অসৎ সমাজে সৎ থাকা কঠিন, অতঃপর আলোচক-সমালোচকের অভাব নেই

আজ লিখছি জীবন যুদ্ধে হার না মানা কয়েক জনের গল্প। কয়েক জন বীর যোদ্ধার গল্প‌। আমাদের বিনা বেতনে মানব সেবা করার গল্প। আমাদের সমাজ পিছিয়ে পড়া নিয়ে স্বপ্ন দেখার গল্প। এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ের গল্প।
বিশ্ব জুড়ে মহামারী কোভিড ১৯ বা করোনার থাবায় পুরো পৃথিবী স্তদ্ধ। মানুষের মৃত্যুর আহাজারী আর পথে পথে লাশের মিছিল।
দুনিয়া জুড়ে যখন লকডাউন। ঠিক তখনই ২৬ মার্চ ২০২০ সাল বাংলাদেশেও লকডাউনের ঘোষণা। কক্সবাজার শহরের পৌরসভারস্থ ০৬ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাহিত্যিকাপল্লীর দুর্দশায় নিমজ্জিত ও করোনার এই দুর্যোগে আমাদের মানবতার সেবা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।
করোনার দুর্যোগ মুহূর্তে মানুষ যখন মানুষের পাশে থাকে না যখন একজন ক্ষুর্ধাত মানুষের আত্মচিৎকারে কেউ এগিয়ে আসে না। তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা মানুষের পাশে এগিয়ে আসি। আবার জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি।
দক্ষিণ সাহিত্যিকাপল্লী সমাজ কমিটির সভাপতি নুরুল কবির অনেক বিতর্কিত আমরা এলাকার মানুষ সবাই জানি। কিন্তু তার উদারতা হয়তো কেউ দেখিনি। সভাপতির সকল কর্মকান্ড উপেক্ষা করে শাহজাহান ও আমি ইউছুফ আরমানসহ করোনার দুর্যোগ মুহূর্তে মানব সেবা করতে  যুক্ত হলাম।
দক্ষিণ সাহিত্যিকাপল্লী সমাজ কমিটির সভাপতি নুরুল কবির, শাহজাহান ও আমি ইউছুফ আরমানের উদ্যোগে ১, ৮, ১০, ১৮, ২৪, ২৮এপ্রিল এবং ১০ ও ২১ মে ২০২০ পর্যন্ত নিজেদের প্রচেষ্টায় বহুবার ত্রাণ দিয়েছি। সর্বশেষ ০১ আগষ্ট ২০২০ কোরবানী মাংস দুঃস্থ গরীবের মাঝে বন্টন করেছি। কাজেই দীর্ঘ প্রায় চার মাস সভাপতির সাথে কাজ করার সুবাদে তার একান্ত ছিলাম এবং তার কর্মকান্ড সম্পর্কে জানা হয়েছে। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি একজন মমানুষের দোষ গুণ থাকবে, সভাপতি হিসাবে নুরুল কবির সমাজের মানুষের জন্য যত টা নতস্বীকার এবং সহায়তা পাওয়ার জন্য তদবির করেছে তা অন্য কারো নজীর আছে কি না তা সন্দেহ এবং সমাজে বিরল। কেবল শাহজাহান ও আমি ইউছুফ আরমানের সহযোগিতায় সভাপতির প্রচেষ্টায় করোনা মহামারীতে প্রতিবন্ধকতা এবং তা অতিক্রম করার গল্প শুমানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে। এরপর ও সমাজের কিছু আহম্মক এবং ষড়যন্ত্রকারী চক্র আমাদের নামে দুর্নাম রটাচ্ছে। তাতে আমরা মোটেইও বিচলিত নয় বরং অনুপ্রাণিত।
আলোচক-সমালোচকের অভাব নেইঃ- আমাদের দেশে আলোচক-সমালোচক এবং সমালোচনার অভাব নেই। যে কোনো বিষয়ে সমালোচনা করতে বললেই হলো। হাজার-লক্ষ সমালোচকের লাইন পড়ে যাবে, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনী ডাকতে হবে। ‘লিপটন তাজা’ চায়ের কাপেই বলুন কিংবা রাস্তা-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, পত্রিকা অফিসে, বেশ্যা বাড়িতে যেখানেই বলুন না কেন, সমালোচক পাবেন, সমালোচনাও হবে। এর কারণ হলো, আমাদের দেশে সমালোচনা করার জন্য কোনো যুক্তি লাগে না, বিষয় লাগে না, তত্ত্ব লাগে না, বিবেক লাগে না, শুধুমাত্র ‘অহংকার’ থাকলেই হলো। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো সমালোচনায় কোনো কাজও হয় না। দেশ ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার জন্য আমাদের দেশে অনেক পত্রিকা আছে। এছাড়াও বর্তমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সমাজ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার জন্য একটি প্লাটফরম।
