মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া ◑
আলহাজ্ব জওশন আরা (৭০) ও নুরুল ইসলাম (৫০)। ১৮ জুন বৃহস্পতিবার পৃথক সময়ে জওশন আরা ঢাকার একটি বেসকারি হাসপাতালে ও নুরুল ইসলাম রামুর আইসোলেশন সেন্টারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দুইজনই চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা।
আলহাজ্ব জওশন আরা চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশকাটার জমিদার মরহুম আলহাজ্ব এনামুল হক চৌধুরীর স্ত্রী। অপরজন নুরুল ইসলাম চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের পূর্ব নয়াপাড়ার বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রামের ওয়েল গ্রুপে চাকুরী করতেন। তার স্ত্রী ও দুটি অবুঝ শিশু রয়েছেন। তাদের দুইজনরই রয়েছে স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মীয় পরিজন। কিন্তু শেষ বিদায়ে তাদের দাফন-কাপনে অংশ নেয়নি কেউ।
মৃতদের গোসল, জানাজা ও দাফনসহ নানা কাজে পাশে দাঁড়ালেন চকরিয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন মঞ্চ ও ইসলামি ফাউন্ডেশনের পাঁচ সদস্য। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজের কাছ থেকে খবর পেয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে লাশ দাফনের জন্য ছুঁটে যান এসব যুবক।
মরহুম আলহাজ্ব জওশন আরার দেবর চকরিয়া আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শহিদুল্লাহ বলেন, জওশন আরা সন্তানদের সাথে ঢাকায় থাকতো।
গত কয়েকদিন আগে ওনার জ্বও হয়। পরে ১৪ জুন তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। এতে তার করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়।
তবে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এরমধ্যে ওনার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে গত বুধবার রাতে তাকে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি ওই হাসপাতালে মারা যান। পরে রাতে তাকে চকরিয়ার নিজ গ্রামে নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরো বলেন, মৃতদেহ নিজ গ্রামে আনা হলেও দাফনের জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তার আত্মীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন মঞ্চ ও ইসলামি ফাউন্ডেশনের কয়েকজন যুবক এসে লাশের গোসল, জানাজা ও দাফন কাজ করেন।
শহিদুল্লাহ বলেন, জওশন আরার ছেলে-মেয়ে,পুত্রবধু, মেয়ে জামাইসহ অনেক আত্মীয় রয়েছেন। তবে ছেলে-পুত্র বধুরা বাসায় কোয়ারাইন্টানে রয়েছেন। যার কারণে তারা কেউ আসেননি। তবে মেয়ে ও মেয়ের জামাইরা জানাজায় অংশ নিয়েছেন।
অপরদিকে, খটুখালীর নুরুল ইসলাম করোনায় মারা সংবাদ পেয়ে এগিয়ে আসেনি তার কোন আত্মীয়-পরিজন। লাশ দাফনের জন্য পাওয়া যাচ্ছিলো কোন মানুষ। পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন মঞ্চ ও ইসলামি ফাউন্ডেশনের কয়েকজন যুবক গিয়ে ওই লাশ দাফন করেন।
মরহুম নুরুল ইসলামের স্ত্রী রোকসানা আক্তার বলেন, চলতি মাসের ১১ তারিখ আমার স্বামীর জ্বর হয়। পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। ১৩ জুন তারা তার করোনার পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে। পরে তার করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। এরপর তাকে রামু আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পর তার ডায়রিয়া শুরু হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি মারা যান বলে খবর পায়।
তিনি আরো বলেন, আমার স্বামী করোনায় মারা যাওয়ার খবরে এলাকায় কেউ দাফন করার জন্য আসেনি। পরে চকরিয়া থেকে স্বাধীন মঞ্চ ও ইসলামি ফাউন্ডেশনের কয়েকজন যুবক এসে আমার স্বামীর গোসল, জানাজা থেকে শুরু করে দাফন করিয়েছেন।
দাফন কাজে অংশ নেয়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন মঞ্চের তিন স্বেচ্ছাসেবক (্উপ-সমন্বয়ক) সৌরভ মাহাবী, সরওয়ার ইমরান নীল ও জায়েদ হোসেন নয়ন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল স্যারের কাছ থেকে জানতে পারি দুইজন করোনায় মৃতদেহ দাফন করতে হবে। সাথে সাথে আমরা লাশ দাফনের জন্য বের হয়ে পড়ি।
বৃহস্পতিবার রাতে বয়স্ক মহিলার ও শুক্রবার সকালের দিকে এক ব্যক্তির লাশের গোসল, জানাজা শেষে দাফন কাজে সমাপ্ত করেছি।
এতে আমাদের সাথে ছিলেন চকরিয়া ইসলামি ফাউন্ডেশনের সুপারভাইজান মাওলানা আমির হোসেন ও হাফেজ মাহবুবুল আলম।
তারা আরো বলেন, স্বাধীর মঞ্চ বিভিন্ন সামাজিক কাজে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। করোনা মহামারি এই সময়ে লাশ দাফন আমাদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা। দেখা গেছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর তার আত্মীয়-পরিজন কেউ পাশে থাকছেনা। এসব কথা চিন্তা করে ইসলামি ফাউন্ডেশন ও স্বাধীন মঞ্চ যৌথভাবে করোনায় মৃতদের লাশ দাফনে কাজ করার সিদান্ত নেয়।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুইজনের লাশ দাফনের জন্য এলাকার কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরে বিষয়টি ইসলামি ফাউন্ডেশনের সুপারভাইজার ও স্বাধীন মঞ্চের সদস্যদের জানানো হয়। তারা লাশ দাফনের কাজে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এদিন রাতে বয়োবৃদ্ধ মহিলা ও শুক্রবার সকালে এক ব্যক্তির লাশ দাফন করেন। তিনি এ কাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের ধন্যবাদ জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-