কত অসহায় হয়ে পড়েছি আমরা। চারদিকের হাহাকার ধ্বনি, মানুষের লুকানো দীর্ঘ নিশ্বাস আমাদের পরিবেশকে প্রতিনিয়ত ভারী করে তুলছে। একজন আরেকজনকে যে সান্ত্বনা দেবে তার ভাষাও তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
মায়ের সামনে তার ছেলে মৃত্যু বরণ করছেন। স্বামী স্ত্রীকে হারাচ্ছেন। স্ত্রী স্বামীকে বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ করছেন। কামাল লোহানীর মত বিশিষ্ট জনদের প্রতিনিয়ত আমরা হারিয়ে ফেলছি। মৃত্যুর তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। করোনার কালো থাবায় সুন্দর গোছানো একটি পরিবার দ্রুত ভেঙে পড়ছে। মেডিকেল এর জরুরী বিভাগে গেলে বুঝা যাবে মানুষ তার পরিজনকে নিয়ে কিভাবে ছুটে চলেছেন।
কখনো সিট সংকট, আবার কখনো অক্সিজেন সংকট। আবার চিকিৎসা সেবা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেন। যখন করোনা ভাইরাসের আক্রমণ ছিলনা তখন যে সরকারী হাসপাতালগুলোর কিছু সেবক সেবিকাদের ব্যাবহার খুব যে ভাল ছিল তা কিন্তু নই।
একজন রোগী এবং তার আত্মীয় স্বজনদের সাথে কিভাবে ব্যাবহার করতে হবে তার যতেষ্ট ঘাটতি ছিল। একবার আমি আমার শ্বশুরকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে গিয়েছিলাম। একটা ইনসুলিন দেওয়ার জন্য তিন জন সেবিকাকে অনুরোধ করেছিলাম। শেষে যে সেবিকা এসেছিলেন তিনি আমাকে দুই চারটি কথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন। আমি নিরুপায় হয়ে রোগীর কথা চিন্তা করে সেবিকা সাইনবোর্ডধারী এস. এস.সি পাশ করা ছোট মেয়েটির কথা হজম করেছিলাম। যেখানে আমাদের আচরণগত সমস্যা ছিল সেখানে আজকে করোনা রোগীদের সাথে কিভাবে ব্যাবহার করা হচ্ছে তা চিন্তার বিষয়। আবার কিছু ভালো মনের সেবিকা অথবা ডাক্তার রয়েছেন যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন।
যারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের অবদানের কথা আমরা ভুলতে পারবনা। অনেক সেচ্ছাসেবী সংগঠন মানুষের সেবা করার জন্য এগিয়ে এসেছেন। আবার অন্যদিকে বিপরীত চিন্তার মানুষও সমাজে দেখি। মানুষ এখন অনেক ক্ষেত্রে বন্ধুহীন হয়ে পড়ছেন। আত্মীয় পরিজন একে অপর থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছেন। এমন কিছু সংবাদ মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে তা সত্যি অনেক করুণ। সাধারণ পরিবারের কেউ করোনা ভাইরাসে মারা গেলেন তাহলে দেখা যাবে মৃত ব্যাক্তির লাশ সৎকারের জন্য পাশে অনেকসময় কাউকে পাওয়া যায়না। একদিকে চলছে জীবন জীবিকার সংগ্রাম আর অন্য দিকে চলছে করোনা আক্রমণের আতংক।
পৃথিবীতে এত কিছু হচ্ছে তারপরও কিছু অবিবেচক মানুষ এই দুরাবস্থাকে পুঁজি করে আংগুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। অনেক বিত্তবানদের দেখা যাচ্ছে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন।
ইতিমধ্যে অনেকে কর্মহীন হয়ে শহর থেকে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। এই করুণ পরিস্থিতিতে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করা দরকার। সেবামূলক মনোভাব জাগ্রত করা খুব জরুরী। আমাদের সমস্ত আত্ম অহংকার বিসর্জন দিয়ে মানবতার পাশে এসে দাঁড়ানোর চিন্তা নিয়ে এগিয়ে চলা দরকার।
রূপম চক্রবর্ত্তী
পূর্বনলুয়া,সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম
মোবাইল-০১৮১৯৮৬৫৩৭৪
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-