বিনোদন ডেস্ক ◑ জন্ম নিয়েছিলেন তিনি উত্তরের বরেন্দ্রভূমির পদ্মার তীরে। জীবনের পুরো সময়ই ছিলেন শিকড়সমেত জন্ম মাটিতে। তবু আধুনিক বাংলা গানে সম্রাটের দাপটে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের সুর ও সঙ্গীতের আকাশে পদ্মার তীর থেকে ভেসে আসা অনিন্দ্য লহরী তিনি, এন্ড্রু কিশোর।
কখনো ঢাকায় স্থায়ী হননি। কাজের প্রয়োজনে আসা-যাওয়া করেছেন। রাজধানী থেকে দূরে থেকেও যে জাতীয় অঙ্গনে সরব বিচরণ করা যায়, তারও দৃষ্টান্ত তিনি। স্বকীয় মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতায় তিনি ভেঙে দিয়েছেন সেই ধারণা, যাতে মনে করা হতো সবকিছু পাওয়া যায় কেবল ঢাকা থাকলেই।
তিনি তাঁর ভরাট গলা, শাণিত উচ্চারণ, অনন্য গায়কীতে স্থান, কাল ভেদে সমগ্র বাংলাদেশের প্রিয়তম শিল্পী। জনপ্রিয়তায় তুলনাহীন। একটানা কয়েক দশক আধুনিক গান ও চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক গানে অপ্রতিদ্বন্দ্বী তিনি। ১৯৫৫ সালে জন্ম নিয়ে ৬৫ বছরের চিরতরুণ, চিরসবুজ জীবন কাটিয়ে ২০২০ সালের করোনাদগ্ধ তাপিত প্রহরে শেষ করলেন জীবনের গল্প।
গানে ও সুরে তিনি সব সময় সত্য, সুন্দর ও জীবনের কথাই বলেছেন। ১৯৯১ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে ‘জীবনের গল্প আছে বাকী অল্প’ শিরোনামে এক বেদনাবিধুর গানের মাধ্যমে স্পর্শ করেছিলেন লক্ষকোটি শ্রোতার হৃদয়। রোগে ও কষ্টে সেই জীবনের অবসান ঘটালেন তিনি এই বর্ষার ঋতুতে। বৃষ্টির সমান্তরালে কাঁদালেন অজস্র প্রিয় ভক্তকে।
শুধু এই গান নয়, শত শত গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি, যার অধিকাংশই জনপ্রিয়। যেমন, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে, সবাই তো ভালবাসা চায় ইত্যাদি অন্যতম। গত শতকের মধ্য ৭০ দশক থেকে শুরু করে একটানা চার দশক গানের জগতে রাজত্ব করে তিনি গানে গানে ভরিয়ে দিয়েছেন সারা বাংলাদেশকে, সমগ্র বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীকে।
এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সালে; মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রে আলম খানের সুরে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। এরপর বাদল রহমানের এমিলের গোয়েন্দা বাহিনীতেও কণ্ঠ দেন তিনি। ১৯৭৯ সালে প্রতিজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গান গাওয়ার পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি তাকে। তবে থামতে হয় দুরারোধ্য ব্যাধির কারণে।
ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নয় মাস ধরে ভুগছিলেন তিনি। বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে ছিলেন দেশে, প্রিয় ঠিকানা পদ্মা তীরের সেই রাজশাহীতে, বোনের বাড়িতে। সেখানে সোমবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় তার মৃত্যুতে এক অবিস্মরণীয় সঙ্গীতকারের চিরবিদায় সূচিত হয়।
তাঁর মৃত্যু বেদনায় ছুঁয়ে গেছে সমগ্র দেশবাসীকে। শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকার্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের সবাই।
করোনাকালের সঙ্কুল পরিস্থিতিতে এই ঘোরতর বর্ষায় সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে যাওয়া গুণী কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতে অনুরক্ত ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ছাত্র সবুজ মতিহারের চত্বর থেকে পদ্মা বিধৌত রাজশাহী থেকে সত্য, সুন্দর ও জীবনের গানে গানে স্মৃতির ভেলায় ভেসে জাগরিত থাকবেন সবার মাঝে, কাল-কালান্তরে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-