীমান্তে কর্মরত প্রহরী বিজিবি সৈনিকরা মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় কোটি কোটি টাকা মুল্যের লক্ষ লক্ষ ইয়াবা। এবং আটক করতে সক্ষম হয় ইয়াবা পাচারে জড়িত অপরাধীদের।

তথ্য সূত্রে দেখা যায়, আটককৃত বেশীর ভাগ মাদক ব্যবসায়ী হচ্ছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নর-নারী।

কক্সবাজার র‍্যাব-১৫ অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহাম্মেদ বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে আগস্ট মাসের এপর্যন্ত উখিয়া-টেকনাফে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ অত্র জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব সদস্যরা প্রায় ২৪ লক্ষ ইয়াবা উদ্ধারসহ দুই শতাধিক মাদক কারবারীকে আটক করতে সক্ষম হয়। তার মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রায় ৬ লাখ পিচ ইয়াবাসহ ৭০ জন রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র‍্যাব।

অপরদিকে টেকনাফ ২ বিজিবি সদস্যরা টেকনাফ উপজেলা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে চলতি বছরের মাত্র ৮ মাসের ব্যবধানে ৩৮ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পাশাপাশি মাদক কারবারে জড়িত ১৩৪জন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করতে সক্ষম হয় বিজিবি।

ইয়াবাসহ আটক বেশীর ভাগ অপরাধী হচ্ছে,মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা।

এ সমস্ত অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান (পিএসসি) বলেন, মিয়ানমারে উৎপাদিত মরন নেশা ইয়াবা পাচার প্রতিরোধ করতে সীমান্ত প্রহরী বিজিবি সৈনিকরা দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

তবে মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা পাচার অব্যাহত রাখার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন কর
মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ইয়াবা চালান গুলোর সাথে জড়িত বেশীর ভাগ অপরাধী হচ্ছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের বসবাসকৃত রোহিঙ্গারা। ইদানিং মাদক কারবারে জড়িত রোহিঙ্গাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক পাচার অব্যাহত রাখতে রোহিঙ্গা অপরাধী চক্র নানামুখি কৌশল অবলম্বন করছে।

তাদের সেই অপচেষ্টা প্রতিহত করার জন্য আমাদের সৈনিকরা সদা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও খবর