ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে অপেক্ষা করে আর টাকা নিতে হবেনা বয়স্ক ভাতাভোগীদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বদলে যাচ্ছে ভাতা প্রদানের নিয়ম।
এ বছর থেকে সরাসরি মোবাইলে পৌছে দেওয়া হবে বয়স্কভাতা। আলাদা ডিজিট্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে সকল তথ্য নিয়ে উপকারভোগিদের একটি ডাটাব্যাস করতে যাচ্ছে সরকার। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সরকারের অতিগুরুত্বপূর্ণ বয়স্ক ভাতা নিতে গিয়ে নানা হয়রানি, দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা, ব্যাংক কর্মচারিদের সামান্য পকেট খরচসহ নানা ঝামেলার দিন শেষ হচ্ছে শীগ্রই। বয়স্ক ভাতা ভোগিদের জন্য ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) সফটয়্যারের মাধ্যমে ডাটা সংগ্রহের কাজ চলছে জেলাব্যাপী।
আর এ কাজে সহযোগিতা করছেন জেলার ৭১ ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তরা। তবে জেলার ২টি ইউনিয়নে আগে থেকেই এ প্রকল্প চালু ছিল স্বল্প পরিসরে এমনটাই জানিয়েছেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফরিদুল আলম।
তিনি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহতী উদ্যোগের কারণে বয়স্ক প্রবীণরা সহজে বাড়িতে বসেই ভাতার টাকা পাবেন। এ জন্য সকল উপকারভোগিদের ডাটা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন অপারেটর নগদ, বিকাশ, শিউরক্যাশসহ নানা এ্যাপের মাধ্যমে টাকা বিতরণ করা হবে। আগামি ৩ মাসের মধ্যে ডাটা সংগ্রহ শেষ হবে এবং উপকারভোগিদের টাকা বাড়ি বসেই পাবেন।
উপ পরিচালক মোঃ ফরিদুল আলম জানান, কক্সবাজারে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৬৫ হাজার ১৮৬ জন বয়স্ক ভাতাভোগিদের জন্য ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সমাজসেবা মন্ত্রণালয়। গর্ভমেন্ট টু পারসেন( জি টু পি) পদ্ধতিতে এ ভাতা বিতরণ করার সুবিধা হচ্ছে সরাসরি উপকারভোগির মোবাইলে টাকা চলে যাবে। কেউ ইচ্ছে করলে অনিয়ম করার সুযোগ পাবেনা।
তিনি জানান, ২০১৭ সালে কক্সবাজারের চকরিয়ার ২টি ইউনিয়ন ডুলহাজারা ও ফাসিয়াখালীতে পাইলট প্রকল্প হিসাবে এটি চালু ছিল। পরে গতবছর পুরো চকরিয়ার ১৮ ইউনিয়ন এ নিয়মে ভাতা বিতরণ হয়ে আসছে। এবছর থেকে পুরো জেলায় উপকারভোগিরা এ নিয়মে ভাতা পাবেন। প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে ৩ মাস পর পর এ ভাতা বিতরণ করা হয়।
এদিকে কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে দেখা গেছে ডাটা এন্ট্রির জন্য বয়স্করা দীর্ঘ লাইন ধরে তথ্য প্রদান করছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র, বয়স্ক ভাতার বহি এনে তারা তথ্য প্রদান করছেন। অনেক পরিষদে উদ্যোক্তারা তথ্য সংগ্রহ করার সময় টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এমন অভিযোগও রয়েছে।
অনেকে জোরপূর্বক মোবাইল সিম কিনতে বাধ্য করছেন বলেও জানা গেছে। আবার অনেকে ডাটা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। বয়স্ক ভাতা এতদিন পেলেও ডাটা এন্ট্রির সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখে বয়স কম হওয়ার কারণে সিস্টেমে ডাটা গ্রহন না করার কারণে অনেকে বাদও পড়ছেন। এটি বড় ধরনের সমস্যা হবে পরবর্তীতে কেননা এতদিন ডিজিট্যাল সিস্টেম না থাকায় বই দেখে ভাতা দেওয়া হলেও আগামিতে অনলাইনে সিস্টেম করায় বয়স ষাটোর্ধ না হওয়ায় অনেক ভাতাভোগি বাদ পড়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
জেলা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সমিতির সভাপতি মোঃ শিহাব উদ্দিন জানান, ডাটা সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন দেখা গেছে অনেকে ৩ বছর যাবৎ ভাতা পেয়ে আসছেন কিন্তু ডাটা সংগ্রহ করতে গিয়ে ন্যাশনাল আইডিতে বয়স ৬০ বছর হয়নি। এটি বড় ধরনের সমস্যায় ভোগাবে বিশেষ করে তাদের ভাতা পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে জন্মতারিখ সংশোধন করে আনলে পুনরায় ভাতা পাওয়ার পথ সুগম হবে।
অপরদিকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, কক্সবাজারে এ বছর ৬৫ হাজার ১৮৬ জন বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। এরমধ্যে সদরে ৯২৮৬ জন, চকরিয়ায় ১১৪৮১ জন, পেকুয়ায়, ৭০১৪ জন, কুতুবদিয়ায় ৪৩৯৯ জন, মহেশখালীতে ৯৩২৫ জন, রামুতে ৭৭২৭ জন, উখিয়ায় ৫৭৯৩ জন, টেকনাফে ৭৯১৮ জন এবং কক্সবাজার শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে ২৩১৩ জন। তাদের জন্য মোট ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপ-পরিচালক মোঃ ফরিদুল আলম।
কার্যক্রমটি চালু হলে বয়স্বকদের জন্য ভাতা পাওয়ার পথ সহজীকরণের পাশাপাশি অনিয়ম, দূর্নীতি, হয়রাণি, সময়ক্ষেপন কমবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-