কক্সবাজার সৈকতে বর্জ্য বন্যা অব্যাহত: আসছে সামুদ্রিক সাপ

আহমদ গিয়াস ◑
কক্সবাজারের কলাতলী থেকে দরিয়ানগর-হিমছড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫ কি.মি সমুদ্র সৈকতজুড়ে শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বর্জ্য-বন্যা সোমবার তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত ছিল। এসব বর্জ্যের সাথে মূমুর্ষূ ও মরা কচ্ছপ, সামুদ্রিক সাপও ভেসে আসে সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে।

কিন্তু কী কারণে কোত্থেকে ভেসে আসছে এসব বর্জ্য, আর কেনইবা সৈকতের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় এসব বর্জ্য উগড়ে পড়ছে- তা নিয়ে একটি ধারণা তৈরির চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।

এদিকে টানা বৃষ্টির মাঝেও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী পরিবেশ কর্মীরা সোমবার বিকাল থেকে দরিয়ানগর সৈকতের বর্জ্য অপসারণ শুরু করেছে।

সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্যের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগের বেশি অপচনশীল বা প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য।

আর বাকী ১০ ভাগ পচনশীল দ্রব্যের মধ্যে কাঠ ও বাঁশের টুকরো, নারিকেলের ডালপালা ও পরিত্যক্ত খোসাসহ সৈকতের কয়েক প্রকার উদ্ভিদের বীজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক।

সৈকতের আকস্মিক বর্জ্য বন্যা ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত বাংলাদেশ মৎস্য ইন্সটিটিউটের দলের প্রধান এই বিজ্ঞানী সোমবার বিকালে দরিয়ানগর সৈকত পরিদর্শন শেষে প্রধানত: ১০টি বর্জ্য খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান। যারমধ্যে সবচেয়ে প্লাস্টিক ড্রাম, ঝুড়ি, ও গ্যালন, যা মোট বর্জ্যের শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ। আরো ২৫ ভাগ রয়েছে ফিশিং বর্জ্য যেমন; জাল, রশি ও ফ্লোট। জুতা-স্যান্ডেল, ক্যাপ, জ্যাকেট, স্কুল ব্যাগ জাতীয় কাপড়ের জিনিস রয়েছে প্রায় ১৫ ভাগ, কাঁচের মদের বোতল প্রায় ৭ ভাগ, ওষুধের বোতল, সিরিঞ্জসহ মেডিক্যাল বর্জ্য প্রায় ৮ ভাগ। বাকী ৫ ভাগ ক্ষুদ্র প্লাস্টিক, পলিথিনসহ অন্যান্য অপচনশীল দ্রব্য। আর পঁচনশীল দ্রব্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে কাঠের খন্ড, শেকড় ও বাঁশের খন্ড; যা নদীপথে ভেসে সমুদ্রে মিশেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে ম্যানগ্রোভ ও সৈকতের লতা জাতীয় কয়েক প্রকার উদ্ভিদের বীজ।

কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শফিকুর রহমান সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্যগুলো স্থানীয় বা কক্সবাজারের আশেপাশের বলে মনে করেন।

ড. শফিক বলেন, এখানে পাওয়া বস্তুগুলোর উৎস সন্ধানের মাধ্যমে এমন ঘটনার পূরাবৃত্তি রোধ করতে হবে। কারণ প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় বর্জ্যগুলো আমাদের অনেকগুলো সামুদ্রিক প্রাণীর জীবন হানীর কারণ হয়ে ওঠেছে। ভবিষ্যতের জন্য এটা অশনি সংকেত।

দরিয়ানগরের স্বেচ্ছাসেবী পরিবেশ কর্মীরা জানান, সোমবারও জোয়ারের সাথে আগের মতোই নানা বর্জ্য ভেসে আসতে থাকে কক্সবাজারের কলাতলী থেকে দরিয়ানগর-হিমছড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫ কি.মি সমুদ্র সৈকতজুড়ে। এ বর্জ্য-বন্যার সাথে সোমবার সৈকতে ভেসে আসে মূমুর্ষূ ও মরা কচ্ছপ এবং সামুদ্রিক সাপ।

স্থানীয় পরিবেশকর্মীদের মতে, সমুদ্রের প্রাণীরা যা খেয়ে নি:শেষ করতে পারে না, তা সৈকতে উগড়ে দিচ্ছে প্রকৃতি। কিন্তু এসব প্লাস্টিক বর্জ্যরে উপর বালির আস্তর পড়ে কোন সৈকত গঠিত হলে, সেই সৈকত কখনোই টেকসই হবে না। সৈকতে মাটির বন্ধন তৈরিতে প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একইভাবে মাটিতে লাল কাঁকড়া ও সাগরলতাসহ সৈকতের উদ্ভিদ ও প্রাণীরাজির বায়ো টার্বেশন বা জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।

এদিকে সোমবার বিকাল থেকে দরিয়ানগর সৈকতের বর্জ্য অপসারণ শুরু করেছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী পরিবেশ কর্মীরা।

এতে কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন খান, বিএফআরআই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা ও খায়রুল আলম সবুজ, স্থানীয় পরিবেশকর্মী আহমদ গিয়াস, মোস্তাক আহমদ, এমএইচ পারভেজসহ ২৫ পরিবেশকর্মী অংশ নেন। এই কাজ আজ মঙ্গলবারও অব্যাহত থাকবে বলে জানান স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সৈকতে উগড়ে পড়া বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া সৈকতে কোন সামুদ্রিক প্রাণী ভেসে এলে তা উদ্ধার করে পূনরায় সমুদ্রে অবমুক্ত করে দেয়া হচ্ছে।

আরও খবর