অনলাইন ডেস্ক ◑ গত বছর নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলা করে ৫১ জনকে হত্যা করা হয়। নৃশংস এ হত্যার ঘটনার শুনানিতে বেরিয়ে এসেছে আরো অনেক তথ্য।
বিবিসির খবরে বলা হয়, মসজিদে আগুন ধরিয়ে দিয়ে যত বেশি সম্ভব মানুষকে হতাহত করার পরিকল্পনাও ছিলো অভিযুক্ত হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্টের। এছাড়া নিউজিল্যান্ডে আরো মসজিদে হামলার উদ্দেশ্য ছিলো তার।
অস্ট্রেলিয়ান ওই নাগরিক ৫১ জনকে হত্যা, ৪০ জনকে হত্যার চেষ্টা এবং সন্ত্রাসবাদের একটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। হামলার সময় ব্রেন্টন টারান্টের বয়স ছিল ২৮ বছর। এখন ২৯।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সোমবার থেকে শুনানি শুরু হয়েছে। শুনানি চলবে চারদিন।
করোনা মহামারির কারণে এদিন আদালত কক্ষ প্রায় খালি ছিলো। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভিডিও ফিডের মাধ্যমে শহরের অন্যান্য আদালত কক্ষে হাজার হাজার মানুষ বিচারের কার্যক্রম দেখছে।
ধুসর রঙের পোশাক এবং তিনজন পুলিশ কর্মকর্তার বেষ্টনীতে বন্দুক হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্ট আদালতে পুরো সময় চুপচাপ ছিলেন। মাঝে মাঝে তিনি রুমের অন্যত্র বসে থাকা বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি এবং হতাহতদের স্বজনদের দিকে তাকিয়ে দেখছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বার্নাবি হাওয়েজ আদালতকে বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ডের মসজিদ সম্পর্কে হামলাকারী তথ্য সংগ্রহ করে। মসজিদের নকশা, অবস্থান এবং আরও বিস্তারিত সব তথ্য সংগ্রহ করে। মসজিদে হামলার জন্য বন্দুকধারী বহু বছর ধরে পরিকল্পনা করছিলো।’
মসজিদে হামলার আগে ব্রেন্টন টারান্ট ক্রাইস্টচার্চ শহর পরিদর্শন করেন। তার প্রাথমিক লক্ষ্য স্থল আল নূর মসজিদের ওপর একটি ড্রোন উড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করেন।
আল নূর মসজিদ এবং লিনউড ইসলামিক সেন্টারে হামলার পর তার অ্যাশবার্টন মসজিদে হামলার পরিকল্পনা ছিলো। তৃতীয় মসজিদে যাবার পথে তাকে আটক করা হয়।
আদালতে আরও বলা হয়, আল নূর মসজিদের বাইরে যারা নিরাপদ আশ্রয়ে লুকানোর চেষ্টা করছিলেন, তাদের ওপরেও গুলি চালায় ব্রেন্টন টারান্ট।
যাদের একজন ছিলেন আনসি আলিবাভা। আহত হয়ে মসজিদের বাইরে পড়ে থাকা তার শরীরের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্ট।
আদালতে জানানো হয়, টারান্ট যখন গাড়ি চালিয়ে লিনউড ইসলামিক সেন্টারের দিকে যাচ্ছিলেন, গাড়ি থামিয়ে পলায়নপর একজন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ব্যক্তিকে গুলি করেন। একজন ককেশীয় ব্যক্তির দিকেও তিনি বন্দুক তাক করেন, পরে হেসে গাড়ি চালিয়ে চলে যান।
অভিযুক্ত হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্ট।
আদালতে নিজের পক্ষে নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন ব্রেন্টন টারান্ট। প্রথম দিকে তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিলেন। তবে বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে তিনি সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দোষ স্বীকার করেন।
ব্রেন্টন টারান্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। যেখানে কোনরকম প্যারোলের সুযোগ থাকবে না। এর আগে নিউজিল্যান্ডে এরকম সাজা আর কাউকে দেওয়া হয়নি।
এদিকে এই সাজার রায় দেখার জন্য হতাহতদের অনেক স্বজন বিদেশ থেকেও এসেছেন। যাদের নিউজিল্যান্ডে এসে কোয়ারেন্টাইনেও থাকতে হয়েছে।
গত বছরের ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে বন্দুক নিয়ে গুলি করতে শুরু করে ওই হামলাকারী। গুলি করার দৃশ্য সে সরাসরি অনলাইনে প্রচার করে।
জুমার নামাজের সময় আল নূর মসজিদে সে প্রথম হামলা করে। এরপর গাড়ি চালিয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরের লিনউড মসজিদে গিয়ে আবার হামলা করে আরও মানুষ হত্যা করে।
সেই সময় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা ক্রাইস্টচার্চে অবস্থান করছিলেন। দলের কয়েকজন সদস্য হামলার শিকার হওয়া একটি মসজিদে নামাজও পড়তে গিয়েছিলেন। তবে সৌভাগ্যক্রমে তারা বেঁচে যান।
এই হামলায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে যায়। এরপর নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইনেও পরিবর্তন আনা হয়।
এদিকে শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, ব্রেন্টনের কী সাজা হয়, তার দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ফের সমস্ত নিহতের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। সূত্র: বিবিসি ও ডয়েচে ভেলে
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-