সৈকতের জল লোনা, চোখের পানিও লোনা

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নিরবে বসে গোধূলির আবিরে রাঙা অস্তায়মান লাল সূর্য দেখতাম। দিনের শেষে থেমে আসতো চারপাশের কর্মকোলাহল।

প্রকৃতিতে নেমে আসতো অন্যরকম এক প্রশান্তি।

সারা মাস কর্মব্যস্ততার পর কিছু দিন ছুটি নিয়ে ঘরে ফেরার স্বপ্ন। তখন বলতাম দেখি মন ফ্রেশ করে আসি বলে নামতাম বিশাল সমুদ্রের কিনারায় ।

দিন শেষে বিরাজ করতো এক সুন্দর নীরবতা।

সূর্যের রক্তিম আলোর প্রকৃতি যেন অন্যরকম রঙে নিজেকে সাজিয়ে রাখতো। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দাঁড়ালে সূর্যাস্তের এক মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য অবলোকন করা যেত।

সূর্যাস্তের সময় নির্জন সৈকতে দাঁড়ালে এমন ভাবনা ভেসে আসতো মনে, মনে হতো মহান আল্লাহর দেওয়া বেহেশতের এক কর্ণার ।

ছায়াঢাকা সৈকতে নিবিড় প্রেক্ষাপটে সূর্যাস্তের দৃশ্য এখন কি আর দেখে?? দিয়েছে করোনার থাবা।
ইচ্ছে করলেউ আর দেখি না তোমায় ।

কক্সবাজার সমুদ্রে সৈকতে সূর্যাস্ত দেখতে গেলে বহুমাত্রিক সৌন্দর্য চোখে পড়তো।

সামনে বিশাল জলরাশি,ওপরে রক্তিম উদার আকাশ, এক পাশে বড় বড় পাহাড় , কত সুন্দর বড় বড় পাথর, গোধূলি লগ্নে উন্মুক্ত সৈকতে দাঁড়ালে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যেত।

আকাশের রক্তিম রঙে ঢেউর পানি রঙিন হয়ে ওঠতো। এ সময় পৃথিবীর দ্রুত রং বদলাতে থাকতো।

অস্তগামী সূর্যের লাল টিপ কপালে পরে আমার কক্সবাজার যেন নববধূর মতো সাজতো।

শত শত মানুষ তখন হাতের তালু, মুখের উপরে ও তর্জনী আঙুলের উপরে নিয়ে লাল সূর্যকে নিয়ে খেলতো । ঝিলিমিলি ঢেউ খেলানো সোনা রঙের পানিতে হাজার নর নারী গান গাইতে গাইতে চলতে থাকতো।

সৈকতের তীরে ঘেঁষে বাতাসের স্রোত সাঁতরে উরে আসা বালি কণা, তখন চোখের নরম স্থানে বসে যেত। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তো সমুদ্রের জলের মতো লোনা পানি। প্রমাণ করতো লোনা পানি, সাগরে আছে ঠিক চোখের ভিতরে লুকানো পানির গুলো কেমন।

রক্তিম সূর্য তার উষ্ণতা বিলিয়ে লাল হতে হতে নিচে নামতে থাকতো। তখন ছোট বাচ্চারা চোখের সামনে এসে বলতো মামা ঝিনুকের মালা, বাদাম, পানি,ডাব ইত্যাদি লাগবে নাকি? বলে ডাক দিত, মনকে তখন আনন্দের বিহারে নিয়ে আসতো।

ক্যামেরা হতে নিয়ে ছোট বড় সবাই এসে বলতো ভাইয়া ছবি একটা উঠাবো নাকি? তখন অর্ধ লক্ষ টাকার মোবাইলের কথা ভুলিয়ে দিয়ে শুরু হতো ছবি উঠানোর ব্যস্ততা, তখন মুহুর্তের মধ্যে ১০০ টা ছবি, দেখছেন মামা, তখন হাসতাম। ভালো হয়ছে মামা।

একটু পরে অন্ধকার হবে এক সময় মনে হতো সমুদ্রের জলে আর আকাশ যেন মিশে গেছে
সূর্য যেন কান পেতে শুনছে পৃথিবীর গোপন বিষাদের সুর।

এইভাবেই একসময় সূর্য যেন ঝুপ করে সমুদ্রে ঝাপ দিয়ে দেয়, আর পৃথিবীতে নেমে আসে অন্ধকার।

তখন চলতে থাকতাম মেরিন ড্রাইভ রাস্তা দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে।

রাত্রির আগমনের এই পৃথিবী যেন মিলন-বিরহের খেলায় মেতে ওঠে এখন কি সূর্যমামা দেখেনি পৃথিবীটা এতো হাহাকার, দেখলে কেন বলেনি সৃষ্টিকর্তার কাছে,ক্ষমার আশায় আমরা সবাই যে হাহাকার ।

আমরা এখনো তোমার রহমতের আশায় বসে আছি, ক্ষমা করো আমাদের,ইয়া রহমান। আমরা আবার তোমার দেওয়া সৌন্দর্য উপভোগ করবো।

রক্ষা করো করোনা থেকে।

লেখকঃ
মোঃ সালাউদ্দীন কাদের লাভলু
বাংলাদেশ পুলিশ

আরও খবর