মাহাবুবুর রহমান ◑
কক্সবাজার শহরের মাঝিরঘাট অংশ বাকঁখালী নদীর প্রস্থ ছিল প্রায় ৫০০ ফুট। কিন্তু কালের আবর্তে সেই নদী এখন ৫০ ফুটও নেই।
প্রভাবশালীদের দখল, নদীর রক্ষনাবেক্ষণের সরকারি উদ্যোগের অভাবে ভূয়া কাগজপত্র বানিয়ে নদীর জমিতে খতিয়ান তৈরি করা সহ নানা কারনে প্রাণ হারিয়ে ফেলেছে এই বাকঁখালী নদী। এই অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই এ নদী ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া হয়ে মাঝিরঘাট এলাকা নাম তৈরি হওয়ার পেছনে প্রধান ইতিহাস হচ্ছে পার্শ্ববর্তী খুরুশকুল ইউনিয়নের সাথে একমাত্র সংযোগ স্থল ছিল বাকঁখালী নদী। আর এই নদীর খেয়াঘাট পারাপারের নাম ছিল মাঝির ঘাট বা মাঝের ঘাট।
স্থানীয়দের মতে, এক সময় এ নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এই এলাকার জনবসতী এবং জীবন ধারনের উপকরণ। তখন অন্তত ৫০০ ফুট প্রস্থ ছিল এই নদী কিন্তু বর্তমানে ৫০ ফুট প্রস্থও নেই নদীর। কারণ দুপাড়েই চলছে অব্যাহত দখল। যে যেভাবে পারছে নদীর জমি দখল করে গড়ে তুলছে স্থাপনা, চিংড়ি প্রজেক্ট বা ঘরবাড়ি। আবার কেউ নদী দখল করে গড়ে তুলেছে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যেখান থেকে প্রতি দিন আয় করছে লাখ লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঝির ঘাট সেতুর আশপাশেই নদী দখল করে গড়ে উঠেছে অনেক অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদীর একপাশে আল্লাওয়ালা নামের হ্যাচারী প্রতি বছর নদীর উপর ক্রস বাধ নিয়ে মাটি ভরাট করে সেখানে গড়ে তুলেছে চিংড়ি প্রজেক্ট।
অন্যদিকে এখন পাথর উঠানামার কাজ করে আর কিছু প্রভাবশালী মহল। এছাড়া নদীর জমিতে গড়ে উঠেছে বোট মেরামতের ডক বা কারখানা; যেখানে প্রতি বোট মেরামত বা সংস্কার করে আয় করছে বিপুল টাকা। এছাড়া নদীর জমিতে চিংড়ি ঘের, ঘরবাড়ি গ্যারেজ তৈরি করে প্রতি নিয়ত আয় করছে বিপুল টাকা। একই সাথে নদীর এসব জমি দখল বেদখলে অনেক সময় প্রভাবশালীদের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে বলে জানান স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার সচেতন মহল জানান,এখন থেকে ৮/১০ বছর আগে সেখানে নদীর জোয়ারের পানিতে আমরা বোট বেধেঁছি বা শিশুরা সাতার কেটেছে সেগুলো নাকি এখন খতিয়ান ভুক্ত জমি। আসলে ভূমি অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে বেশির জমির এখন নকল কাগজ তৈরি করে ফেলেছে। আবার বন বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে প্রতি নিয়ম মাশোহারা দিয়ে আসছে তাই নদী দখল এখন সহজ হয়ে গেছে।
নদীকে পরিবেশ এবং জীবন রক্ষার অন্যতম উপকরণ হিসাবে উল্লেখ করে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, নদী হচ্ছে মানুষের প্রাণ প্রবাহ। একটি নদীতে যেই পানির স্রোত বা প্রবাহ থেকে সেটা দিয়ে লাখ লাখ মানুষের জীবন ধারন হয়। ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনের সঙ্গে মিশে থাকে এই নদী। উন্নত বিশ্বে নদীকে ব্যবহার করেই গড়ে উঠেছে পর্যটন ব্যবসা কিন্তু আমরা স্বার্থের কারনে নদীকে দখল করে ভরাট করে ফেলেছি।
এ ব্যপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার বলেন, নদীর দখলকারীদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা আমরা তৈরি করেছি। সেই তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নদীর জমি উদ্ধার করা হবে।/দৈনিক কক্সবাজার
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-