বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষ্যে কোস্ট আয়োজিত ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তাদের অভিমত

করোনা মোকাবেলায় কক্সবাজারের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বিত পরিকল্পনা দাবি

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ◑

রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে করোনার সংক্রমণ হতে বাঁচাতে, এই সংকটকে সাফল্যজনকভাবে মোকাবেলা করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন এবং সকল প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনসাধারণ, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, স্থানীয়-জাতীয় এনজিও এবং জাতিসংঘ সংস্থার অংশগ্রহণ আবশ্যক।

আগামী ২০ জুন অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তাগণ এ সব অভিমত প্রকাশ করেন।

১৮ জুন কোস্ট ট্রাস্ট আয়োজিত সবার উপরে মানুষ সত্য: কোভিড-১৯ ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শীর্ষক সেমিনারটি সভাপতিত্ব করেন উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী।

কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার।

বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী।

ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তব্য রাখেন- রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, হোয়াইকং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নূর আহমেদ আনোয়ারী, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী, ইউএনএইচসিআর এর লাইভলিহুড অফিসার সুব্রত কুমার চক্রবর্তী, উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব সভাপতি শফিক আজাদ, ভয়েস অব উখিয়া সম্পাদক নূর মোহাম্মদ সিকদার, টেকনাফ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী মুসা, পালস এর নির্বাহী পরিচালক আবু মোর্শেদ চৌধুরী, মুক্তির নির্বাহী পরিচালক বিমল দে সরকার, হেল্প কক্সবাজারের আবুল কাশেম, ডিজাস্টার ফোরামের গওহর নাঈম ওয়ারা, আব্দুল লতিফ খান, নাহাব এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যারিস্টার মনজুর আহমেদ।

সেমিনারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণের আশংকাটা আমরা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে পেরেছি, এ জন্য ভূমিকা ছিলো সংশ্লিষ্ট সকলের। করোনা প্রতিরোধে শিবির এলাকায় কর্মরত ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতি ২০% এবং যানবাহনের সংখ্যা ১০% এ নামিয়ে আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা রোগীদের জন্য ২৩০টি আইসোলেশন বেড তৈরি করা হয়েছে, খুব শীঘ্রই ১৯০০ বেডের হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। ৩৩৬ টি চিকিৎসা বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয়দের জন্য আমরা কক্সবাজার হাসপাতালে পিসিআর মেশিন আনা হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের মানুষের প্রয়োজন, চাহিদা স্থানীয় এনজিওগুলো বেশি ভাল বুঝে, তাঁরা সবসময়ই এদের পাশে থাকে। এটা অব্যহত রাখতে হবে।

হোয়াইকং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর আহমেদ আনোয়ারী বলেন- স্থানীয় মানুষকে সচেতন করতে, তাদেরকে স্ব্স্থ্যা বিধি মেনে চলতে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় এনজিওরা এগিয়ে আসতে পারে। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছে, তাঁদের সহযোগিতা দরকার এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লোকবলের অভাব। এসব ক্ষেত্রে এনজিওদের এগিয়ে আসতে হবে।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, মধ্যবিত্ত অনেকে এখন সংকটে আছে, তাদের বিশেষ সহযোগিতা প্রয়োজন।

ইউএনএইচসিআরের লাইভলিহুড অফিসার সুব্রত কুমার চক্রবর্তী জানান- ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় ২০ জুন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ১০ বেড সম্মৃদ্ধ আইসিইউ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ৬০০০ পরিবারকে ইতিমধ্যে সবজি বীজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ২৮০ জন স্বাস্থ্য কর্মী, ২৫০ জন ক্লিনিক্যাল টেকনোলজিস্ট এবং ১৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবককে করোনা ভাইরাসের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

উখিয়া অনলাইন প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিক আজাদ বলেন, অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে চলে আসেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে তাদের চলাচল সতর্কতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

টেকনাফ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী মুসা বলেন, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সিলেবাস ও পরীক্ষার নম্বর ব্যবস্থা পুনর্বন্টন করতে হবে। ছুটির পর শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে শিফট ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমে গুরুত্ব দিতে হবে।

ভয়েস অব উখিয়ার সম্পাদক নূর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন।

হেল্প কক্সবাজারের আবুল কাশেম বলেন, স্থানীয় এনজিওরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। অগ্রযাত্রার মো. হেলাল বলে, সিস্এিনএফের নির্দেশনায় স্থানীয় এনজিওরা দরিদ্র পরিবারগুলোর পাশে দাড়াচ্ছে।

দুর্যোগ ফোরামের গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে লবণ, শুটকি ও জ্বালানী স্থানীয়ভাবে স্থানীয় মানুষ সরবরাহ করতে পারলে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান এবং আর্থিক সুযোগ বাড়বে। ধানের কুড়াকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পালসের নির্বাহী পরিচালক আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন পণ্য সেবার চাহিদা আছে। সেই চাহিদামতো পণ্য ও সেবার সরবরাহ স্থানীয়রা করতে পারে। সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। নাহাবের আব্দুল লতিফ বলেন, রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগষ্ঠেীকে করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সকলের অংগ্রহণমূলক একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বজুড়ে যে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে, তাকে উপলক্ষ করে আমাদের অর্থিক সুযোগুলো নিতে হবে। আর এই মানবিক দুষ্টান্ত অব্যহত রাখা জরুরি। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় কর্মসুচি বাস্তবায়নের নেতৃত্ব স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকলে তা টেকসই সমাধানে সহায়ক হবে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, যেহেতু করোনায় আক্রান্ত হলে কোনও চিকিৎসা এই মুহূর্তে নাই, আমাদের তাই এটির প্রতিরোধেই বেশি সতর্ক থাকতে হবে। আর এটি প্রতিরোধে সবারই এগিয়ে আসতে হবে। জনপ্রতিনধিতের অংশগ্রহণ এবং উদ্যোগ এক্ষেত্রে খুব জরুরি।

আরও খবর