কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে গ্রামীণ অর্থনীতি

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া ◑

করোনা ভীতিতে মানুষ এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। উৎপাদন ও ব্যবসা বন্ধ থাকায় দিন দিন কর্মহীন হচ্ছে বিশাল সংখ্যক কর্মক্ষম মানুষ। এ অবস্থায় গত চার মাসে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে দারুণভাবে। জীবন বদলানোর আশায় গ্রামের মানুষেরা এতদিন যারা ছিল শহরে তারা বেকার হয়ে ফিরেছেন গ্রামে। জীবন-জীবিকা নির্বাহে গ্রামে কিছু একটা করবেন।

অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয় যাদের টাকায়, সেই প্রবাসী শ্রমিকরা কর্মসংস্থান হারিয়ে বাধ্য হয়েই ফিরছেন গ্রামে। আবার বৈশ্বিক মন্দায় বিদেশে অবস্থানকারী গ্রামের অর্থনীতির প্রাণ প্রবাসীর আয়ও কমেছে।

ফলে গ্রামীন অর্থনীতির অক্সিজেন খ্যাত এই খাতটিও করোনায় মন্দায় আক্রান্ত। গ্রামীণ কৃষিপণ্যের হাতবদলও কমে আসছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে গ্রামাঞ্চলের অর্থপ্রবাহ কমার পাশাপাশি বাড়ছে বেকারত্বের বোঝা। সব মিলিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। গ্রামীণ জনপদের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস্ কৃষি। এর পরই রয়েছে প্রবাসী আয়। যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় অর্ধেক মানুষ। প্রবাসী আয় বাড়লে এবং ফসলের ভালো উৎপাদন হলে অর্থপ্রবাহ বাড়ে। চাঙ্গা হয় গ্রামীণ অর্থনীতি।

কিন্তু করোনায় চরম বিপাকে পড়েছেন গ্রামাঞ্চলের কৃষক থেকে শুরু করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন উপার্জন বন্ধ থাকায় তাদের সঞ্চিত অর্থ কমে আসছে। এছাড়া গ্রামীণ জনপদের প্রধান উৎস ধান আর চাল পানসহ নানান কৃষি পণ্য বিক্রি। এই টাকায় বেশিরভাগ চাহিদা পূরণ হয় তাদের। আর যারা কৃষির পাশাপাশি মৌসুমি ব্যবসা করতেন তাদের হাতেও পুঁজি নেই।

অর্থ সরবরাহ কম থাকায় গ্রামের বাজার-গুলোতে বেচাকেনাও অনেক কমে গেছে। মুদির দোকানদার শাহ আলম বলেন, আগের মতো বেচা-কেনা নেই। বাজারে লোক সমাগমও কম। এর বাইরেও নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ কৃষক।

কৃষক নুরুল আলম বলেন, আগের মতো কৃষিপণ্যে দাম পাওয়া যায় না। মানুষের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

উখিয়া কেজি স্কুলের শিক্ষক ফরিদুল আলম বলেন, করোনা মহামারির ফলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের মতো বে-সরকারি কেজি স্কুলের শিক্ষকরা ভালো নেই। করোনা ভীতিতে মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি।

করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় টালমাটাল দেশের চাকরির বাজার। কোথাও কোনো কাজ নেই। আমাদের মতো শিক্ষকরা পারছেন না ঠেলাগাড়ি ঠেলতে না পারছেন অন্যের কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে।

দিন মজুর খোরশেদ আলম বলেন, হাতে কাজ নেই, টাকার অভাবে চার মাস ধরে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছি। সমাজপতি জানে আলম বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অনেকে শুধু করোনার সঙ্গেই নয় যুদ্ধ করছেন ক্ষুধার সঙ্গেও। অনেকেই দিতে পারছেন না ছেলে-মেয়ের চাওয়া ৫-১০ টাকাও।

আরও খবর