আবদুর রহমান, টেকনাফ ◑
বিক্রির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ‘মেসি’। এ মেসি কিন্তু বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলোয়ার মেসি নয়। এইটি কোরবানির পশু হাটে বিক্রিতে তোলা ষাঁড়। ষাঁড়টির দৈর্ঘ্য ৮ ফুট, উচ্চতা ৫ ফুট। ওজন ১৪ মণ। কালো আর সাদা রঙের সুঠাম স্বাস্থ্যের ষাঁড়টির নাম বিক্রির জন্য দেওয়া হয়েছে মেসি। শুধু মেসি নয় বিক্রি হবে বস-ও। পুরো শরীর লাল রঙের। তবে লেজের মাথা ও পেছনের দুই পা সামান্য সাদা রঙের। নাম তার ‘বিগবস’ ডাক নাম বস। এই বসের ওজন ১২ মণ। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফের সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছে মেসি ও বস নামে এই গরু দুটি। অনেকে ধারনা করছে এই গরু দুটি সীমান্তের খামারী গরুদের মধ্যে সবার উপরে থাকবে!
বুধবার দুপুরে টেকনাফ পৌরসভার খায়ুকখালী পাড়ার খামারি মো. আহমেদ এর খামারে এই ষাঁড় গরু দুটি দেখা মিলে। আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে দেশী ও অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরুগুলো দেশীয় পদ্ধতিতে নিজের খামারে মোটাতাজা করেছেন তিনি। এছাড়া তার আরও ৪টি মহিষ ও গরু রয়েছে।
খামারি মো. আহমেদ জানান, ‘মেসি’ খুব শান্ত স্বভাবের গরু। ওর কোনো রাগ নেই। কারও দিকে তেড়েও আসে না। ৮ বছর ধরে আমি গরু খামারী করছি। গত দুই বছর আগে ২ লাখ টাকা দামে ক্রয় করি। একই সময় লাল রঙের ‘বস’ নামে দেশীয় জাতের গরুটি দেড় লাখ দামে কেনেন। তারপর থেকে গরু দুটি লালন পালন ও দেশীয় খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করি। ইতি মধ্যে এক ব্যবসায়ীরা মেসি পাচঁ লাখ এবং বসকে ৪ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। তবে গরু দুটি ১২ লাখ টাকা দাম ফেলে ছাড়বেন।
আহমেদ আরও জানান, প্রতিদিন দুই বেলা দশ কেজি করে খাবার খায় গরু দুটি। এর মধ্যে রয়েছে গমের ভূষি, ধানের গুড়া, ভুট্টা, শুকনো খড় ও কাঁচা ঘাস। এছাড়া মঝে মধ্যে ভাতও খায়। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার টাকার খাদ্য লাগে মেসি ও বসের। কোনো ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করা হয়নি। তবে প্রাণী সম্পদ অফিসের পরার্মশ নিয়েছি। এবারে কোরবানির বাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে পাচঁ পশু বিক্রি করতে তোলা হবে। তার মধ্যে একটি মহিষ রয়েছে। যার ওজন প্রায় ৫’শ কেজি।
মেসি ও বস এর খবর পেয়ে প্রতিদিনই লোকজন দেখতে ভিড় করছে। গরু দেখতে আসা মো. ফিরোজ বলেন, বড় আকৃতির গরুর কথা শুনে দেখার আগ্রহ হয়েছিল। তাই দেখতে আসছি। আমি অনেক খামারীতে খবর নিয়েছি এত বড় আকারের গরু আর নেই।
পল্লান পাড়ার আরেক খামারী মোহাম্মদ ওসমান জানান, ‘কোরবানির বাজারে বিক্রির অপেক্ষা এবারে খামারে ১৫ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রকারের গরু রয়েছে। কিন্তু করোনাকালে দু:চিন্তায় রয়েছি। কেননা করোনাভাইরাস ও সাধারণ মানুষের পকেটে টাকা না থাকার কারণে এবার সারাদেশের পশুহাটগুলোতে পশুও কম থাকবে। সেই সঙ্গে ক্রেতাও কম থাকবে। কারণ, করোনার কারণে অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আবার আর্থিক অক্ষমতার করণে পশু কেনার চিন্তাই করবেন না অনেকে। ফলে লোকসানও বেশি হওয়ার সম্ভবনা আশঙ্কাও রয়েছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় জানায়, টেকনাফ উপজেলায় দেড় শতাধিক খামারি রয়েছেন। তবে তার মধ্যে বড় খামারিদের সংখ্যা ৬৭ জনের। এসব খামারিতে সাড়ে ৮ হাজার গরু, মহিষ ও ছাগল মজুদ রয়েছে। যা কোরবানির হাটে তোলা হবে। তাছাড়া এই উপজেলায় সাড়ে ৬ হাজার কোরবানির পশু চাহিদা রয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের হিসাব ধরা হলে ১ হাজার কোরবানির পশু সংকট থাকবে।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শওকত আলী বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ধরা হলে এক হাজার পশু সংকট থাকবে। তাছাড়া কারোনা ভাইরাসের কারনে অনেক মানুষের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এবারে খামারীরা গরু বিক্রি নিয়ে দু:চিন্তর মধ্যে রয়েছে।
তিনি জানান, তাছাড়া সবাই বড় আকৃতির গরু কিনতে পারেন না। অনেক সময় বিক্রি না হলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। তারপরও প্রাণী সম্পদ বিভাগ সবসময় খামারিদের পাশে আছে। ওই খামারিদের গরুগুলো আমরা দেখেছি। সেটি সুস্থ, সবল আছে। আশা করছি তিনি কাঙ্খিত দামে গরুটি বিক্রি করতে পারবেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-