সীতাকুণ্ড ◑ বৃদ্ধার বয়স আনুমানিক ৭০। ঠিকতো সোজা হয়ে হাঁটতেও পারেন না। তবুও খাবার ও ওষুধের প্রয়োজনে পথে পথে ঘুরছিলেন তিনি। কেউ সাহায্য করছিলেন না তাকে। কিন্তু ঠিক তেমনি সময়ে সৃষ্টিকর্তার দূত হয়েই যেন সেখানে এসে পৌঁছান সীতাকুণ্ড সার্কেলের এডিশনাল এসপি শম্পা রানী সাহা।
]আর্ন্তজাতিক মা দিবসে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে মায়ের প্রতি যে ভালোবাসা উপচে পড়তে দেখা যায় বাস্তবে তার এমন উল্টো চিত্র দেখে গাড়ি থামান তিনি। পরম শ্রদ্ধায় তার হাত ধরে জানতে চান ‘মা’ এত কষ্ট করে হেঁটে কোথায় যাচ্ছেন? পুলিশের পোশাক পরা একজন নারীকে এভাবে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে বৃদ্ধা কোনরকম বলেন, ‘আমার ওষুধ নেই, খাবার নেই’। এ সময় হাতের প্রেসক্রিপশনটিও দেখান তিনি। ব্যস! আর বলতে হয়নি। এডিশনাল এসপি শম্পা রানী সাহা সেটি নিয়ে দ্রুত যান কাছের ফার্মেসিতে। একমাসের প্রয়োজনীয় সব ওষুধ ও নানা রকম খাবার কিনে দিলেন তাকে। এতে কৃতজ্ঞতায় বৃদ্ধাটি তাকে জড়িয়ে ধরেন।
ভাঙা ভাঙা গলায় বললেন, আমার চোখে ঠিকমতো দেখি না। চশমা লাগবে। এই কথা শুনে এডিশনাল এসপি শম্পা বলেন, চশমা তো ডাক্তার দেখিয়ে কিনে দিতে হবে। তবে সে ব্যবস্থাও করার আশ্বাস দিয়ে ফিরলেন তিনি। একই সময়ে অসহায় আরো বেশ কয়েকজনের হাতে খাবার তুলে দেন তিনি। আজ রবিবার (১০ মে) দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী নুনাছরা এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
এডিশনাল এসপির অজান্তে পেছন থেকে এসব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করেন সেখানে উপস্থিত এক যুবক। মো. আনোয়ার নামক এক প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, বৃদ্ধাটি বয়সের ভারে ন্যুজ্ব। কথাও জড়িয়ে যায়। লাঠি দিয়েও ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলেন না। বৃদ্ধাটির এ অবস্থা দেখে সেখানে হঠাৎ হাজির হন সীতাকুণ্ড সার্কেলের এডিশনাল এসপি শম্পা রানী সাহা। তাকে কাছে পেয়ে বৃদ্ধা নিজের প্রয়োজনগুলোর কথা তুলে ধরেন। সব শুনে এডিশনাল এসপি বলেন কেউ তোমার কথা না শুনলেও আমি শুনব মা। তারপর তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নেন তিনি। একই সাথে অসহায় মানুষ খুঁজে আরো অনেককে খাবার কিনে দেন। এ সময় উপস্থিত সকলেই মুগ্ধ হন। এতেই বুঝা যায় এডিশনাল এসপি শম্পা সীতাকুণ্ডে যোগ দেবার পর থেকে শুধুমাত্র পুলিশি দায়িত্ব পালন করেই ক্ষান্ত থাকেননি। মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে সবসময় অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে চেষ্টা করেছেন। একজন নারী পুলিশ হয়েও রাত দিন যেখানেই প্রয়োজন ছুটে গেছেন। তার মতো দায়িত্ববোধ সবার থাকলে সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা আরো অনেক বেড়ে যেত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এডিশনাল এসপি শম্পা রানী সাহা বলেন, সবাই মা দিবস পালন করেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খোঁজ নিয়ে দেখেন অনেক মা তার সন্তানকে চোখেও দেখতে পান না। নইলে ৭০ বয়সী একজন বৃদ্ধা ওষুধ ও খাবারের জন্য পথে পথে ঘুরবে কেন? তিনি তো ঘর থেকেই বের হবার কথা না।
তিনি বলেন, বৃদ্ধাটি হাঁটতেও পারছিলেন না। ভালোভাবে কথাও বলতে পারেন না। তবুও এই বয়সে তিনি পথে নেমেছিলেন! আমি তার এই কষ্ট দেখে সইতে পারিনি। তখন যা করা দরকার ছিলো বলে মনে করেছি শুধু তাই করেছি। কারো মুখে হাসি ফোঁটাতে পারাটা তো সৌভাগ্যের। জানি না কি করতে পেরেছি। কিন্তু তার একটা চাওয়া চশমাটা কিনে দিতে পারিনি। ডাক্তার দেখানো ছাড়া তো সেটি দেওয়া সম্ভব না। চেষ্টা করব আবারো তার সাথে দেখা করে এই মায়ের জন্য ছোট কাজটুকুও করে দিতে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-