এবার করোনা রোগী খুঁজতে পুলিশের তথ্যপ্রযুক্তি

চট্টগ্রাম ◑ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করতে পুলিশকে রীতিমতো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে হচ্ছে। নমুনা দেয়ার সময় হাসপাতালে অনেকে নাম, ঠিকানা আর মোবাইল নম্বর ভুল দিচ্ছে। হাসপাতাল থেকে দেয়া ঠিকানায় গিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর হদিস মিলছে না। আবার অনেকে করোনা আক্রান্ত হবার বিষয়টি জেনে মুঠোফোন বন্ধ করে দিচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগী খুঁজতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হচ্ছে পুলিশকে। এরমধ্যে করোনা জীবাণু বহনকারী কোথায় কোথায় যাচ্ছে তা জানা যাচ্ছে না।

নগর বিশেষ শাখার উপ কমিশনার (ডিসি) আবদুল ওয়ারিশ বলেন, শুরুর দিকে মানুষ নাম ঠিকানা সঠিক দিয়েছিল। কিন্তু গত দুই তিনদিন ধরে কয়েকটি ঠিকানায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট রোগী পাওয়া যায়নি এমন খবর বিভিন্ন থানা থেকে আসছে। আবার অনেকে করোনা আক্রান্ত হবার খবর পেয়ে ইচ্ছে করে মুঠোফোন বন্ধ রাখছে। পরে ফোন অন করলে তাদের পাওয়া যাচ্ছে।

গত ৪ মে বিআইটিআইডি’তে করোনার নমুনা দিয়ে আসেন মাসুদ (৪০) নামে এক যুবক। ঠিকানা দিয়েছেন কদমতলী চট্টগ্রাম। গত ৮ মে মাসুদের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। নিয়ম অনুযায়ী মাসুদের ঠিকানা পাঠানো হয় সদরঘাট থানায়। কিন্তু মাসুদের খোঁজ অদ্যাবধি পায়নি পুলিশ।

কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) নোবেল চাকমা জানান, বিআইটিআইডি থেকে বলা হয়েছে মাসুদ করোনা আক্রান্ত। হাসপাতাল থেকে তার যে মোবাইল নম্বরটি দেয়া হয়েছে তা বন্ধ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে খুঁজে বের করার।

একইদিনে (৪ মে) জনৈক সোলেমান করোনার পরীক্ষা করতে নমুনা দিয়ে আসেন। গত ৮ মে ওই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ আসে। বিষয়টি বিআইটিআইডি থেকে পুলিশকে জানানো হয়।

পুলিশ ওই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করার পর অপর প্রান্তের লোক নিজেকে শামসুল আলম (৫০) বলে দাবি করে বলেন, তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে, নগরীর হালিশহরে নয়। গত চারমাস রাঙ্গুনিয়ার বাইরে কোথাও যাননি দাবি করে বলেন, করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনাও দেননি তিনি।

হালিশহর থানার পরিদর্শক (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, সরফভাটার ওই ঠিকানায় রাঙ্গুনিয়ার থানার পুলিশ গিয়ে খোঁজ নিয়েছে। হাসপাতাল থেকে যে মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে ওই নম্বরটি সরফভাটার শামসুল আলম ব্যবহার করছেন। তিনি গ্রামেই থাকেন। সোলেমান নামে করোনা আক্রান্ত ওই রোগীকে আমরা এখনো খুঁজছি।

ওসি রফিক বলেন, অনেকে করোনা আক্রান্তের সংবাদ পাবার পর মুঠোফোন বন্ধ করে দিচ্ছেন। যেমন-গত রবিবার রাত থেকে করোনা আক্রান্ত দুইজন রোগীকে আমরা খুঁজছি। তারা মুঠোফোন বন্ধ রেখেছেন। রোগীর অবস্থান জানতে অনেক সময় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিতে হচ্ছে।

হাসপাতাল থেকে দেয়া করোনা আক্রান্ত এক রোগীর ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, ওই নামের কোন ব্যক্তি সেখানে কখনো ছিলো না। কিন্তু ওই রোগীকে দুইদিন ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছে পাহাড়তলী থানা পুলিশ।
পাহাড়তলী থানার পরিদর্শক (ওসি) মাইনুর রহমান জানান, গত ৯ মে হাসপাতাল থেকে করোনা আক্রান্ত একজন রোগীর ঠিকানা দেয়া হয়। ওই রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা আর লকডাউন করতে গিয়ে দেখা যায় ওই ঠিকানায় এ নামের কোন ব্যক্তি নেই। লোকজন জানিয়েছেন উক্ত নামে কোন ব্যক্তি সেখানে কখনো ছিলো না। হাসপাতালে যে মোবাইল নম্বরটি দেয়া হয়েছে তাও বন্ধ।
ওসি মাইনুর বলেন, এর আগে আরেকজন ব্যক্তি মারা গেছেন। পরে দেখা যায় করোনা আক্রান্ত হবার কারণে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। হাসপাতাল থেকে তথ্য দেয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী ওই পরিবারের সাথে আমরা যোগাযোগ করলে তারা

পুলিশের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তারা কোনমতেই মানতে রাজি নন মারা যাওয়া পরিবারের সদস্যটি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

এর আগে নগরীর বাকলিয়ায় এক লোক নমুনা জমা দেওয়ার সময় ভুল ঠিকানা ব্যবহার করেন। ফলাফল পজিটিভ আসার তিনদিন পর তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ ওই লোককে শনাক্ত করে বাসা লকডাউন করে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া অনেকের এ ধরনের ভুল ঠিকানা ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, গোপনীয়তা বজায় রাখার মানসিকতা থেকে অনেকে এই পথ বেছে নিয়েছেন। কিন্তু তাতে সমাজের আরো বেশি ক্ষতির শঙ্কা প্রকাশ করে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেরে না ওঠা পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন থাকতেই হবে।

এজন্য নিয়ম অনুযায়ী কারো করোনা পজিটিভ আসার পর একটি নির্দিষ্ট সময় তাকে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মানতে হয়। এক্ষেত্রে পুলিশ তাদের সহযোগিতা করে থাকে। কেউ যাতে তাদের সামাজিকভাবে হেয় করতে না পারে সেজন্যও পুলিশ ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ায়। এখন ভুলভাল ঠিকানা দেওয়ার কারণে তাদের খুঁজতে অনেক সময় তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নিতে হচ্ছে।

করোনা আক্রান্তদের এ ধরনের আচরণে পুলিশের পাশাপাশি চিকিৎসকরাও বিরক্ত। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা থেকে করোনা পজিটিভদের ঠিকানাসহ দরকারী তথ্য সংগ্রহে রাখতে চান চিকিৎসকরা। কিন্তু ঠিকানা ভুল দেওয়ার কারণে ওইসব রোগী আর শনাক্ত হচ্ছে না। এদিকে, প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ভুল ঠিকানা দেওয়া লোকটিকে অনেক সময় আর খোঁজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা বলছি করোনা সংক্রমণ হলেই হাসপাতালে আসতে হবে না। তিনি বাসায় থেকে নিজের চিকিৎসা নিতে পারবেন। আমরাও তাদের সহযোগিতা করছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাসাতে এসব রোগ সেরে যায়। কিন্তু তিনি তথ্য গোপন করে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করলে তো সবার ক্ষতি।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ভুল ঠিকানা দেওয়ার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশকে হয়রান হয়ে যেতে হয়। এই থানা থেকে ওই থানায় দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশকে সব কাজ বাদ দিয়ে ওই ব্যক্তিকে বের করা প্রধান কাজ হয়ে উঠে।

আরও খবর