অসৎ সমাজে সৎ থাকা কঠিনঃ- এমন শিক্ষা শিশুদের সৎ মানসিকাতায় বেড়ে উঠতে সহায়তা করবে এবং তা পরিবারেও প্রভাব ফেলবে৷ সৎ সমাজে সৎ থাকা যত সহজ, অসৎ সমাজে সৎ থাকা ততই কঠিন৷ এই কঠিন কাজ যাঁরা করেছেন, তাদেরকে সমাজের ‘হিরো’ বা নায়ক হিসেবে তুলে ধরতে হবে অন্যদের উৎসাহিত করতে৷ কেউ যদি জানতে চায়, দেশের প্রতি আমাদের অবদান কী? আমি বলি, ‘‘অসৎ, দুর্নীতিপ্রবণ সমাজে নিজেকে যে সৎ রাখতে পেরেছি, এটাই একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশের প্রতি আমাদের অবদান৷ লোভ সংবরণ করে সবাই গর্ব অনুভব করার জায়গাটা এখানে খুঁজে পেলে সমাজটা সত্যি সোনার বাংলা হয়ে যেতো রাতারাতি৷ এই গর্ব অনুভব করতে পারার প্রক্রিয়াটা আপনা-আপনি হবে না, পরিকল্পিত সমাজ গড়তে হবে, এটাকে খুব বড় কাজ বলে মনে করি৷
প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করার গল্পঃ- আজ যারা সফল হয়েছেন, আমরা তাদের সফলতার পথচলা দেখি। কিন্তু এই পথচলায় বন্ধ পথ পাড়ি দেননি এমন সফল মানুষের সংখ্যা কম। জীবনের নানা ধাপে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে আজকের অবস্থান আমাদের। সফল ব্যক্তিদের জীবনে নানা সময় আসা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করার গল্প শুনাবো আমরা ‘সব বাধা পেরিয়ে’ সাফল্যের চুড়ায়।
সব ভালো কাজেই বাধা আসে। জীবনের এতটুকু পথ পার হতে আমাদেরও নানারকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে যখনই আমাদের চলার পথটি বন্ধ হয়ে যায় এবং কোনো কাজে আমরা আটকে যাই, তখন মাথা ঠাণ্ডা রাখি। আমাদের মনের মধ্যে প্রত্যয় তো থাকেই। সেই প্রত্যয়-মানসিক জোরের কারণে বাধাটা এড়াতে পারি। নিজের ওপর সবসময় আস্থা রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাস আমাদের কাজে জয়ী হতে সাহায্য করে। হতাশা সফল লোকদের জন্য নয়। কাজ করার ক্ষেত্রে ভুল হতে পারে। সেই ভুলে ভেঙ্গে না পড়ে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যখন আপনি আপনার নিজের মনের ওপর পুরোটা দখল রাখতে পারবেন, তখনই সাফল্য আপনার কাছে ধরা দেবে। হাজারো চাপের মধ্যেও আমাদের বিরূপ পরিস্থিতির বিভিন্ন সুযোগ, চ্যালেঞ্জ এবং হুমকি চিহ্নিত করে চলতে হবে ।
পরিশেষেঃ- সমাজের আলোচনা করতে হলে সমাজতত্ত্ব জানতে হবে, জানতে হবে মানুষের ‘যৌথ-অচেতনের’ মনস্তত্ত্ব-কে। কিন্তু দুর্নীতির মনস্তত্ত্ব আর সমাজতত্ত্ব লেখার চেয়ে পত্রিকায় সস্তা ‘কলাম’ লেখা অনেক ভালো, খুবই তাড়াতাড়ি ‘মহা বুদ্ধিজীবী’ হওয়া যায়। আর তাই খুব সহজেই কেউ আর তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে চায় না। আর একটি সমাজ যখন তত্ত্বহীন হয়ে পড়ে, তখন দুর্নীতির পাহাড় পর্বত হয়ে যাবে, এটাই তো স্বাভাবিক।
সুতরাং শাহজাহান ও আমি ইউছুফ আরমান দু’জন দক্ষিণ সাহিত্যিকাপল্লী সমাজ কমিটির সভাপতির নুরুল কবির কে সমাজের বহু কাজে নানাভাবে সহযোগিতা করেছি। এতে কেউ সন্তুষ্ট আবার কেউ অসন্তুষ্ট বিধায় আমাদের কাজে কারো মনে কষ্ট লাগে বা পেয়ে থাকে তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমা প্রার্থী। আমরা সমাজের সকল কার্যক্রম থেকে দু’জন বিরত থাকছি। সমাজের কার্যকরী পরিষদের শুভ কামনা করি।
লেখকঃ- ইউছুফ আরমান
কলামিষ্ট, সাহিত্যিক, শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ফাজিল, কামিল, বি.এ অনার্স, এম.এ, এলএল.বি। দক্ষিণ সাহিত্যিকাপল্লী, বিজিবি স্কুল সংলগ্ন রোড়, ০৬নং ওয়ার্ড, পৌরসভা, কক্সবাজার।
 ০১৬১৫-৮০৪৩৮৮
ই-মেইলঃ-yousufarmancox@gmail.com

আরও খবর