আনছার হোসেন, সিভি ◑
মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের মহামারির ঢেউ যেন আছড়ে পড়ছে কক্সবাজার জেলায়। একের পর এক পুরো জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও নতুন করে কক্সবাজারেই দেখা দিয়েছে অন্য এক নতুন আতংক। এতদিন মানুষ মনে করতেন, করোনায় একবার আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার শংকা নাই।
মানুষের সেই চিন্তা যেন ভুল প্রমাণিত করেছে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যেই ‘রি-ইনফেকশন’ শুরু হয়েছে। কক্সবাজারেই একাধিক করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে পুণরায় আক্রান্ত হচ্ছেন নতুন করে।
সরকারি হিসাব মতে, কক্সবাজারে দুইজনের ‘রি-ইনফেকশন’ হয়েছে। তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে ‘নেগেটিভ’ হয়েছিলেন। কয়েকদিন পর আবারও উপসর্গ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষায় ‘পজিটিভ’ হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন টেকনাফের নারী চিকিৎসক, আরেকজন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডমাষ্টার মোহাম্মদ নোমান।
সূত্র মতে, সরকারি হিসাব ছাড়া একাধিক মানুষ প্রথমবার আক্রান্তের পর দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও একাধিক রোগীর ‘রি-ইনফেকশন’ হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন কক্সবাজারের সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির। তিনি বিস্তারিত তথ্য না জানালেও সংখ্যা গুণে জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমানও জানালেন কক্সবাজারে তাঁর নজরে আছেন দুইজন রি-ইনফেকশন রোগী। আরও থাকতে পারে, তবে এখনো জানা নেই।
আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর এই দুইজনের শরীরে পুনরায় করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অস্তিত্ব পাওয়া যাওয়ার বিষয় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা রি-অ্যাকটিভেশন (শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকার পর ভাইরাসটি দ্বারা পূণরায় সংক্রমিত হওয়া) অথবা রি-ইনফেকশন (একবার পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর পুনরায় আক্রান্ত হওয়া) হতে পারে। তাছাড়া ভাইরাসটি এখন নতুন অবস্থায় থাকায় এর গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সবকিছু জানা যাচ্ছে না। তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়াদের সংখ্যা বিশ্বজুড়ে এতই কম যে, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই।
কক্সবাজারে যে দুইজন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এটাকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ‘রি-ইনফেকশন’।
তবে সতর্ক না হলে কক্সবাজারের জন্য বিপদ আছে বলেও মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধয়াক ও উপ-পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
তিনি জানান, মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব না মানলে কখনো করোনা ঠেকানো যাবে না।
তিনি কয়েকদিন আগের সদর হাসপাতালের অবস্থা জানিয়ে বলেন, কয়েকটি ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীদের সাথে অনেক স্বজন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯০ ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। তাদের সচেতন করতে গেলে উল্টো তারা তেড়ে উঠেন। এখন যদি মানুষ নিজেরা সচেতন না হয় সেক্ষেত্রে যতোই প্রশাসন কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সচেতন করানো হোক, করোনা রোগীর সংখ্যা কমবে না।
তিনি মনে করেন, যেখানে উন্নত দেশ ইতালীর সর্বোচ্চ রাষ্ট্রপ্রধান কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন তাদের কিছুই করার নেই। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। তারাও এখন করোনা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন একমাত্র মুখে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করে।
ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমাদেরও ইতালির মতো করতে হবে, না হলে মরণব্যাধি করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে না।’
কক্সবাজারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে পুণরায় আক্রান্ত হওয়া সদর হাসপাতালের কর্মকর্তা মোহাম্মদ নোমানের সাথে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তিনি এই মুহুর্তে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নোমান জানান, প্রথমে গত ২৮ মে সন্দেহভাজন করোনা টেষ্টে ‘পজিটিভ’ রিপোর্ট আসে তার। পরে নিজ বাড়ি পেকুয়া উপজেলায় বারবাকিয়ায় চলে যান। সেখানে ১২ দিন হোম আইসোলেশনে থাকার পর গত ৮ জুন করোনা পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ হন। একদিন পরেই সদর হাসপাতালে কাজে যোগদান করেন তিনি।
তার মতে, এরই মাঝে তার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে- এমন কথায় কক্সবাজারের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্লাজমা দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু গত ২৬ জুন থেকে তার শরীরে নতুন করে উপসর্গ শুরু হয়। তীব্র অসুস্থতাবোধ করলে ২৭ জুন নমুনা জমা দেন। ওইদিনই ‘পজিটিভ’ হয়ে তিনি জানতে পারেন তার শরীরে নতুন করে করোনা বাসা বেঁধেছে। গত ৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে আবারও আজ শুক্রবার (৩ জুলাই) সকালে নমুনা দিয়েছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজকেও তার নমুনায় ‘পজিটিভ’ রিপোর্ট এসেছে।
মোহাম্মদ নোমান জানান, প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি আশ্চর্য হয়েছেন। গতবারের চেয়ে বেশি উপসর্গে ভোগছেন। কয়েকদিন খুব বেশি অসুস্থ থাকলেও এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-