তিনি কখনো র‍্যাব, কখনো সিআইডি!

নিজস্ব প্রতিবেদক ◑
কখনো গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, কখনো পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), আবার কখনো র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সদস্য, কখনো বা সেনা সদস্য বলে পরিচয় দেন তিনি। এছাড়াও এলাকায় হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়, জমির মালিক ও এলাকাবাসীকে মামলার ভয় দেখানোসহ একাধিক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

এবার খোদ তারই আপন মামাকে হুমকি দিয়ে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মধ্যম নিদানিয়া গ্রামের পুত্র আশেক উল্লাহর বিরুদ্ধে।

তার আপন মামা নিদানীয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ আবদুল্লাহ জানান, নিদানীয়া এলাকায় একটি বাড়ি বানাতে গেলে আশেক উল্লাহ ২লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে বসে। কিন্তু তাকে টাকা দিতে নারাজ হলে সে ক্ষেপে যায় এবং আমার অনুপস্থিতিতে তার একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়ে বাড়ি নির্মাণাধীন জায়গায় গিয়ে যাতে কাজ করতে না পারে সে জন্য মিস্ত্রিকে মারধর করে তৈরিকৃত একটি ওয়াল ভেঙ্গে দেয় ও ৬০টি তৈরিকৃত পিলার, আড়াই হাজারের মত ইট ও বাড়িতে লাগানো একটি দরজা নিয়ে যায়। পরে কর্মরত মিস্ত্রিদের চিকিৎসার খরচসহ আমার অনেক টাকার ক্ষতি হয়। এছাড়া তার হুমকিতে প্রতিনিয়ত ভয়ে দিন কাটাচ্ছি এবং নির্মাণাধীন কাজ বন্ধ রেখেছি।

তিনি আরো জানান, সম্প্রতি সে আমার বড় ভাইয়ের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য নানান ধরনের নাটক শুরু করেছে। আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ হলে আমরা প্রত্যেকে ৫০ শতক করে জমি পায়। কিন্তু আশেক উল্লাহ বিভিন্ন অভিযোগ উল্লেখ করে সে জমি ভাগ হয়নি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ভিডিও ছড়িয়েছে। সেখানে সে দেখিয়েছে আমার আপন বড় ভাই কলিম উল্লাহর থাকার জায়গা না থাকায় সে থেকে একটি গোয়ালঘরে থাকছে। কিন্তু তার বানানো ভিডিওটি ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। কেননা বড় ভাই কলিম উল্লাহ থাকেন আমাদের পৈত্রিক ভিটায়।

অন্যদিকে বড় ভাই কলিম উল্লাহর সংসার বিদেশে এবং বর্তমানে পুত্রসন্তানহীন হওয়ায় ভাগিনা আশেক উল্লাহকে তিনি খুব বিশ্বাস করেন। কিন্তু সেই আশেক উল্লাহ তার সরলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ থেকে পাওয়া ৫০শতক জমি তারই অগোচরে টিপসই নিয়ে স্থানীয় এক যুবককে ৮০লাখ টাকায় বিক্রির জন্য নোটারী স্টাম্প করে। সেখানে বিক্রির ১০লাখ টাকার কাছাকাছি সে নগদ নিয়ে ফেলে এবং বাকি টাকা জমি বুঝিয়ে দেওয়ার পর নিবে এই মর্মে চুক্তিপত্র করে নেয়। যেখানে বড় ভাই কলিম উল্লাহ কিছুই জানতো না। জানতো না আশেক উল্লাহর এতসব কুকীর্তি। তাই তার সরলতার সুযোগ নিয়ে আশেক উল্লাহ এমন ঘৃণ্য অপরাধ করে। পরে তা বিস্তারিত ডকুমেন্টস সহকারে গণমাধ্যমে খবর আসলে তার কুচক্রী কাজ এলাকাবাসী জানতে পারে। তাই বৃদ্ধ কলিম উল্লাহ অসহায় হওয়ায় আশেক উল্লাহর এই জঘন্যতম কাজের বিষয়টি তদন্ত করতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।

কিন্তু ক’দিন আগেও আশেক উল্লাহ আমাদের মানহানি করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইকে সম্পত্তি দেইনি বলে ভিডিও বার্তা ছড়িয়েছে। যেখানে অযথাই আমাদের বিরুদ্ধে অনেক কথাই বলেছে সে। এখন কথা হলো যদি সম্পত্তি নাই দেওয়া হয় তবে সে বড় ভাই কলিম উল্লাহর ৫০শতক সম্পত্তি কিভাবে বিক্রি করে?
মূলত কলিম উল্লাহর সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই সে এসব কাজ করে যাচ্ছে।

আশেক উল্লাহ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সময় অস্ত্রসস্ত্রসহ হুমকি দিয়ে যাচ্ছে যার কারণে আমাদের পরিবার সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। কিন্তু এ দেশে যতদিন আইন আছে তাকে কখনোই চাঁদা দিব না। আমি চাই এ খবর দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৌছুক। তিনি কখনোই চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সঠিক বিচার চাই।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, আশেক উল্লাহ তার এলাকায় ক্রাইম রাজত্বের পর এলাকাবাসী চাওর হলে বেশকিছু দিন ঢাকায় পলাতক ছিল। কিন্তু ঢাকা থেকে এসে একটি আনসার বাহিনীর কার্ড ঝুলিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাহিনীর পরিচয় দিয়ে থাকে। এছাড়া এলাকায় মানুষকে নানান ভাবে হয়রানি করে। তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে গেলেই সে নানানভাবে হুমকি প্রদান করে যার কারণে ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনা। কিন্তু সে আদৌ কোন বাহিনীতে আছে কিনা তা নিয়ে এলাকাবাসীর মনে সন্দিহান।

আশেক উল্লাহর মামা শেখ আবদুল্লাহ জানান, বেশ কয়েকবার তার জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও সে ভবিষ্যতে কোন অন্যায় করবেনা মর্মে থানায় মুচলেখা দিয়েছিল। কিন্তু সে সবকিছু অমান্য করেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে এহেন কাজ করেই যাচ্ছে। আর কেউ তার কিছু কর‍তে পারবেনা বলে হুমকী দেয় উল্টো।

আশেক উল্লাহর বিষয়ে জানতে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার ব্যাপারে এমন অনেক অভিযোগ শুনেছি। সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পরিচয়ে এলাকায় বীরদর্পে চলাফেরা ও মানুষকে হয়রানি করে।

অভিযোগের বিষয়ে আশেক উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে সে তা অস্বীকার করে নিজেকে সঠিক দাবী করে বলেন, এ সবের সাথে তিনি জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র।

তিনি আরো বলেন, জুমাবার তার এলাকায় গেলে তিনি কেমন মানুষ তা জানা যাবে।

কিন্তু সরেজমিনে গেলে বিস্তারিত ডকুমেন্টস দেখে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যায়।

এলাকাবাসী তার কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও অসহায় কলিম উল্লাহর সম্পদ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আরও খবর