করোনা রোগীর আন্দোলনে উখিয়া আইসোলেশনে পরিবর্তন, বেড়েছে সেবা ও খাবারের মান

ইমাম খাইর, কক্সবাজার
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানীর ধর্মঘট, আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে উখিয়া আইসোলেশন সেন্টারে। বেড়েছে খাবারের মান ও সেবা কার্যক্রম।

রবিবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে নিজ বেডে ধর্মঘট শুরু করেছিলেন আবু সিদ্দিক ওসমানী। দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা পর ব্যতিক্রম এই ধর্মঘট ভাঙান RELIEF INTERNATIONAL এর হেলথ এন্ড নিউট্রিশন প্রোগ্রাম ম্যানেজার পেট্রেশিয়া এফে আজকিয়ে।

অভিযোগসমূহের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এ্যাকশন শুরু করেন।

ব্রেকফাস্টে পানির মতো টলটলে ডাল ও UNHCR ত্রিপলের মতো মোটা, রোগীদের খাওয়ার অযোগ্য রুটি সরবরাহ দেওয়া হতো।

মঙ্গলবার (৭ জুলাই) সকাল থেকে তা পরিবর্তন করে উন্নতমানের রুটি, ডাল ও অন্যান্য আইটেম রোগীদের দেওয়া হয়েছে। সরবরাহ করা হয়েছে উন্নতমানের ফ্রুটস।

যা আইসোলেশন সেন্টার চালুর ৩৭ দিনে রেকর্ড।

রোগীর খাবার ম্যানুতে থাকা সত্বেও ফ্রুট সরবরাহ করতো না কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালটি চালুর ৩৮ তম দিবসে রাতের খাবারের ম্যানুতে দেশি মুরগীর সাথে দেওয়া হয়েছে-ডাল ও সবজি। খাওয়া দাওয়ার সাথে এ হাসপাতালে আগে পুষ্টিবিদের কোন পরামর্শ না থাকলেও এখন থেকে এখানকার সকল খাদ্য তৈরিতে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।

রোগীদের পানির মতো দুধ সরবরাহ করা হলেও ৭ জুলাই নৈশভোজের পর থেকে রোগীদের ভালমানের দুধ দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালে অসম্পূর্ণ কাজসমূহ দ্রুত সম্পন্ন করতে অধিক পরিমাণ শ্রমিক নিয়োজিত করা হয়েছে। জোরেশোরে চলছে উন্নয়ন কাজ।

আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে ওয়াশ ও বাথরুমগুলো ঝকঝক করছে। অথচ অন্যান্য সময় দুর্ঘন্ধে ওয়াশ ও বাথরুম গুলোতে যাওয়া যেতোনা। হাসপাতালের লন্ড্রীতে আনা হয়েছে শৃঙ্খলা। হাসপাতাল প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা দুর করতে আনা হচ্ছে-চেইন অব কমান্ড ভিত্তিক জবাবদিহিতা। রোগীদের সাথে অসদাচরণ, দুর্ব্যবহার নিয়ে যারা জড়িত তাদেকেও হাসপাতাল চাকুরীবিধির সুস্পষ্ট লঙ্গনের অভিযোগ এনে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায়, কৌশলে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। গঠন করা হচ্ছে-স্পর্শকাতর বিষয়ে তদন্ত কমিটি।

RELIEF INTERNATIONAL এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকতা জানান, তাদের সদর দপ্তরের কোন নির্দেশনা ছাড়া স্থানীয়ভাবে তারা কোন মৌলিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন না। তাই গত ২ দিনের ঘটনাপ্রবাহ সবই তাদের ১১০১, ১৪তম ষ্ট্রীট, এন ডাব্লিউ স্যুট ওয়াশিংটন ডিসিস্থ কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে।

RELIEF INTERNATIONAL এর সদর দপ্তর থেকে কোভিড-১৯ রোগীদের স্বার্থে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরো কঠিন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে উক্ত কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন।

উখিয়া উপজেলার টিএন্ডটি মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প সংলগ্ন বিশাল এলাকা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১৪৪ বেডের পরিপূর্ণ SARI Isoletion and treatment centre।

জাতিসংঘের অংগ প্রতিষ্ঠান UNHCR চলমান করোনা ভাইরাস সংকটে তাদের মানবিক উদ্যোগের অংশ হিসাবে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে মাত্র ৪০ দিনে এ হাসপাতালটি নির্মাণ করে।

গত ২১ মে হাসপাতালটি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন উদ্বোধন করেন।

প্রায় এক সপ্তাহ মেডিকেটেড রিহার্সাল দেওয়ার পর ২৭ মে থেকে সেখানে কোভিড-১৯ রোগীদের ভর্তি দেওয়া শুরু হয়। ওয়াশিংটন ভিত্তিক RELIEF INTERNATIONAL উখিয়া SARI আইসোলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি সার্বিক পরিচালনা করার দায়িত্ব পান।

৩৪ টি আলাদা বিভাগে বিভক্ত করে উখিয়ার SARI আইসোলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি পরিচালনা করা হয়।

RELIEF INTERNATIONAL কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণেরে দায়িত্ব পালন করলেও স্থানীয় ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করে আসছিলো ৩৪ টি বিভাগের।

দায়িত্বপালনকারী এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে হাসপাতালের কার্যক্রম।

করোনা ‘পজেটিভ’ হয়ে এখানে গত ২৮ জুন পরিবারের ৭ সদস্যসহ ভর্তি হন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী।

ভর্তি হয়ে তিনি সেখানে দেখতে পান, বিভিন্ন বিভাগে চরম অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতা।

গত ৪ জুন আবু সিদ্দিক ওসমানীকে প্রেসক্রাইব করা সেফিক্সিম ১ গ্রাম নামক একটি ইনজেকশন সকাল ৯ টায় দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সকাল ৯ টার ইনজেকশন বিকেলেও কেন দেওয়া হলোনা-তা মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী দায়িত্বপালনরত চিকিৎসক ও নার্সদের কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী’র দিকে দলবল নিয়ে তেড়ে আসে, দুর্ব্যবহার ও অসদাচরণ করেন। এর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে এডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী হাসপাতালের ডি#৫ নম্বর নিজ সিট অনশন শুরু করে দেন।

সিনিয়র আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মী এডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী হাসপাতালের বেডে অনশন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি, এসএসসি ব্যাচ ৮৪ এসোসিয়েশন সহ একের পর এক বিভিন্ন সংগঠন। নিজ বেডে অনশনরত অবস্থায় মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী দীর্ঘ ১৮ ঘন্টা নাখেয়ে, ওষুধ পত্র সেবন করেননি। ফলে তিনি একজন কোভিড-১৯ রোগী হয়ে জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ে যান

পরে দীর্ঘ ১৮ ঘন্টা পর RELIEF INTERNATIONAL এর হেলথ এন্ড নিউট্রিশন প্রোগ্রাম ম্যানেজার পেট্রেশিয়া এফে আজকিয়ে SARI Isolation and treatment centre এর ডি-২ নম্বর বেডে নিজে স্বশরীরে গিয়ে পানি পান করিয়ে এডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী’র অনশন ভাঙ্গিয়েছেন। সোমবার ৬ জুন বেলা ১ টার দিকে এ অনশন ভঙ্গ করান।

তার আগে, SARI Isoletion and treatment centre এর চরম অব্যবস্থাপনা, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া, ভুল ওষুধ দিয়ে ফাইল গায়েব করা ও রোগীদের প্রতি দুর্ব্যবহারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

আরও খবর