আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ’। মুসলিম জীবনে ঈদ স্রষ্টার এক অমূল্য নিয়ামত। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার এক স্বর্গীয় মাধ্যম, আসমানি তাকিদ। ঈদ এলেই খুশির বান ডাকে মুসলিম জাহানে।
পবিত্র মাহে রমজানে রোজা, ইফতার, তারাবিহ, লাইলাতুল কদর পালন, কুরআন তিলাওয়াত, জাকাত-ফিতরা ও দান-খয়রাত প্রদান ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে সবাই গ্রহণ করেন আত্মশুদ্ধির মহান দীক্ষা।
ঈদুল ফিতর আসে তারই পূর্ণতার সুসংবাদ নিয়ে। ঈদুল ফিতরের শাব্দিক অর্থ আসলে রোজা ভঙ্গের আনন্দ। এক মাস রোজা পালনের মাধ্যমে একজন রোজাদার যাবতীয় গুনাহ হইতে মুক্ত হয়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় মাসুম বা নিষ্পাপ ব্যক্তিতে পরিণত হন। এতে তিনি যে আত্মিক প্রশান্তি লাভ করেন, তারই আনন্দঘন মুহূর্ত হচ্ছে ঈদুল ফিতর।
আইয়ামে জাহিলিয়াত তথা ইসলামপূর্ব অন্ধকার যুগে আরব দেশে উকাজ মেলাসহ নানা প্রকার উৎসব জনপ্রিয় ছিল। সেই সময় মদিনার আনসারগণ ‘মিহিরজান’ ও ‘নওরোজ’ নামে দুইটি উৎসবও পালন করতেন। মহানবি হজরত মুহম্মদ (স) মদিনায় হিজরত করে এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্যহীন আনন্দ-উৎসবের পরিবর্তে আত্মশুদ্ধির পবিত্র স্পর্শময় ও বহুবিধ মানবকল্যাণধর্মী ঈদুল ফিতরের প্রবর্তন করেন এবং ঘোষণা করেন-‘লিকুল্লি কওমিন ঈদ, হা-যা ঈদুনা’। অর্থাৎ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব আনন্দ-উৎসব আছে। আমাদের এই আনন্দ-উৎসব এই ঈদ।
এই ঈদুল ফিতর আমাদের ন্যায়, সাম্য, ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, দয়া, মানবতা, সহানুভূতি ও মহামিলনের শিক্ষা দেয়। ঈদ আমাদের অন্যায়-অবিচার, ঘৃণা-বিদ্বেষ ও হানাহানি-কাটাকাটি হইতে বিরত থাকতে বলে। কবির ভাষায়—‘আজ ভুলে গিয়ে দোস্ত দুশমন হাত মিলাও হাতে/ তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ’। রোজাদারদের আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভের কারণেই আমাদের মধ্যে দূর হয়ে যায় সকল সংকীর্ণতা ও ভেদাভেদ। মূলত ঈদ যে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে, তার মর্মমূলে রয়েছে শান্তি ও ভালোবাসা। পরস্পরের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হয়ে উঠবার এক মহান উপলক্ষ এই ঈদ। ঈদের আগমনী সুরে আজ বেজে চলছে মানুষে মানুষে মিলনেরই আকুতি।
কিন্তু এই বছর করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব আতঙ্কিত। তাই নিজের মত করে এবারের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে পারবে না মুসলমানরা। তবে পরিস্থিতি খারাপ হলেও কক্সবাজারসহ দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা।
সবাইকে আমার ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদের সময়টা আপনারা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। আমি আশা করব এই কঠিন সময়েও যেন সবাই মুখে হাসি নিয়ে ঈদ উদযাপন করে। ঘরে থেকেই ঈদের আনন্দ উদযাপন করুন। এখন সময়টা অনেক বেশি ভিন্ন। বিশ্বের সবাই একই পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। তবে এটাই প্রার্থনা থাকবে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাক। সবাই ভালো থাকুক।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমরা সকলের সুখ-শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতি কামনা করি। আমাদের প্রিয় পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীসহ সবাইকে জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের অনাবিল শুভেচ্ছা—ঈদ মোবারক।
শুভেচ্ছান্তে
আবদুল্লাহ আল আজিজ
সম্পাদক ও প্রকাশক
কক্সবাজার জার্নাল ডটকম
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-