বাংলা ট্রিবিউন ◑
স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায় দেশের ১০৪ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বিস্কুট এবং মিড-ডে মিল কার্যক্রমের আওতায় ১৬ উপজেলায় চাল, ডাল ও ভোজ্য তেল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেবে সরকার। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী সপ্তাহ থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ ছিল। তবে দারিদ্র পীড়িত এলাকার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা বিবেচনায় ছুটির মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিস্কুট ও খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ্ বলেন, ‘স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১০৪ উপজেলার শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মাঝে জুন ও জুলাই মাসের বিস্কুট পৌঁছে দেওয়া হবে। আর মিড-ডে মিলের আওতায় দেশের ১৬টি উপজেলার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মাঝে চাল, ডাল ও ভোজ্য তেল বিতরণ করা হবে। আমাদের কাছে যা মজুত রয়েছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে বাড়িতে বাড়িতে।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুন স্কুল ফিডিং প্রকল্পের ৩০তম সভায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পভুক্ত ১০৪টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বিস্কুট বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে মিড-ডে মিল কার্যক্রমের আওতায় ১৬ উপজেলার শিক্ষার্থীদের জন্য সংগৃহীত ও মজুদ চাল, ডাল এবং ভোজ্য তেল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সমন্বয়ে এনজিওকর্মীদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মাঝে বিস্কুট ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতাধীন ১০৪টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাথাপিছু ২৫ থেকে ৫০ প্যাকেট বিস্কুট দেওয়া হবে। আর মিড-ডে মিলের জন্য মজুদ যেসব চাল, ডাল রয়েছে তা বিতরণ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায় দেশের দারিদ্র পীড়িত এলাকায় বিস্কুট বিতরণ কর্মসূচি চালু করা হয় ২০১০ সাল থেকে। সেটা দফায় দফায় বাড়িয়ে বর্তমানে দারিদ্র পীড়িত ১০৪ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিস্কুট বিতরণ করা হচ্ছে।
এই প্রকল্প শুরুর পর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও লেখাপড়ায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়লে বরগুনার বামনা, জামালপুরের ইসলামপুর এবং বান্দরবানের লামা উপজেলায় ডব্লিউএফপি’র সহযোগিতায় ২০১৩ সাল থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে মিড-ডে মিল বা দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। এই পাইলট প্রকল্প ফলপ্রসূ হওয়ার পর জাতীয় মিড-ডে মিল নীতিমালা-২০১৯ -এর আওতায় দেশের ১৬টি উপজেলায় দুপুরের রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে সরকার।
স্কুল মিল কর্মসূচির আওতায় উপজেলা নির্বাচন করা হয়েছে দারিদ্র্য ম্যাপ অনুযায়ী। সরকারি এই কার্যক্রমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবার দেওয়া হচ্ছে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি ও রাজিবপুর, দিনাজপুরের ফুলাবাড়ি, পাবনার বেড়া, নওগাঁ জেলার পোরশা, গাইবান্ধার সাঘাটা, শেরপুরের নালিতাবাড়ি, জামালপুরের ইসলামপুর, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও কাউখালী, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, যশোরের ঝিকরগাছা, খুলনার বাটিয়াঘাটা, বরগুনার বামনা, লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলা এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায়।
করোনাকালে দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় বিস্কুট ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণের পদক্ষেপে সাধুবাদ জানিয়েছে গণস্বাক্ষরতা অভিযান। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, ‘করোনার কারণে মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে দারিদ্র পীড়িত এলাকায় শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য বিস্কুট ও খাদ্য সামগ্রী পুষ্টিমান ঠিক রাখতে খুবই প্রয়োজন ছিল।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-