গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল ◑
টেকনাফ বাহারছড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের উপর পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থলে সেই দিনের নির্মম ঘটনার বর্ণনা দিলেন সিনহার বোনের দায়ের করা হত্যা মামলার ওসি প্রদীপসহ প্রধান তিন আসামি।
সূত্রে জানা যায়, ২১ আগস্ট(শুক্রবার) দুপুরের দিকে সিনহা হত্যা মামলার প্রধান তিন আসামীকে টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়ন শামলাপুর (এপিবিএন)’র সেই আলোচিত চেকপোস্টে মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলার প্রধান তিন আসামিকে নিয়ে (শুক্রবার) দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজার র্যাব-১৫ কার্যালয় থেকে কড়া নিরাপত্তায় মাধ্যমে কক্সবাজার-টেকনাফ পুরাতন মহাসড়ক দিয়ে তাদেরকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক সিনহা হত্যার ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।
র্যাব সূত্রে জানায়, তদন্ত কাজের অংশ হিসেবে মামলার প্রধান আসামি টেকনাফ থানার সাবেক (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ,বাহারছড়ার শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয়।
এ সময় সিনহা হত্যার আলোচিত সমালোচিত ওসি প্রদীপসহ তিন পুলিশ সদস্যকে এক নজর দেখার জন্য স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় করেন। তিন আসামীকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষন করার পর শামলাপুর চেকপোস্টের সামনে গণমাধ্যম কর্মীদের র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, ‘মেজর সিনহাকে গুলি বর্ষণের পুরো ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যে। এই দুই মিনিটের প্রতিটি সেকেন্ডের ঘটনাপ্রবাহ আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করছি। প্রতিটি সেকেন্ডই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনার অনেক তথ্য-উপাত্ত আমরা সংগ্রহ করেছি।’
কী তথ্য পেয়েছেন এমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা। তদন্ত কর্মকর্তা তার তদন্ত কাজের অংশ হিসেবে আসামিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। এই মুহূর্তে ঘটনার রহস্যের বিবরন নিয়ে কোন কিছু বলা সমীচীন হবে না।
এ বিষয়ে এখন কিছু বললে মামলার তদন্তকাজ ব্যাহত হবে।
তিনি আরও বলেন, তদন্তকাজটি দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা হবে। এ ঘটনার সাথে জড়িত কোনো দোষী ব্যক্তি যেন রক্ষা না পায়, পাশাপাশি কোনো নিরপরাধ লোক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সেই দিকটা বিবেচনা করে আমাদের তদন্ত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে সংঘটিত হওয়া সেই নির্মম ঘটনাটি কি ভাবে সংঘটিত হলো
সেই দুই মিনিটের প্রত্যেকটি সেকেন্ড আমরা গভীরভাবে অ্যানালাইসিস করতে তিন আসামীকে সাথে নিয়ে পুনরায় সিনহা হত্যাকান্ডের ঘটনাটি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল। তার সঠিক চিত্র বর্ণনা পর্যবেক্ষন করা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে.কর্নেল আশিক বিল্লাহ, র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম, র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক আজিম আহমেদ এবং উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবের সিনিয়র এএসপি খায়রুল ইসলামস।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দু’টি ও রামু থানায় একটি মামলা করে। এছাড়া সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারের হাকিম আদালতে এ ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়ে র্যাবকে।
সিনহার বোনের মামলার আসামিরা হলেন, টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়ার শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী,উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো.মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক। বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীকে সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় র্যাব।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-