চেকপোস্টে একটি মৃত্যু, অনেক প্রশ্ন

সমকাল ◑

বিশ্ব ভ্রমণের স্বপ্ন ছিল সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের (৩৬)। ঘুরে ঘুরে দেখতে চেয়েছিলেন পৃথিবীর নানা প্রান্তের সৌন্দর্য। চীন থেকে ভ্রমণ শুরু করে যাবেন হিমালয়ের পাদদেশে। অংশ নেবেন জাপানের একটি সাইকেল ট্যুরেও। পৃথিবী দেখার সব পরিকল্পনাই প্রায় সেরে ফেলেছিলেন তিনি। এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বছর দুয়েক আগে চাকরিজীবনের ইতিও টানেন। গোছগাছ করে রাখেন ট্যুরে সঙ্গে নেওয়ার ‘ব্যাকপ্যাকও’।

তবে হঠাৎ করোনা মহামারি তার বিশ্ব ভ্রমণের আয়োজন পিছিয়ে দেয়। তবু ভ্রমণপিপাসু মন ঘরে বন্দি রাখতে পারেনি রাশেদকে। কক্সবাজারকেন্দ্রিক একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরির জন্য সেখানে যান তিনি।

এই প্রামাণ্যচিত্র ও বিশ্ব ভ্রমণের যাবতীয় তথ্য রাশেদ তার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। তবে গত শুক্রবার কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় একটি চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রাশেদ। চেকপোস্টে এমন মর্মন্তুদ মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।
ঘটনার পর কক্সবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাশেদ ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করে’ চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের গুলি করতে উদ্যত হন। তবে পুলিশের এমন ভাষ্য নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন দেখা দেয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম ওরফে সিফাতের (২১) বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের ভাষ্যের কিছুটা অমিল পাওয়া যায়। তারা বলছেন, কোনো জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই রাশেদকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী। মুহূর্তেই তিনি মাটিতে ঢলে পড়েন। সিনহার ব্যক্তিগত পিস্তল থাকলেও তা গাড়িতে ছিল। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও ওই রাতের ঘটনা সম্পর্কে এমন বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে সরকার। একজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে চার সদস্যের ওই কমিটির সদস্যরা এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন।

এদিকে, এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে রাশেদের পরিবার। তার মা নাছিমা আক্তার সমকালকে বলেন, ‘এটা মেনে নেওয়া কঠিন। এভাবে কেন তাকে মেরে ফেলা হলো? অপরাধ করলে দেশে আইন রয়েছে। দাগি আসামিকেও এভাবে মেরে ফেলা যায় না। এটা স্রেফ হত্যাকাণ্ড।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশেদের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। তদন্ত সাপেক্ষে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, এ ঘটনায় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ১৬ সদস্যের সবাইকে প্রত্যাহারের পর কক্সবাজার পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত রাখা হয়েছে। তদন্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির সদস্যদের বৈঠক :সাবেক মেজর রাশেদ খান নিহতের ঘটনা তদন্তে প্রথমে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

পরে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে ওই কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক হলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কক্সবাজারের ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মনোনীত লে. কর্নেল সাজ্জাদ। যিনি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কমিটিতে রয়েছেন। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির মনোনীত প্রতিনিধি অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাহজাহান আলী কমিটির অন্য দুই সদস্য।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কমিটির চার সদস্য কক্সবাজারের হিলডাউন সার্কিট হাউসে একত্র হন। সেখানে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তারা বৈঠক করেন। কমিটির সদস্যরা আজ বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন। বৈঠকের পর কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার তদন্তের জন্য তারা একটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছেন। সে অনুযায়ী তারা তদন্ত এগিয়ে নেবেন। ঘটনায় সংশ্নিষ্ট সবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হবে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।

এর আগে ১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহে এলিদ মাইনুল আমিন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর এলাকায় মেরিন ড্রাইভের চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে গত ৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খানের মৃত্যুজনিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে কর্মপরিধিসহ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো।

প্রজ্ঞাপনে কর্মপরিধির বিষয়ে বলা হয়েছে, এ কমিটি উল্লিখিত ঘটনার বিষয়ে সরেজমিন তদন্তপূর্বক ঘটনার কারণ, উৎস এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সার্বিক বিষয় বিশ্নেষণপূর্বক সুস্পষ্ট মতামত দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

পুলিশের মামলায় দায় চাপানোর চেষ্টা :চেকপোস্টে গুলি ও পরে নীলিমা রিসোর্টে অভিযানের ঘটনায় দুটি মামলা করে পুলিশ। এজাহারের এ ঘটনার দায় চাপানো হয় নিহত রাশেদ ও তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম ওরফে সিফাতের ওপর। তাদের বিরুদ্ধে ‘সরকারি কাজে বাধা ও অস্ত্র তাক করার অভিযোগে’ ৩০২ ধারা যুক্ত করা হয়। বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত বাদী হয়ে ওই মামলা করেন।

এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে মারিশবুনিয়া কমিউনিটি পুলিশের সদস্য নুরুল আমিন ফাঁড়ির ইনচার্জকে মোবাইলে জানান, কয়েকজন ডাকাত পাহাড়ে ছোট ছোট টর্চলাইট জ্বালিয়ে এদিক-সেদিক হাঁটাহাঁটি করছে।

নুরুল আমিন সে তথ্য স্থানীয় আরও চারজনকে জানান। স্থানীয় মারিশবুনিয়া নতুন মসজিদের মাইকে পাহাড় থেকে ডাকাত নেমে আসছে বলে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে একত্র হয়ে প্রতিরোধ করতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর দুই ব্যক্তি নেমে আসেন। ওই সময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় ২০-৩০ জন ছিলেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, পাহাড় থেকে নেমে আসা দু’জনকে থশনাক্ত করতে মাঈন উদ্দীন (১৯) নামের এক তরুণ তার হাতে থাকা টর্চলাইটের আলো ফেললে সেনাবাহিনীর সদৃশ পোশাক পরা একজন অস্ত্র উঁচিয়ে ধরলে স্থানীয়রা ভয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। এরপর পাহাড় থেকে নেমে আসা দু’জন সিলভার রঙের প্রাইভেটকারে করে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজারের দিকে রওনা হন। এ খবর নুরুল আমিন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জকে জানান। ইনচার্জ বিষয়টি জানান টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে।

ওসির নির্দেশে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে রাত সোয়া ৯টার দিকে শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে যানবাহন তল্লাশি শুরু হয়।

নন্দদুলাল রক্ষিত এজাহারে বলেন, মিনিট বিশেক পর তল্লাশি চৌকির সামনে থামার জন্য একটি প্রাইভেটকারকে সংকেত দেন তারা। কিন্তু গাড়িটি সংকেত অমান্য করে তল্লাশি চৌকি অতিক্রম করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ইনচার্জ লিয়াকত আলী তল্লাশি চৌকিতে থাকা ব্লকের মাধ্যমে গাড়িটির গতিরোধ করেন। হাত উঁচিয়ে গাড়ির ভেতরে থাকা ব্যক্তিকে বের হতে বলেন।

মামলায় বলা হয়, ‘ফাঁড়ির ইনচার্জ এ সময় গাড়িচালকের আসনে বসা ব্যক্তিকে গাড়ি থেকে নেমে হাত মাথার ওপর উঁচু করে ধরে দাঁড়াতে বলেন এবং বিস্তারিত পরিচয় জানতে চান। কিছুক্ষণ তর্ক করার পর নিজের পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে কোমরের ডান পাশ থেকে পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হন। তখন পরিদর্শক লিয়াকত আলী তার সঙ্গে থাকা পিস্তল দিয়ে চার রাউন্ড গুলি করেন।’ পরে রাশেদ রামু থানাধীন নীলিমা নামে যে রিসোর্টে থাকতেন, সেখানে অভিযান চালিয়ে মাদক পাওয়া গেছে- এমন দাবি করে আরেকটি মামলা করে পুলিশ। ‘লেটস গো’ নামে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজে বেশ কিছুদিন ধরে রাশেদ তার অন্য তিন সহযোগীসহ সেখানে অবস্থান করছিলেন।

এদিকে কক্সবাজারের ওই ঘটনা নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ধ্যা ও রাত্রিকালীন শুটিং শেষ করে রাশেদ ও তার সঙ্গে থাকা সিফাত রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাহাড় থেকে নেমে আসার সময় স্থানীয় কয়েকজন লোক ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দেন এবং শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন। মেজর (অব.) রাশেদের গাড়িটি প্রথমে বিজিবির একটি চেকপোস্টে এসে থামে। পরিচয় পাওয়ার পর বিজিবি সদস্যরা তাদের ছেড়ে দেন। এরপর রাত ৯টার দিকে সিনহার গাড়িটি এসে পৌঁছায় দ্বিতীয় চেকপোস্ট টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে। পুলিশের নির্দেশনা পেয়ে প্রথমে হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নামেন সিফাত। এর পর নিজের পরিচয় দেন।

সিফাতের ভাষ্য, কোনোরূপ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই রাশেদের বুকে একে একে তিনটি গুলি ছোড়েন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী। মুহূর্তেই তিনি মাটিতে ঢলে পড়েন।

