নিজস্ব প্রতিবেদক ◑
কক্সবাজারে করোনা মোকাবেলায় জাতিসংঘ কর্তৃক সম্প্রতি বরাদ্দকৃত কেন্দ্রীয় জরুরি তহবিল বিতরণ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে নিজেদের আপত্তি ও উদ্বেগ জানিয়েছে কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)।
২৮ জুলাই আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ও কক্সবাজার থেকে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সংবাদ কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সিসিএনএফ নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ অঙ্গসংস্থাসমূহের নেতৃত্বে পরিচালিত ইন্টার সেকটোরাল এজেন্সি (আইএসসিজি)- এর ভূমিকার সমালোচনা করেন।
কারণ, আইএসসিজি রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় এনজিও এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় না বললেই চলে। তারা জরুরি তহবিল বিতরণে আইএসসিজি এবং জাতিসংঘের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন, এই বিতরণ প্রক্রিয়াকে পূর্ব নিধারিত এবং উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া (টপ ডাউন এপ্রোচ) বলে অভিহিত করেন। কক্সবাজার থেকে সৃষ্ট, কক্সবাজার ভিত্তিক কোনও এনজিও এই তহবিল বরাদ্দ পায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, জাতিসংঘ এক্ষেত্রে গ্র্যান্ড বার্গেইনের প্রতিশ্রুতি এবং কোভিড ১৯ সংকট চলাকালে স্থানীয়করণ সম্পর্কিত আইএএসসি ঘোষিত (ইন্টার এজেন্সি স্ট্যান্ডিং কমিটি) সাম্প্রতিক নির্দেশিকার প্রতি সম্মান দেখানো হয়নি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজুলিউশনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত আইএএসসি সমন্বিত ও নীতিগত মানবিক প্রতিক্রিয়ার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংস্থা।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন, সিসিএনএফের কো-চেয়ার এবং কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী।
বক্তব্য রাখেন সিসিএনএফের কো-চেয়ার এবং পালস’র নির্বাহী পরিচালক আবু মোর্শেদ চৌধুরী, সিসিএনএফের কো-চেয়ার এবং মুক্তি কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক বিমল চন্দ্র দে সরকার এবং জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শিউলি শর্মা।
আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘ এবং আইএসসিজি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য খুবই অল্প সময় দেওয়ায় এবং কঠিন অনেক শর্তারোপ করায় স্থানীয় এনজিওগুলো প্রকল্প প্রস্তাবই করতে পারেনি। তবে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা থেকে জানা যায় যে, কে এই তহবিল তেকে অর্থবরাদ্দ পাবে তা আগেই নির্ধারণ করা হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, যে বাংলাদেশে কাজ করা আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো বাংলাদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা উচিৎ নয়, তাদেরকে তাদের দেশ থকে তহবিল এদেশে আনতে হবে। অধিকতর জবাবাদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং কার্যকর ব্যয় নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সংকটের সকল তহবিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে হবে কক্সবাজার থেকে, যেখানে স্থানীয় প্রশাসনের একটি ভূমিকা থাকতে হবে।
বিমল চন্দ্র দে সরকার বলেন, ভাষাগত ও প্রক্রিয়াগত নানা বাধার কারণে আইএসসিজিতে স্থানীয় এনজিওগুলোর অংশগ্রহণ খুবই সীমিত।
সিসিএনএফ স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওদের জন্য সিইআরএফ থেকে আনুপাতিক অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছিলো। শুরু থেকেই সিসিএনএফ সাহায্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, খরচের স্পষ্ট তথ্য প্রকাশ এবং স্থানীয়দের কাছে প্রযুক্তি ও দক্ষতা হস্তান্তরের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে।
শিউলি শর্মা বলেন, জাতিসংঘের নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গা সংকট ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়করণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা স্থানীয়করণের একটি রোডম্যাপ প্রণয়নের জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিসকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, স্থানীয় করণ টাস্কফোর্স গঠন করেছেন, কিন্তু প্রায় দুই বছর কেটে গেলেও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি নেই। আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলো প্রায়শই স্থানীয় এনজিও গুলির সক্ষমতার অভাবের অজুহাত দেয়, তবে এখন এটি সক্ষমতা বিনিময় বা সমন্বয়ের সময়।
তাদের অস্বীকার করা উচিৎ নয় যে, যত যাই হোক স্থানীয় এনজিওগুলি কোনও তহবিল না পেলেও চলে যাবে না, তারা স্থানীয়দের অংশ হয়ে এখানেই থাকবে।
রেজাউল করিম চৌধুরী উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের দিকে আইএসসিজি এবং সিসিএনএফ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুত জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বা জেআরপি-তে স্থানীয় এনজিও এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের মাধ্যমে আলোচনার একটি ভাল উদাহরণ তৈরি করেছিলো। কিন্তু বর্তমান আইএসসিজি নেতৃত্ব এ ব্যাপারে সহযোগিতার বিষয়ে সিসিএনএফ’র প্রস্তাব এড়িয়ে গেছেন।
সিসিএনএফ নেতৃত্ব জেআরপি এবং অন্যান্য বিষয়ে আইএসসিজি নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই বিষয়ে খুব বেশি সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের নামে আসা অর্থ প্রকৃতপক্ষে তাদের কাছে কতটা পৌঁছাচ্ছে সে বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন প্রশ্ন করা রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের অধিকার।
বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ তহবিল ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে স্থানীয় মানুষ, স্থানীয় এনজিও এবং রোহিঙ্গাদের স্বার্থ নিশ্চিত করা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-