কীর্তিকর্মের জন্য কী বেঁচে থাকবেন সারাজীবন?

কর্মজীবন থেকে বিদায়ের স্মৃতি কখনো সুখের, কখনো দুঃখের। নানা স্মৃতি বুকে নিয়ে এই বিদায় মনে করিয়ে দেয়, মানুষের জীবন খুবই ছোট। একসময় তাকে সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে। মৃত্যুর পরে মানুষকে স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখবে তার কাজ। ধনে নয়, মানে নয়, খ্যাতিতেও নয়; কর্মেই মানুষের পরিচয়।

বিদায় নিয়ে স্যারের অনেক গল্পও রয়েছে । স্যারের কর্মজীবনে যাঁদের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন তাঁদের সঙ্গে মজার মজার স্মৃতি যেমন রয়েছে, তেমনি অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তেমনি এক ব্যক্তির কর্মজীবন শেষে কর্মস্থল থেকে বিদায় নেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত একটি বিদায় সংবর্ধনার অনেক স্মৃতি শেষ করে দেয়।
স্যারের অনুভূতির প্রকাশ ছিল চোখের পানিতে।

মানবজীবনে সর্বশেষ যে বিদায় অবধারিত হয়ে আসে তার নাম মৃত্যু। মানবজীবনে মৃত্যুর মতন আরো অনেক বিদায় আছে যা খন্ড খন্ড স্বৃতি গুলো বুকের একপাশ নিয়ে বিষাদ তিক্ত গ্রহণ করে কর্ম জীবন থেকে বিদায় নেওয়া।

মানব শিশু ভূমিষ্ট হয়েই কাদতে থাকে,সে কেন কাদে?
সে তো কাদবেই এতদিন মায়ের নাড়ির সঙ্গে যে তার বন্ধন ছিল সেটি যে আজ ছিন্ন হয়ে গেল।
একজন শিক্ষাগুরুর কাছে দীর্ঘদিন জড়িত থাকা মায়াভরা প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নামক এক পাহাড় দিয়ে যাওয়া এর চেয়ে কষ্টকর আর কিছুই হতে পারেনা।

কারণ নিজের কর্মস্তান এবং স্মৃতি জড়ানো ভালবাসা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এর চেয়ে কষ্টকর আর কিবা হতে পারে।বিদায় বেলা কষ্টের মাঝেও এক রকম আনন্দ থাকতে পারে যদি সান্তনার সংকট না থাকে।

এই কষ্টে মাঝখানেও স্যার আমাদের ভালবাসার উক্তি উপহার দিয়েই আমাদের সান্তনা দিচ্ছে।
প্রফেসর এ.কে.এম ফজলুল করিম চৌধুরী যার কাছে কক্সবাজার সরকারি কলেজ নামে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিলনা ছিল একটা মায়াভরা ভালবাসা এবং সবাই কে নিয়ে একটি পরিবার।

এখন এই ভালবাসা এবং মায়া মমতা জড়ানো পরিবার তার কাছে ফেলে যেতে তার প্রতিটি লোমে লোমে তিক্ত তিক্ত কষ্টের ভোগান্তি অনুভব করতে হচ্ছে।

বিকেল বেলা চেয়ার নিয়া অফিসের বাইরে বসা এবং সকালে নিজহাতে ফুলবাগান চর্চা করা হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভালবাসা ও মায়া মমতা এবং কলেজের নেতৃিবৃন্ধদের ফেলে যাওয়া তার কাছে যেন এক সন্তান হারা হয়ে যাচ্ছে এমন ও বটে।
সেই ভালবাসা শেষ কোথায়?

তিনি যখন বিদায়যাত্রী এই ভালবাসা আর পাবেও বা কোথায়।বছর এর পর বছর হৃদয় জোড়ানো সৃতিময় এই ভালবাসা আমরা আর পাবো কি।তাকে কি আর দেখবো কলেজ চলাকালিন কর্ণারে একটি কালো চেয়ারের বসা হাজারো ব্যাস্ততার মধ্যে?

এই বিদায় মূহুর্তে তিনি এক অসাধারণ আমাদের যেই উক্তি বুজানোর চেষ্টা তা হল :-
আমি যাকে ভালবাসি তাকে চিরদিনের জন্য ভালবাসি,কখনো বিদায় দিই না।
প্রফেসর এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী।

চিরবিদায় হলেও স্যারের কীর্তিকর্ম উনাকে বাঁচিয়ে রাখবে সারাজীবন।

তিনি বলেছেন, ‘পুরস্কার পেয়ে নিজের কাজের দায়িত্ববোধ বেড়ে যাবে, এটা বলব না। কারণ শিক্ষাকে কখনো দায়িত্বহীনভাবে চর্চা করিনি। পুরস্কার মানুষকে আনন্দ দেয়, সম্মান বাড়ায়; আর সেটা দায়িত্ববোধের চর্চা থেকেই।’ আসলেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের যেসব মানুষ সমাজ উন্নয়নে, শিক্ষার প্রসারে, সর্বোপরি জনকল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের কজন পুরস্কৃত হচ্ছেন বা হয়েছেন? তাঁরা কিন্তু মূল্যায়ন বা পুরস্কারের লোভে কাজ করেন না, করেন নিজের দায়বোধ থেকে। নীরবে-নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণে। আর আমাদের মধ্যে যারা কাজে নয় কথায় বিশ্বাসী, তাদের মধ্যে এই দায়বোধের অভাবটা পরিলক্ষিত হয় বেশি।

আবার সেই বিদায় প্রসঙ্গ…

একটি গানে শুনেছি, ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’, কিন্তু সব ভুলে আর্থ-সামাজিক কারণে সেই মানুষই আজ হয়ে পড়েছে স্বার্থপর। আত্মস্বার্থ, ব্যক্তিলোভ কেড়ে নিয়েছে মানুষের মানবিক গুণ, মানব জন্মের শ্রেষ্ঠত্ব, সার্থকতা।

কিন্তু আশার কথা হলো, মানবসত্তা ও মানবিক গুণের কখনোই মৃত্যু হয় না। অনেক জাগতিক স্বার্থের নিচে তা চাপা পড়ে থাকলেও তাকে জাগিয়ে তোলা যায়। মহানুভূতি ও সহানুভূতিতে জেগে উঠতে পারে মানুষ, নিজেকে করতে পারে মানবসেবায় উৎসর্গ, যা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে অনন্তকাল।

জয়নাল আবেদিন জয়
উচ্চ মাধ্যমিক (ব্যবসায় শিক্ষা)
কক্সবাজার সরকারি কলেজ।

আরও খবর