গুলির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন :এদিকে, চেকপোস্টে গুলি করে কাউকে মেরে ফেলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন, যদি কাউকে চেকপোস্টে সন্দেহ করা হয়, তখন দরকার হলে হাত, পা অথবা শরীরের অন্য কোথাও গুলির পর তাকে ‘ইনজুরি’ করে আটক করা যেতে পারে। হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা সমীচীন নয়। চেকপোস্টে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তাদেরও ‘কিছুটা ঝুঁকি’ নিতে হয়। সঠিক তথ্য যাচাই না করেই গুলি করা সমাধান নয়। বাহারছড়া চেকপোস্টে অনেক পুলিশ সদস্য ছিলেন। তারা চাইলে কৌশলে রাশেদ ও তার সঙ্গীকে গুলি না করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতেন। রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে আনা হয় একটি মিনিট্রাক। ট্রাকে ওঠানোর সময়ও গুলিবিদ্ধ সাবেক মেজর রাশেদ জীবিত ছিলেন। তিনি তখনও নড়াচড়া করছিলেন। এর পর রাশেদকে নিয়ে ট্রাকটি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পৌঁছায় এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর। তখন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাশেদকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতাল থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব এক ঘণ্টার পথ। পরিচয় জেনেও অতিরিক্ত ৪৫ মিনিট রাশেদকে ফেলে রাখা হয়েছিল। আবার বিজিবির চেকপোস্টে ছেড়ে দিলেও এমন কী ঘটেছে যে পুলিশ চেকপোস্টে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিল। কারও কারও ভাষ্য, কথাবার্তা ও চেহারার অবয়ব দেখে সাধারণ সেন্স প্রয়োগ করে অনেক সময় তাৎক্ষণিক অনুমান করা যায়- কারা ডাকাত হতে পারে বা কারা ডাকাত নয়।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১২৩ জন মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। এটা অনেক পুলিশ সদস্যের মনোজগতে এক ধরনের নেতিবাচক পরিবর্তন এনে থাকতে পারে। এ ছাড়া টেকনাফের ওসি প্রদীপ অনেক দিন ধরেই মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে অনেক বিতর্কিত ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান নাছিমা আক্তার :ঘরে ঢুকতেই দেখা গেল, সন্তানহারা মা নাছিমা আক্তার সোফায় বসে আছেন। আঁচল দিয়ে চোখ মুছছেন বারবার। দেয়ালে টানানো ছবির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওই যে আমার ছেলের ছবি। যখন এসএসএফে ছিল, তখনকার ছবি এটি। এখন স্মৃতি হয়ে গেছে।’ নাছিমা আক্তার কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের মা। যে কক্ষে তিনি বসে আছেন, সেটিতে থাকতেন একমাত্র ছেলে সিনহা। ছেলের এই ঘরটাতেই এখন বেশিক্ষণ সময় পার করছেন তিনি।

রাজধানীর উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কের ৭৭ নম্বর হোল্ডিংয়ের বাড়িটি রাশেদের। চারতলা বাড়ির দ্বিতীয়তলায় মা নাছিমা আক্তারের সঙ্গে তিনি থাকতেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় নাছিমা আক্তারের সঙ্গে। পুলিশের গুলিতে রাশেদের মৃত্যুকে হত্যা বলে দাবি করছেন তিনি। বললেন, ‘কেউ কাউকে এভাবে সরাসরি মারতে পারে না। দাগি আসামিকেও এভাবে মারতে পারে না।’ ছেলে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তিনি।

অবিবাহিত রাশেদ দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট ছিল। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার মানিকরাজ এলাকায়। তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ খান অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব ছিলেন। ২০০৭ সালে বাবা মারা যান। প্রায় দেড় যুগ সেনাবাহিনীতে সুনামের সঙ্গে চাকরি করার পর দুই বছর আগে স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়েন রাশেদ।

গত ২৬ জুলাই রাশেদের জন্মদিন ছিল। তার মা বলেন, ‘অনলাইনে একটি চকলেট বক্স কিনে আনাই। কক্সবাজারে যে রিসোর্টে আমার ছেলে ছিল, সেই ঠিকানায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চকলেট পাঠিয়ে দিই। পরে ছেলেকে ফোন করে বলি- বাবা, তোমাকে চকলেট পাঠিয়েছি। পেয়েছ নাকি? কাজের কারণে তুমি খাওয়ার সময় পাও না। কাজের ফাঁকে চকলেট খেও। এনার্জি পাবা।’

কর্মসূচি দিচ্ছে রাওয়া :রাশেদের মৃত্যুর বিচারের দাবিতে কর্মসূচি দিচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কল্যাণ সমিতি (রাওয়া)। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাওয়া নিহতের পরিবারকে বিচারিক ও আর্থিক সহায়তা দেবে। রাওয়ার একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। তারা রাষ্ট্রপতি, আইজিপি, কক্সবাজার ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, কক্সবাজারের ডিসি ও এসপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া রাওয়ার প্রধান কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও সংগঠনের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

আরও খবর