বাংলা ট্রিবিউন ◑
আজ ২৫ আগস্ট, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ঢলের তৃতীয় বছর। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে রোহিঙ্গারা। প্রায় ১১ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা এখন উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ৩৪টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। কিন্তু, দীর্ঘ তিন বছরেও কূটনৈতিক জটিলতা আর কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। কবে থেকে তা শুরু করা যাবে সে বিষয়টিও অনিশ্চিত।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার অভিযোগ এনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর শুরু করে গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ। তাদের বর্বর অত্যাচার ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিতে শুরু করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা।
পর্যায়ক্রমে উখিয়া টেকনাফের প্রায় ১০ হাজার একর গভীর বনাঞ্চলে ৩৪টি ক্যাম্পে বর্তমানে ১১ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। বাংলাদেশ সরকার এবং ‘ইউএনএইচসিআর’-এর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এসব রোহিঙ্গাকে খাদ্য, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস ৩৪টি শরণার্থী শিবিরে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর বাংলাদেশ সরকার প্রথমে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়।
ইতোমধ্যে দু’দফা তারিখ দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা চালিয়েও রোহিঙ্গাদের অনড় মনোভাবের কারণে প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গাদের দাবি, তাদের অধিকার ফিরিয়ে না দিলে মিয়ানমারে ফিরে যাবে না তারা।
উখিয়ার কুতুপালং টিভি টাওয়ার সংলগ্ন ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘আমার দেশ মিয়ানমার। আমরা মিয়ানমারের পূর্ণ নাগরিকত্ব চাই। চাই জীবনের নিরাপত্তা। নিজ দেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে চাই। সন্তানদের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। এসব সুবিধা নিশ্চিত করলে আমরা দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যাবো, না হয় বাংলাদেশেই জীবন দিয়ে দেবো।’
উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-২ ব্লকের সিরাজ মিয়া বলেন, ‘মিয়ানমারের কথা বিশ্বাস করতে নেই। তারা ধোঁকাবাজ। আজ এক কথা, আবার পরে আরেক কথা বলে। মুহূর্তে তাদের রূপ পাল্টায়। আন্তর্জাতিক মহলের এত চাপের মুখেও তারা এখনও মাথানত করেনি। আমার বিশ্বাস হয় না তারা আমাদের ফিরিয়ে নেবে। যদি আমাদের ফিরিয়েও নেওয়া হয়, তাহলে নাগরিকত্ব তো দূরের কথা, রাখাইনে ক্যাম্পের মধ্যেই বন্দিজীবন কাটাতে হবে আমাদের।’
উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা আবুল ফয়েজ মাঝি বলেন, ‘আজ তিন বছর কেটে যাচ্ছে, আমাদের ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন দেখছি না। রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এত মানুষ মারলো, অথচ তাদের কোনও বিচার হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আজও নীরব।’
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে ভাটা পড়েছে। তার ওপর মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা থমকে আছে। কূটনৈতিক জটিলতা থাকলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের এক নম্বর এবং একমাত্র চাওয়া হলো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। মিয়ানমার যখনই চাইবে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত রয়েছে।’
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত নানা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও সামাজিক অর্থনৈতিক কারণে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যাক, এটাই কামনা স্থানীয়দের।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-